২০১৩ থেকে ২০২১, সময়ের হিসেবে ৮ বছর। অবাক করা হলেও সত্য যে, গত ৮ বছরে বাংলাদেশি কোন পেসার টেস্টে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিতে পারেননি। সর্বশেষ ২০১৩ সালের এপ্রিলে জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় টেস্টে যথাক্রমে ৬ ও ৫ উইকেট নিয়েছিলেন পেসার রবিউল ইসলাম শিবলু। হারিয়ে যাওয়া এই টাইগার পেসারের আক্ষেপ, ক্যারিয়ারে পর্যাপ্ত সুযোগ পাননি। আক্ষেপের ক্যারিয়ার ঘুচিয়ে এখন তিনি আম্পায়ার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর।
জিম্বাবুয়ে সিরিজে সেই সময়ের শিবলুর বোলিং দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তৎকালিন বাংলাদেশ দলের হেড কোচ শেন জার্গেসন। শিবলুকে নিয়মিত সুযোগ না দেওয়ায় হতাশ জার্গেসন বলেছেন, 'তাকে (শিবলু) না খেলানোটা সত্যিই লজ্জাকর। আমার যতদূর মনে পড়ে জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর সে কিছুটা ইনজুরি এবং ফিটনেস সমস্যায় ভুগছিল।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘ঘরের মাঠের কন্ডিশনের সাথে তাকে মানিয়ে নিতে পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয়নি। তার বোলিংয়ের সাথে জিম্বাবুয়ে, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের কন্ডিশন ভালো মানায়। কিন্তু বাংলাদেশের কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় তাকে দেওয়া হয়নি।’
কোচের মতো হতাশ শিবলুর কণ্ঠেও। তার বিশ্বাস পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হলে আরও ভালো করতেন। শিবলু বলেন, ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই সিরিজটা আমার সেরা সিরিজ। হারারের কন্ডিশনে আমি বল করে খুব মজা পাচ্ছিলাম।’
দীর্ঘ আট বছর পর জিম্বাবুয়ে সফরে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সফরে একটি টেস্ট ও তিন ম্যাচ করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। দীর্ঘ দিন পর জিম্বাবুয়ে সফরে যাওয়ায় আলোচনায় উঠে এসেছেন রবিউল ইসলাম শিবলু।
ওই সিরিজে ভালো করার পরও নিয়মিত দলে সুযোগ পাননি শিবলু। শেন জার্গেসনের বিদায়ের পর বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেন হাথুরুসিংহে। নতুন কোচ দলের আসার পর থেকেই খারাপ সময় শুরু শিবলুর। ফিটনেস সমস্যা, বলে গতি কমসহ নানা অজুহাতে তাকে সুযোগ দেওয়া হতো না বলে অভিযোগ শিবলুর।
গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিবলু বলেন, ‘নির্বাচকরা আমাকে বলেছিল যে, নতুন কোচ হাথুরুসিংহে আমাকে দলে নিতে আগ্রহী না। তারা আমাকে টেস্ট ফরম্যাটের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষে দেশে ফেরার পথে কোচ হাথুরুসিংহকে শিবলু একটি প্রশ্ন করছিলেন, সেই প্রশ্নের কোন সু-উত্তর দিতে পারেননি কোচ। সেই স্মৃতি স্মরণ করে শিবলু বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষ করে দেশের ফেরার সময় কোচ আমাকে বলে যে, আমার গতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে মানানসই নয়। আমি তাকে তখন জিজ্ঞেস করি কোনটা ভালো, কোনো সুইং ছাড়া ১৪০ কি.মি গতিতে বল করা নাকি সুইং-সহ নিয়মিত ১৩৩-১৩৫ কি.মি গতিতে বল করা? কোচ এর কোন সু-উত্তর আমাকে দিতে পারেনি।’
তার প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে তার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আগের সিরিজের সিরিজ সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়ার পরেও আমাকে পরের সিরিজে সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমাকে বলা হলো যে, আমার ফিটনেস সমস্যা। যদিও আমি ট্যুর ম্যাচে ১৫ ওভার বল করেছিলাম।’
টেস্ট দলে শিবলুকে না দেখে অবাক হয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়েরাও। ফতুল্লায় অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচের স্মৃতিচারণ করে শিবলু বলেন, ‘এমনকি জিম্বাবুয়ের কিছু খেলোয়াড়ও আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি কেনো টেস্ট দলে নেই। আমি তাদের কী উত্তর দিব নিজেও জানতাম না। তাদের বলি যে, কোচ আমাকে বলেছে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো ফিট নই।’
দুর্ভাগ্য হউক কিংবা ফিটনেসের সমস্যাই হউক, ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার বড় করতে ব্যর্থ হওয়া রবিউল ইসলাম শিবলু এখন স্বপ্ন দেখছেন আম্পায়ার হওয়ায়। ইতিমধ্যেই তিনি আম্পায়ারিংয়ের উপর কোচিং এবং কোর্স করেছেন।
নিজের শেষ ইচ্ছে সম্পর্কে শিবলু বলেন, ‘আমি আম্পায়ারিং সম্পর্কে আরও শিখছি। যদিও কোভিডের কারণে প্র্যাকটিকালি শুরু করতে পারেনি। মনি ভাই (এনামুল হক মনি) আমাকে এই প্রফেশনে আসার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন।’
স্পোর্টসমেইল২৪/এমআরএইচ
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]