চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম চার দিন দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। তবে পঞ্চম ও শেষ দিনে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সময় গড়ানোর সাথে সাথে সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছেন ক্যারিবীয় দুই ব্যাটসম্যান কাইল মায়ার্স এবং এনক্রুমা বোনার। অভিষেক টেস্ট ব্যাট হাতে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে দলকে অবিস্মরণীয় এক জয় উপহার দিয়েছেন কাইল মায়ার্স।
বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান কাইল মায়ার্সের অপরাজিত ২১০ রানের কাছে অসহায় ছিল বাংলাদেশের বোলাররা। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ক্যারিবীয়রা।
সিরিজের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন (শনিবার) ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের জন্য ৩৯৫ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। জবাবে দিন শেষে ৩ উইকেটে ১১০ রান করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্টটি জিততে ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৭ উইকেট। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল আর ২৮৫ রান। দুই অভিষিক্ত খেলোয়াড় এনক্রুমার বোনার ১৫ ও কাইল মায়ার্স ৩৭ রানে অপরাজিত থেকে চতুর্থ দিন শেষ করেছিলেন।
ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিন রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) শুরু থেকেই বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকেন বোনার ও মায়ার্স। উইকেট বাঁচিয়ে খেলাই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল। তবে উইকেটে সেট হওয়ার পর রানের দিকে মনোযোগী হন তারা। ফলে প্রথম সেশনে ৮৭ রান তুলে বোনার-মায়ার্স। দু’জনে অবিচ্ছিন্ন থেকে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যান।
৯১ রান নামের পাশে রেখে সেঞ্চুরির স্বপ্ন নিয়ে বিরতিতে গিয়েছিলেন মায়ার্স। বিরতির পর মোস্তাফিজের করা ৮৪তম ওভারের প্রথম বলে চার মেরে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। টেস্ট ইতিহাসে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকের ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন মায়ার্স।
মায়ার্সের সেঞ্চুরি ও বোনারের দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় সেশনেও কোন উইকেট পায়নি বাংলাদেশ। ফলে ৩ উইকেটে ২৬৬ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তখন জয় থেকে ১২৯ রান দূরে ছিল ক্যারিবীয়রা। বিরতির পর প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে স্পিনার তাইজুল ইসলামকে মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন বোনার। তবে পরের ডেলিভারিতে বোনারকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন বাংলাদেশকে সেরা ব্রেক-থ্রু এনে দেন তাইজুল। ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৪৫ বলে ৮৬ রান করে থামেন বোনার।
চতুর্থ উইকেটে ২১৬ রান যোগ করেন বোনার ও মায়ার্স। এক ম্যাচে অভিষেক খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড তালিকায় দ্বিতীয়স্থানে জায়গা করে নেন বোনার ও মায়ার্স। এ তালিকার শীর্ষে আছেন পাকিস্তানের খালিদ আবদুল্লাহ ও আব্দুল কাদির। ১৯৬৪ সালে করাচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হওয়া খালিদ-কাদির উদ্বোধনী জুটিতে ২৪৯ রান করেছিলেন।
বোনারের আউটের পর উইকেটে এসে সুবিধা করতে পারেননি জার্মেই ব্ল্যাকউড। ১১ বলে ৯ রান করে স্পিনার নাঈম হাসানের বলে বোল্ড হন তিনি। দলীয় ২৯২ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্ল্যাকউডের আউটের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন মায়ার্সই। জয়ের জন্য শেষ ২৩ ওভারে ৮৮ রানের দরকার পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
মায়ার্সের মারুমুখী ব্যাটিংয়ে অন্যপ্রান্তে শান্ত ছিলেন উইকেটরক্ষক জসুয়া ডা সিলভা। ২৬১তম বলে দেড়শ রান পূর্ণ করেন মায়ার্স। প্রায় প্রতি ওভারেই বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি আদায় করে নেন মায়ার্স। ইনিংসের ১২৪তম ওভারের শেষ বল ও নিজের ৩০৩তম বলে ১ রান নিয়ে ডাবল-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি।
পরের ওভারে সিলভাকে থামান তাইজুল। ২০ রান করেন সিলভা। ষষ্ঠ উইকেটে সিলভাকে নিয়ে ১৩১ বলে ১০০ রানের জুটি গড়েন মায়ার্স। সিলভা যখন ফিরেন তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ৩ রান। এরপর মিরাজের বলে খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন কেমার রোচও। তবে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে কোন সমস্যাই হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
৩১০ বলে ২০টি চার ও ৭টি ছক্কায় অপরাজিত ২১০ রান করেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া মায়ার্স। অন্যপ্রান্তে ১ বল খেলে কোন রান না করে অপরাজিত থাকেন নয় নম্বরে নামা রাকিম কর্নওয়াল।
বাংলাদেশের মিরাজ ১১৩ রানে ৪টি, তাইজুল ৯১ রানে ২টি ও নাঈম ১০৫ রানে ১টি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
১ম ইনিংস
বাংলাদেশ : ৪৩০
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২৫৯
২য় ইনিংস
বাংলাদেশ : ২২৩/৮ (ডি.)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩৯৫/৭ (লক্ষ্য ৩৯৫)
ফল : ৩ উইকেটে জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ম্যাচ সেরা : কাইল মায়ার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]