ওপেনার তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে দেশেটির বিরুদ্ধে রেকর্ড ৩২২ রান সংগ্রহ করেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। রেকর্ড রান করেও উত্তেজনাপূর্ণ এ ম্যাচে মাত্র ৪ রানে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এ জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজের এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটি ১১তম সিরিজ জয় বাংলাদেশের। আর সব মিলিয়ে ২৫তম ওয়ানডে সিরিজ জয় করলো টাইগাররা।
মঙ্গলবার (৩ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩২২ রান করে বাংলাদেশ। তামিম ১৫৮ রান করেন। জবাবে ২২৫ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের পথে ছিটকে পড়ে জিম্বাবুয়ে। তবে অষ্টম উইকেটে ৪৪ বলে ৮০ রানের ঝড়ো জুটি গড়ে জিম্বাবুয়ের জয়ের পথ তৈরি করেন তিনোতেন্ডা মুতোমবদজি ও ডোনাল্ড তিরিপানো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলকে জয়ের আনন্দে মাতাতে পারেননি মুতোমবদজি ও তিরিপানো। ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩১৮ রান করে মাত্র ৪ রান দূরে থেকে ম্যাচ হারে জিম্বাবুয়ে।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডের মত এবারও টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। একাদশে দু’টি পরিবর্তন নিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে মাঠে নামে টাইগাররা। বিশ্রাম দেওয়া হয় অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও পেসার মোস্তাফিজুর রহমানকে। তাদের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান দুই পেসার আল-আমিন হোসেন ও শফিউল ইসলাম।
তামিমের সাথে ইনিংস শুরু করেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস। এ ম্যাচে আর টেস্ট মেজাজে দেখা যায়নি তামিমকে। প্রথম ৭ ওভারের মধ্যে ৬টি বাউন্ডারি মারেন তিনি। তামিমের মারমুখী মেজাজের ব্যাটিং চলাকালীন ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ওপেনার লিটন দাস রান আউট হয়ে ফিরে যান। সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে নামের পাশে ৯ রান রেখে ফিরেন লিটন।
ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। ৬ রান করে শান্তও রান আউট হন। ৬৫ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে তামিমের মারমুখী ব্যাটিংয়ে বাংলাদশের রানের চাকা ঠিকই ঘুরছিল। ১১তম ওভারের শেষ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম (৪২ বলে)।
হাফ-সেঞ্চুরিতে পা দিয়ে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করে সফল হন তামিম। লিটন-শান্তর সাথে যা পারেননি মুশফিকের সাথে সেটিই করেছেন তামিম। উইকেটের সাথে দ্রুত সেট হয়ে মারমুখী হয়ে উঠেন মুশফিকও। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৮তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মুশফিক (৪৭ বলে)। ৫০ বলে ৬টি চারে ৫৫ রান করে আউট হন মুশফিক।
ইনিংসের ৩৭তম ওভারে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক শন উইলিয়ামসের শেষ বলে ২ রান নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম (১০৬ বলে)। ২৩ ইনিংস ও ২০ মাস পর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেন ঘরোয়া আসরে ট্রিপল সেঞ্চুরি করা তামিম।
১৩২তম বলে দেড়শ রান পূর্ণ হয় তামিমের। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত দেড়শ রানে পা রাখেন তামিম। ২০০৯ সালে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ১৫৪ রান করেছিলেন তামিম। ইনিংসের ৪৬তম ওভারে জিম্বাবুয়ের পেসার চার্ল মুম্বার বলে লং-অফে মুতোমবদজিকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তামিম।
নির্ধারিত ওভার শেষে ৮ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩২২ রানে। শেষ দিকে ১৮ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ৩২ রান করেন মিথুন। জিম্বাবুয়ের মুম্বা-ডোনাল্ড তিরিপানো ২টি করে উইকেট নেন।
৩২৩ রানের টার্গেটে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি জিম্বাবুয়ের। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই জিম্বাবুয়ে শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন বাংলাদেশের পেসার শফিউল ইসলাম। রেগিস চাকাবাকে ২ রানে বিদায় নেন শফিউল। দলীয় ১৫ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ঘুড়ে দাঁড়ানোর পরিকল্পনায় ছিলেন আরেক ওপেনার তিনাসি কামুনহুকামবে ও অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলর। কিন্তু নিজেদের ভুলে প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ ওভারে বিচ্ছিন্ন হন তারা। ১১ রান করে রান আউট হন টেইলর।
টেইলরের বিদায়ে উইকেট যান নিয়মিত অধিনায়ক শন উইলিয়ামস। প্রথমবারের মত এবারের সফরে খেলতে নেমে ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। বাংলাদেশের স্পিনার মিরাজের প্রথম শিকার হন তিনি। ৬৭ রানে ৩ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।
এরপর দলকে শতরানে পৌঁছে দেওয়ার আগেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন কামুনহুকামবে। তবে ৫১ রানে বাংলাদেশের স্পিনার তাইজুলের বলে বোল্ড হন তিনি।
জিম্বাবুয়ের বড় জুটির আশা পূরণ করেন সিকান্দার রাজা ও ওয়েসলি মাধভেরে। এ জুটি ভাঙতে বেগ পেতে হয় বাংলাদেশের বোলারদের। ৫৬ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন একবার জীবন পাওয়া মাধভেরে। ৩৭তম ওভারে এ জুটিকে বিচ্ছিন্ন করেন স্পিনার তাইজুল।
মাধভেরে বিদায়ের কিছুক্ষণ পর ৪৮তম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন রাজা। অর্ধশতকের পর নিজের ইনিংসটি বড় করছিলেন রাজা। তবে মুতুম্বামিকে ব্যক্তিগত ১৯ রানে লেগ বিফোর আউট করে নিজের বোলিং কোটা শেষ করেন তাইজুল। ১০ ওভারে ৫২ রানে ৩ উইকেট নেন তাইজুল।
শেষদিকে এসে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন মুতোমবদজি ও তিরিপানো। জুটি বাধার পর প্রথম ১৯ বলে ২১ রান নেন তারা। এমন অবস্থায় ৪৫ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৪৬ রান। শেষ ৩০ বলে ৭৭ রান দরকার পড়ে দলের। এরপর আল-আমিনের ৪৬তম ওভারে ১৬, শফিউলের ৪৭তম ওভারে ২০ ও আল-আমিনের ৪৮তম ওভারে ৭ রান নিয়ে দলের জয়ের সমীকরণ ১২ বলে ৩৪ রানে নামিয়ে আনেন মুতোমবদজি ও তিরিপানো।
শফিউলের করা ৪৯তম ওভার থেকে ১৪ রান পেয়ে যান মুতোমবদজি ও তিরিপানো। মুতোমবদজির ব্যাট থেকে আসে ২টি চার। ফলে শেষ ওভারে জিততে ২০ রান দরকার পরে জিম্বাবুয়ের। শেষ ওভার করতে আক্রমণে আসেন আল-আমিন।
দ্বিতীয় বলেই মুতোমবদজিকে ৩৪ রানে থামিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তি নেওয়ার সুযোগ করেন আল-আমিন। ৫টি চারে ২১ বলে ৩৪ রান করেন মুতোমবদজি। তৃতীয় ও চতুর্থ ডেলিভারিতে দু’টি ছক্কা মারেন তিরিপানো। ফলে শেষ ২ বলে জয়ের জন্য ৬ রান দরকার পড়ে জিম্বাবুয়ের।
পঞ্চম বলে ডট ও শেষ বলে ১ রান দিয়ে বাংলাদেশের ভয় দূরে করেন আল-আমিন। ৪ রানের জয়ে সিরিজ নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। জিম্বাবুয়ে ইনিংস থেমে যায় ৮ উইকেটে ৩১৮ রানে।
বাংলাদেশের তাইজুল ৩টি ছাড়া ১টি করে উইকেট শিকার করেন মাশরাফি-শফিউল-আল আমিন-মিরাজ। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন ব্যাট হাতে ১৫৮ রান করা টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল।