পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর পর করাচিতে অনুষ্ঠিত হলো আন্তর্জাতিক ওয়ানডে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সফরকারী শ্রীলঙ্কাকে ৬৭ রানে হারিয়েছে স্বাগতিক পাকিস্তান। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এ জয় দিয়ে দীর্ঘ এক দশক পর করাচিতে হওয়া ওয়ানডেকে স্মরণীয় করে রাখলো সরফরাজের দল।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তান সফরে এ করাচিতেই শেষ ওয়ানডে খেলেছিল লঙ্কানরা। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। এরপর টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের তৃতীয় দিন লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলবহনকারী বাসে জঙ্গি হামলা হয়। এরপর থেকে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে।
অনেক দরকষাকষির পর লঙ্কান দলকে করাচিতে খেলতে রাজি করায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে লঙ্কান দলের সিনিয়র দশ খেলোয়াড় এ সফর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। তারপরও শ্রীলঙ্কার সাথে সিরিজ আয়োজন করে পাকিস্তান। সিরিজের সবগুলো ম্যাচই নির্ধারণ করা হয় করাচিতে।
২০০৯ সালের পর করাচিতে আর কোন ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই এটি করাচির প্রত্যাবর্তন ওয়ানডে। এমন প্রত্যাবর্তন ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেয় পাকিস্তান। ৮৮ বল মোকাবেলা করে দলকে ৭৩ রানের সূচনা এনে দেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার ফখর জামান ও ইমাম-উল-হক। ইমাম ৩১ রানে থামলেও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ইমাম। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৫ বলে ৫৪ রান করে থামেন তিনি।
১০৪ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর দলকে বড় জুটি এনে দেন বাবর ও হারিস সোহেল। তৃতীয় উইকেটে ১১১ রান যোগ করেন তারা। ফলে ২শ’ রানের কোটা পেরিয়ে বড় সংগ্রহের দিকে হাঁটে পাকিস্তান। হারিস ৪৮ বলে ৪০ রান করে আউট হলেও ৭৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১১তম সেঞ্চুরির দেখা পান বাবর।
সেঞ্চুরির নিজের ইনিংসকে বড় করার চেষ্টা করে বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। ১০৫ বলে ১১৫ রানে থামেন বাবর। তার ইনিংসে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিলো। এরপর অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ৮, ইমাদ ওয়াসিম ১২ ও ওয়াহাব রিয়াজ ২ রানে বিদায় নেন। তবে ইফতেখার আহমেদের ২টি করে চার-ছক্কায় ২০ বলে অনবদ্য ৩২ রানের উপর ভর করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩০৫ রান পায় পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কার লেগ-স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৬৩ রানে ২ উইকেট নেন।
৩০৬ রানের বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে পাকিস্তানের বোলারদের তোপের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কার টপ-অর্ডার। ২৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের পথ দেখে ফেলে লঙ্কানরা। পাঁচ উইকেটের মধ্যে তিনটিই নেন পাকিস্তানের বাঁ-হাতি পেসার সিনওয়ারি।
১০.১ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে বেকাদায় পড়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কাকে পরবর্তীতে ম্যাচে ফেরান শেহান জয়সুরিয়া ও দাসুন শানাকা। উইকেটে সেট হয়ে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করে সফল হন তারা। এ জুটির কল্যাণে ২শ রানের কোটা স্পর্শ করে শ্রীলঙ্কা। তবে দলীয় ২০৫ রানে এ জুটি ভাঙেন সেই সিনওয়ারি।
জয়সুরিয়া ফিরে যাওয়ার ১ বল পরই থামেন শানাকা। তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮০ বলে ৬৮ রান করেন তিনি। দলীয় ২০৫ রানে জয়সুরিয়া-শানাকার বিদায়ের পর বাকি ৩ উইকেট থেকে ৩৩ রান যোগ করতে পারে শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত ২৩৮ রানে অলআউট হয় লঙ্কানরা।
শেষদিকে ১ উইকেট নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকারের নজির গড়েন সিনওয়ারি। ৫১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা সিনওয়ারি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ৩০৫/৭, ৫০ ওভার (বাবর ১১৫, ফখর ৫৪, হাসারাঙ্গা ২/৬৩)
শ্রীলঙ্কা : ২৩৮/১০, ৪৬.৫ ওভার (জয়সুরিয়া ৯৬, শানাকা ৬৮, সিনওয়ারি ৫/৫১)।
ফল : পাকিস্তান ৬৭ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : উসমান সিনওয়ারি (পাকিস্তান)।