শেষ হলো মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্বের অধ্যায়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি নিজের নেতৃত্বের ৫০তম জয় দিয়ে অধিনায়কত্বের ইতি টেনেছেন। মাশরাফির শেষ নেতৃত্ব দেওয়া ম্যাচে শুক্রবার (৬ মার্চ) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১২৩ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
মাশরাফি নেতৃত্ব ছাড়ার পর এখন দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচনার বিষয় হলো কে হচ্ছেন টাইগারদের পরবর্তী নেতা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কার হাতে তুলে দিচ্ছেন দলের নেতৃত্ব। যদিও এপ্রিলে পাকিস্তানে শেষ দফার সফরে আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সূচিতে কোন ওয়ানডে ম্যাচ নেই।
মাশরাফির পর অধিনায়কত্বের দাবিতে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন সাকিব আল হাসান। তবে আইসিসির নিধেষাজ্ঞায় থাকায় সাকিব আপাতত ক্রিকেট থেকেই দূরে রয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে সাকিব মাঠে ফিরবেন চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর। এখনও প্রায় ৮ মাস বাকি। এছাড়া সাকিবের ফেরার আগেই ১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হবে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ফলে বিসিবি চাইলেও সাকিবের হাতে এখনই দায়িত্ব দেওয়া যাচ্ছে না।
মাশরাফি-সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ দলের যার হাতে নেতৃত্ব উঠার সবচেয়ে বেশি দাবিদার তিনি হলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বর্তমানে তিনি টাইগারদের টি-টোয়েন্টি দলে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ধারণা করা হচ্ছে টাইগাররদের এই সিনিয়র ক্রিকেটারের হাতেই উঠতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব।
বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের সদ্য সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও তার শেষ সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই ইঙ্গিত করেছেন। কারো নাম উল্লেখ না করে মাশরাফি বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো বোর্ড এমন কারো হাতে দায়িত্ব তুলে দেবে যার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশ দলে এমন অনেক ক্রিকেটার রয়েছে।
এছাড়া টাইগারদের বর্তমান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোও বেশ কিছুদিন আগে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক নিয়ে এক মন্তব্যে বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের আগে অধিনায়কত্ব করেনি এমন কাউকে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় এটা না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আমার কথা হবে। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ অধিনায়ক না থাকলে আমি খুবই অবাক হব।’
এদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড চাচ্ছে মাশরাফির পরবর্তী দীর্ঘ মেয়াদের অধিনায়ক। যিনি ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন। সেক্ষেত্রে বোর্ডের পছন্দ সাকিব আল হাসান। তবে সাকিব না ফেরা পর্যন্ত হলেও একজনের হাতে দায়িত্ব দিতে হবে। যদিও বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের সূচি বেশি ওয়ানডে ম্যাচ নেই।
বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তান সফরে একটি ওয়ানডে ম্যাচ ছাড়া মে মাসে আয়ারল্যান্ড সফরে তিন ম্যাচে ওয়ানডে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ড ছোট দল হলেও আইসিসি ওয়ানডে লিগের অংশ এ সিরিজের ফল এদিক-ওদিক হলে বাংলাদেশের বিপদের কারণ হতে পারে। ফলে আয়ারল্যান্ড সফরকেও হালকাভাবে নেওয়া যাচ্ছে না।
মাহমুদউল্লাহ পরবর্তীতে যাকে অধিনায়ক হিসেবে ভাবা যেতে তিনি হলেন টাইগারদের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তবে মুশফিক পাকিস্তান সফরে না যাওয়ায় শুধুমাত্র আয়ারল্যান্ড সফরের জন্য তার হাতে নেতৃত্ব দেওয়া নাও হতে পারে। এছাড়া মুশফিক নিজেও খন্ডকালীন সময়ের জন্য দায়িত্বগ্রহণে রাজি নাও হতে পারেন।
মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক ছাড়া নেতৃত্বে আসার বিবেচনায় রয়েছেন তামিম ইকবাল বা মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরাজ জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব না করলেও বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল এবং সর্বশেষ বিপিএলে রাজশাহী কিংসের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া টাইগার ওপনোর তামিম ইকবালের বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা রয়েছে। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ইনুজিতে এবং সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ছুটিতে থাকায় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম ইকবাল।
এদিকে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান সফরে যেতে এখনো বেশ সময় রয়েছে বিসিবির হাতে। তবে তারা শিগগিরই টাইগারদের ওয়ানডে ক্রিকেটে জন্য নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণা করবে। সেক্ষেত্রে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে- বিষয়টি চমক হিসেবেই রাখতে চাচ্ছে বোর্ড।
উল্লেখ, সাকিব আল হাসান নিষেধাজ্ঞায় থাকায় বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মমিনুল হক এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দায়িত্বভার পড়েছে মাহমুদউল্লাহ কাঁধে। তাদের দু’জনের নেতৃত্বেই দুই দফায় পাকিস্তান সফর করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে শেষ দফার সফরে টেস্টে যথারীতি মমিনুল দায়িত্বে থাকলেও ওয়ানডে দলে আসছেন নতুন দলনেতা।