জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করার পর এবার রেকর্ড রানের ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। একই সঙ্গে দীর্ঘ দিন পর মাঠে ফিরে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়লো টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
রোববার (১ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভারে ওপেনার লিটন দাসের সেঞ্চুরি, মোহাম্মদ মিঠুনের হাফ-সেঞ্চুরি ও শেষ দিকে সাইফুদ্দিনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩২১ রানের স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। যা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টাইগারদের সর্বোচ্চ দলীয় রান।
৩২২ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে টাইগারদের বোলিং তোপে ৩৯ দশমিক ১ ওভারে ১৫২ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ফলে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ১৬৯ রানের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান ব্যবধানের জয়।
বাংলাদেশ এর আগে ২০১৮ সালে জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬৩ রানের ব্যবধানে জয় পেয়েছিল। যা এতদিন সর্বোচ্চ রান ব্যবধানের জয় ছিল। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই রেকর্ড ভেঙে দিল মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল।
ব্যাট হাতে ওপেনার তামিম ইকবাল ব্যর্থ হলেও অপর ওপেনার লিটন দাস তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের ৩৪তম ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে ৯৫ বলে তুলে নেন সেঞ্চরি। তবে দুর্ভাগ্যবসত হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়তে হয়। মাঠ ছাড়ার আগে ১০৫ বলে ১২৬ করেন লিটন। তার এ ইনিংসে ১৩টি চারের মারের সঙ্গে রয়েছে ২টি ছক্কার মার।
লিটন ছাড়া ব্যাট হাতে হাফ-সেঞ্চুরি করেন মোহাম্মদ মিঠুন। লিটন ফেরার পর মাহমুদউল্লাহর সাথে জুটি বেঁধে মোহাম্মদ মিঠুন দ্রুত রান তুলতে থাকেন। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ-মিঠুন ৫৭ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়েন। ৪৮তম ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মেরে ৪০তম বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মিঠুন। ২৫তম ম্যাচে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মিঠুনের এটি পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি।
মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে স্লগ ওভারকে কাজে লাগান দীর্ঘদিন পর খেলতে নামা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের পেসার ক্রিস্টোফার এমপফের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পঞ্চম বলে তিনটি ছক্কা হাকান সাইফুদ্দিন। ফলে শেষ ওভারে ২২ রান পায় বাংলাদেশ। সাইফউদ্দিন ৩টি ছক্কায় ১৫ বলে অপরাজিত ২৮ রান করেন।
ব্যাট হাতে শেষ ওভারের টনের্ডো ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে ৩২২ রানের টার্গেট দেন সাইফুদ্দিন। ব্যাট হাতে যে মেজাজে শেষ করেছিলেন, বল হাতে নিয়ে ২২ গজে একই মেজাজই দেখান তিনি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে জিম্বাবুয়ের ওপেনার তিনাসি কামুনহুকামবের উইকেট ওপরে ফেলেন।
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেছিলেন আরেক ওপেনার অধিনায়ক চামু চিবাবা ও রেগিস চাকাবা। দু’জনকে জুটিতে ২২ রানের বেশি করতে দেননি সাইফুদ্দিন। সাইফুদ্দিনের বোলিং তোপে জিম্বাবুয়ে যখন দিশেহারা সে সময়ই স্বস্তির নিশ্বাস মাশরাফি ভক্তরা।
ইনিংসের নবম ও নিজের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে চিবাবাকে বিদায় দেন ম্যাশ। মিড-অনে চিবাবার ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পাঁচ ইনিংস পর কোন ব্যাটসম্যানকে নিজের ঝুলিতে ভড়লেন মাশরাফি। আগের ওভারে ১০ রান দিয়ে সমালোচকদের মুখকে সচল করার উপলক্ষ তৈরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু চিবাবার উইকেটে স্বস্তি ফিরলো ম্যাশের।
মাশরাফির পর টেইলরকে বোল্ড করে বাংলাদেশের জয়ের পথকে মসৃণ করেন তাইজুল। এরপর জিম্বাবুয়ের মিডল-অর্ডারে অনভিজ্ঞ তিন ব্যাটসম্যানকে বড় ইনিংস খেলতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। সর্বোচ্চ ৩৫ রান ওয়েসলি মাধভেরেকে শিকার করেন মিরাজ, সিকান্দার রাজাকে ১৮ রানে বিদায় দেন মোস্তাফিজুর রহমান এবং রিচমন্ড মুতুম্বামি ১৭ রানে রান আউট হন। ফলে ১০৬ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে ম্যাচ নিশ্চিত করে ফেলে জিম্বাবুয়ে।
শেষ পর্যন্ত ৩৯ দশমিক ১ ওভারে ১৫২ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। প্রতিপক্ষের শেষ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারের ৭শ উইকেট পূর্ণ করেন মাশরাফি। বাংলাদেশের সাইফুদ্দিন ৩টি, মাশরাফি-মিরাজ ২টি করে ও মোস্তাফিজ-তাইজুল ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছে ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি হাকানো লিটন দাস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৩২১/৬ (৫০ ওভার)
জিম্বাবুয়ে : ১৫২/১০ (৩৯.১ ওভার)
ফল : বাংলাদেশ ১৬৯ রানে জয়ী।