বৃথা গেল ভারতের মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান শ্রেয়াস আইয়ারের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। তার শত রানকে ম্লান করে ভারতের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডকে জয়ের স্বাদ দিলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরিয়ান রস টেইলর। তার অনবদ্য সেঞ্চুরিতে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৪৭ রান টপকে ভারতকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয় নিউজিল্যান্ড। সেই ক্ষতকে সাথে নিয়ে ঘুড়ে দাঁড়ানোর মিশন নিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করে কিউইরা। নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন না থাকায় হ্যামিল্টনে টস করতে নেমে প্রথমে বোলিং বেছে নেন স্বাগতিক দলের ভারপ্রাপ্ত দলপতি টম লাথাম।
দুই অভিষিক্ত পৃথ্বী শ ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল ভারতের পক্ষে ইনিংস শুরু করেন। নিয়মিত দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মার ইনজুরিতে প্রথমবারের মত ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেলেন পৃথ্বী ও আগারওয়াল। দলকে ভালো সূচনাও এনে দেন তারা। নতুন দুই ওপেনারের কাছ থেকে ৮ ওভারে ৫০ রান পায় ভারত। তবে দু’জনের কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেনি। পৃথ্বী ২০ ও আগারওয়াল ৩২ রান করে ফিরেন।
৫৪ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ভারতের হাল ধরেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুর্দান্ত খেলা আইয়ার। দেখেশুনে খেলে দলের জন্য বড় স্কোরের ভিত গড়ার চেষ্টা করেন দু’জনে। সফলও হয়েছেন তারা। তৃতীয় উইকেটে ১২১ বলে ১০২ রান যোগ করেন কোহলি ও আইয়ার।
২৪৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫৮তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নিউজিল্যান্ডের স্পিনার ইশ সোধির দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড হন কোহলি। ৬টি চারে ৬৩ বলে ৫১ রান করেন ভারত অধিনায়ক।
২৯তম ওভারে দলীয় ১৫৬ রানে কোহলির বিদায়ের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজের সেরা খেলোয়াড় লোকেশ রাহুলকে নিয়ে আবারও বড় জুটির চেষ্টা করেন আইয়ার। এক্ষেত্রেও সফল হয়েছেন তিনি। এ জুটি গড়ার পথে ৪৩তম ওভারে নিজের মুখোমুখি হওয়া ১০১তম বলে সেঞ্চুরির স্বাদ পান আইয়ার।
অভিষেকের দু’বছর পর ও ১৬তম ম্যাচে এসে সেঞ্চুরির দেখা পান এই ডান-হাতি ব্যাটসম্যান। তবে সেঞ্চুরির পরপরই থামেন তিনি। নিউজিল্যান্ড পেসার টিম সাউদির বলে আউট হবার আগে ১০৩ রান করেন আইয়ার। ১০৭ বল খেলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন আইয়ার। চতুর্থ উইকেটে আইয়ার-রাহুল ১০১ বলে ১৩৬ রান যোগ করেন। জুটিতে ৫২ বলে ৬৩ রান করেন রাহুল। ৪৯ বলে ৬৩ রান ছিলো আইয়ারের।
আইয়ার যখন ফিরেন তখন ভারতের স্কোর ২৯২ রান। বল বাকি ছিল ২৭টি। বাকি ২৭ বলে দলকে ৫৫ রান এনে দেন রাহুল ও কেদার যাদব। এতে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৪৭ রানের পাহাড় গড়ে ভারত। সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৮৮ রানে অপরাজিত থাকেন রাহুল। মারমুখী মেজাজে ৬৪ বল খেলে ৩টি চার ও ৬টি ছক্কা হাঁকান রাহুল। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ বলে অপরাজিত ২৬ রান করেন কেদার। সাউদি ৮৫ রানে ২ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ৩৪৮ রানের পাহাড় সমান টার্গেটে খেলতে নেমে উড়ন্ত সূচনা পায় নিউজিল্যান্ড। ৯৪ বলে ৮৫ রানের জুটি গড়েন কিউই দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলস। ৪১ বলে ৩২ রান করে কিউইদের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্যাভিলিয়নে ফিরেন গাপটিল। এরপর ক্রিজে গিয়ে সুবিধা করতে পারেননি অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা টম ব্লান্ডেল। ৯ রান করে ফিরেন তিনি।
তবে এক প্রান্ত আগলে দলের রান চাকা ভালোভাবেই সচল রেখেছিলেন আরেক ওপেনার হেনরি নিকোলস। তার সাথে ক্রিজে ছিলেন টেইলর। ১০ রানেই থেমে যাবার সুযোগ দিয়েছিলেন টেইলর। ভারতের স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজাকে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটি ধরতে ব্যর্থ হন ভারতের আরেক স্পিনার কুলদীপ।
জীবন পেয়ে আর থেমে থাকেননি টেইলর। নিকোলসের সাথে তাল মিলিয়ে দলের স্কোরকে সচল রেখেছেন তিনি। তবে দলীয় ১৭১ রানে রান আউট হয়ে থামেন নিকোলস। ১০ম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৮২ বলে ১১টি চারে ৭৮ রান করেন তিনি।
নিকোলস ফিরলে ৩০তম ওভারে উইকেটে আসেন অধিনায়ক লাথাম। জয়ের জন্য তখন দলের প্রয়োজন ছিল ১২৯ বলে ১৭৭ রান। পরিস্থিতির সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে রানের গতি বাড়ান টেইলর ও লাথাম। এতে লাইন-লেন্থহীন হয়ে পড়ে ভারতের বোলাররা। সেই সুযোগ দলের স্কোর ৪১ ওভারেই তিনশ অতিক্রম করান টেইলর-লাথাম। পরের ওভারে আউট হওয়ার আগে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৮ বলে ৬৯ রান করেন লাথাম। চতুর্থ উইকেটে ৮০ বলে ১৩৮ রান যোগ করেন লাথাম-টেইলর।
লাথামের বিদায়ের পর ৭৩ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২১তম সেঞ্চুরি তুলে নেন টেইলর। ততক্ষণে ম্যাচ হাতে মুঠোয় নিয়ে নেয় নিউজিল্যান্ড। ওই সময় ৪১ বলে ২৮ রান দরকার ছিল স্বাগতিকদের। এ সহজ টার্গেটকে স্পর্শ করতে গিয়ে চিন্তায় পড়েছিল নিউজিল্যান্ড। কারণ, জেমস নিশাম ৯ ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ১ রান করে ফিরলে ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন দেখছিল ভারত।
কিন্তু সেটি হতে দেননি মিচেল স্যান্টনার। আট নম্বরে নেমে ৯ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় অপরাজিত ১২ রান করে ১১ বল বাকি রেখে নিউজিল্যান্ডকে জয়ের স্বাদ দেন স্যান্টনার। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের ইতহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতলো নিউজিল্যান্ড। ২০০৭ সালে এই হ্যামিল্টনেই অস্ট্রেলিয়ার ছুড়ে দেওয়া ৩৪৭ রানের টার্গেটে ৯ উইকেটে ৩৫০ রান করেছিল কিউইরা।
৮৪ বলে ১০টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০৯ রান করে ম্যাচ সেরা হন টেইলর। এ জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল কিউইরা।