শ্বাসরুদ্ধকর সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে পাকিস্তানকে ১ উইকেটে হারালো বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। একই সঙ্গে এ জয়ে দুই ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান।
প্রথম ওয়ানডেতে ২৯ রানে জিতেছিল পাকিস্তান। এর আগে টি-২০ সিরিজে পাকিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। ফলে এবারের পাকিস্তান সফরে এটিই বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র জয়।
সোমবার (৪ নভেম্বর) লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। দলকে ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার নাহিদা খান ও জাভেরিয়া খান। ৬৫ বলে ৫৮ রানের সূচনা করেন তারা। ২৪ রান করা জাভেরিয়াকে শিকার করে পাকিস্তান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন বাংলাদেশের অধিনায়ক ও লেগ স্পিনার রুমানা আহমেদ।
এরপর অধিনায়ক বিসমাহ মারুফকে নিয়ে দলের স্কোরকে বড় করতে থাকেন আরেক ওপেনার নাহিদা খান। দু’জনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় পাকিস্তানের স্কোর শতরানের কোটা অতিক্রম করে। হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন নাহিদা। শেষ পর্যন্ত দলীয় ১০৫ রানে আউট হন নাহিদা। রুমানার দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ৮টি চারে ৭৯ বলে ৬৩ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ৪৭ রান যোগ করেন মারুফ-নাহিদা।
নাহিদার বিদায়ে উইকেটে যান চার নম্বরে নামা উমাইমা সোহাইল। তাকে ৪ রানের বেশি করতে দেননি রুমানা। নিজের তৃতীয় শিকার পূর্ণ করেন তিনি। এরপর আলিয়া রিয়াজকে নিয়ে দলের হাল ধরেন মারুফ। দু’জনে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলেই রেখেছিলেন। তাই বড় স্কোরের পথ তৈরি হচ্ছিল পাকিস্তানের। তবে পরপর দু’ওভারে দুই উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানের রানের লাগাম টেনে ধরেন বাংলাদেশের অফ-স্পিনার সালমা খাতুন।
মারুফকে ৩৪ ও ইরাম জাভেদকে ১ রানে আউট করেন সালমা। ফলে ১৫৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় পাকিস্তান। এরপর দারুণভাবে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান দলের বোলাররা। ফলে বাকি ৫ উইকেটে আর মাত্র ৫২ রান যোগ করে ২১০ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। পরের দিকে রিয়াজ ৩৬, সিদ্রা নওয়াজ অপরাজিত ১৯ ও সানা মির ১৩ রান করে আউট হন। বাংলাদেশের রুমানা ৩টি, সালমা ২টি ও পান্না ১টি উইকেট নেন।
জবাবে দলীয় ২৯ রানেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ২৯ রানের মধ্যে ২৭ রানই ছিল ওপেনার শারমিন সুলতানার। তিন নম্বরে নামা উইকেটরক্ষক নিগার সুলতানা রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। ফলে ২৯ রানেই ২ উইকেট হারাতে হয় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দলের হাল ধরেন আরেক ওপেনার মুরশিদা খাতুন ও ফারজানা হক।
উইকেটে সেট হয়ে দলের স্কোর বড় করতে থাকেন মুরশিদা ও ফারজানা। সময় গড়ানোর সাথে সাথে বড় হতে থাকে তাদের জুটি, সেই সাথে বাংলাদেশের স্কোরও। এতে দলীয় স্কোর শতরান অতিক্রমও করে। তবে দলীয় ১১১ রানে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তারা। ৬টি চারে ৬৭ বলে ৪৪ রান করে থামেন মুরশিদা। এ জুটি দলকে ৮২ রান উপহার দেন।
এরপর রুমানার সাথে আবারও বড় জুটির চেষ্টা করেন ফারজানা। এখানেও সাফল্যের মুখ দেখে বাংলাদেশ। দু’জনের ৫৭ রানের জুটিতে জয়ের পথ সহজ হয়ে যায় বাংলাদেশের। কারণ তখন জয় থেকে ৪৩ রান দূরে বাংলাদেশ। হাতে ছিল ৭ উইকেট ও ৬৯ বল। কিন্তু দলীয় ১৬৮ রানে আউট হন রুমানা। আর এরপরই যাওয়া আসার মিছিল শুরু করেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
১৬৮ থেকে ২০৫ রানে পৌঁছাতেই নবম উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ফলে ম্যাচ হারের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৬ রান যোগ করে ১ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশকে অসাধারণ এক জয় এনে দেন জাহানারা আলম ও নাহিদা আকতার।
জাহানারা ৭ ও নাহিদা ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। এছাড়া ফারজানা ৬টি চারে ৯৭ বলে ৬৭, রুমানা ৩১ ও সানজিদা ২০ রান করেন। পাকিস্তানের সৈয়দা আরব শাহ ও মারুফ ২টি করে উইকেট নেন।