দশ বছর পর নিজ মাটিতে পাকিস্তান

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৮:০৮ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
দশ বছর পর নিজ মাটিতে পাকিস্তান

দীর্ঘ দশ বছর পর নিজ মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামছে পাকিস্তান। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) শুরু হবে পাকিস্তান-শ্রীলংকার মধ্যকার তিন ম্যাচের এ ওয়ানডে সিরিজ। তিনটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে করাচিতে।

২০০৯ সালের জানুয়ারিতে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল পাকিস্তান। ওই সফরে টেস্ট সিরিজে লাহোরে দ্বিতীয় ম্যাচের আগে শ্রীলঙ্কা দলবহনকারী বাসে ইঙ্গ হামলার হয়। এরপর থেকেই পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নির্বাসন ঘটে। দশ বছর পর সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচ দিয়েই নিজ মাটিতে ক্রিকেট শুরু করছে পাকিস্তান।

২০১৭ সালের অক্টোবরে অবশ্য পাকিস্তানের হোম সিরিজ হিসেবে লাহোরে তিন ম্যাচ সিরিজের ১টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছিল শ্রীলঙ্কা। এবার পাকিস্তানের মাটিতে সিমিত ওভারের পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলছে লঙ্কানরা। তবে নিরাপত্তা শঙ্কায় এবারের পাকিস্তান সফরে শ্রীলঙ্কার সিনিয়র খেলোয়াড় দলের সাথে আসেনি। তবে ২০০৯ সালের পর করাচিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ আয়োজন করতে পারাকে ঐতিহাসিক বলে অ্যাখায়িত করছে পাকিস্তান।

২০০৯ সালে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে পাকিস্তান সফর শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল লঙ্কানরা। তিন ম্যাচের প্রথম দু’টি হয়েছিল করাচিতে, শেষ ম্যাচটি হয় লাহোরে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা।

করাচিতে প্রথম টেস্ট ড্র হওয়া পর লাহোরে দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয় দু’দল। প্রথম দু’দিন মাঠে ব্যাট-বলের লড়াই করে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় দিন হোটেল থেকে স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে বের হয় শ্রীলঙ্কা দলকে বহনকারী টিম বাস। স্টেডিয়ামের কাছাকাছি লিবার্টি স্কয়ার থেকে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর মুখে সন্ত্রাসী হামলার মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কাকে বহন করা টিম বাসটি।

সন্ত্রাসী হামলায় ছয় পাকিস্তানি পুলিশ ও দুই বেসামরিক ব্যক্তিসহ ৮ জন নিহত হন। এছাড়া শ্রীলঙ্কা দলের সাত খেলোয়াড়সহ কোচিং স্টাফের বেশ কয়েকজন আহত হন। ওই হামরার পর দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টটি পরিত্যক্ত গোষণা হয়।

ওই সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে পাকিস্তানের মাটিতে বিশ্বের কোন দলই ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী দেখায়নি। তাই পাকিস্তানের হোম ভেন্যু হয়ে যায় নিরপেক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরাত।

তবে ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে নিজ দেশের এনে সিরিজ আয়োজন করে। ফলে ছয় বছর পর আবারও পাকিস্তানের মাটিতে কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। জিম্বাবুয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও দুই ম্যাচের টি-২০ সিরিজে অংশ নেয়। পাঁচটি ম্যাচই হয়েছিল লাহারে।

জিম্বাবুয়ের পর আর কোন দল পাকিস্তানের মাটিতে ওয়ানডে খেলেনি। আর ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার পর আর কোন দল পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট খেলেনি। ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়েকে এনে বিশ্বের অন্যান্য ক্রিকেট দেশের মন গলানোর চেষ্টা করে পিসিবি। কিন্তু তাদের সব চেষ্টাই বিফলে যায়।

শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডকে (এসএলসি) পাকিস্তানে আসার জন্য রাজি করায় পিসিবি। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার শর্তে রাজিও হয় এসএলসি। কিন্তু দল ঘোষণার আগেই বেকে বসেন দলের ১০জন সিনিয়র খেলোয়াড়। লাসিথ মালিঙ্গা, দিমুত করুনারত্নে, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ, দিনেশ চান্ডিমালের মত খেলোয়াড়রা জানিয়ে দেন, পাকিস্তান সফরে যেতে আগ্রহী নন তারা। ফলে জাতীয় দলের কিছু খেলোয়াড়ের সাথে ‘এ’ দল, অনূর্র্ধ্ব-২৩ দল থেকে ক্রিকেটার নিয়ে স্কোয়াড সাজায় এসএলসি।

সব শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে গেছে শ্রীলঙ্কা। দীর্ঘ দশ বছর পর সেই শ্রীলঙ্কার সাথে দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে পারবে পাকিস্তান, এতেই খইশ পিসিবি। সিরিজ শুরু হওয়া আগে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ।

তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের পর করাচিতে প্রথম দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে শুক্রবার ইতিহাস সৃষ্টি হবে। স্থানীয় সকল ভক্ত-সমর্থকদের প্রতি আমি আহবান জানাচ্ছি ইতিহাসের সাক্ষী হতে, যাতে তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলতে পারে একটি আন্তর্জাতিক সিরিজে তারা জাতীয় স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন।’

সরফরাজ আরও বলেন, ‘স্মরণীয় উৎসবে পরিণত হতে যাওয়া শুক্রবারের জন্য আমার তর সইছে না। আশা করছি আমি মাঠে নামার সময় পুরো স্টেডিয়াম আমার পাশে থাকবে। কেবল আমার জন্য গলা ফাঁটাবে তাই নয়, পুরো দলের পাশে থাকবে যে কোন খেলার প্রাণ হচ্ছে ভক্ত-সমর্থক, যে কোন দল এবং খেলার মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তারা। ভক্ত সমর্থকরাই একটা দলকে শক্তি যোগায় এবং তাদের সেরাটা বের করে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একটি দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে আমার নিজ মাঠে পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দিতে পারাটা হবে আমার ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর একটি।’

সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হওয়া বাবর আজম বলেছেন, ‘নিজ মাঠে সহ-অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ওয়ানডে হবে আমার ‘সেরা দিনগুলোর’ একটি। আমার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ভক্ত-সমর্থকদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা ও সম্মান পেয়েছি তার জন্য তাদের প্রতি আমি সঠিকভাবে শ্রদ্ধা জানাতে পারিনি। পাকিস্তান দলের সহ-অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নামার দিন শুক্রবার হবে আমার জীবনের ‘সেরা দিনগুলোর’ একটি।’

বিশ্বকাপে ব্যর্থতার কারণে পাকিস্তানের কোচের পদ থেকে বরাখাস্ত করা হয় মিকি আর্থারকে। ফলে পাকিস্তানের প্রথম কোচ ও প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পান সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক। আর প্রথম দায়িত্বও তিনি পাচ্ছেন দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে।

আবেগে আপ্লুত মিসবাহ বলেছেন, ‘আবারও পাকিস্তানের মাটিতে ক্রিকেট ফিরছে। আর দেশের হয়ে নতুন ক্যারিয়ার শুরু করতে যাচ্ছি আমি। ভাবতেই শিহরিত হয়ে উঠতে হচ্ছে আমাকে। এ সিরিজের দলের জন্য যা যা করা দরকার সবই আমি করব। আমার চেষ্টার কমতি থাকবে না।’

সিরিজের প্রথম ওয়ানডের পর ২৯ সেপ্টেম্বর এবং ২ অক্টোবর করাচিতেই অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের বাকি দু’ওয়ানডে। এরপর ৫ অক্টোবর থেকে লাহোরে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলবে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা।

পাকিস্তান দল
সরফরাজ আহমেদ (অধিনায়ক), বাবর আজম (সহ-অধিনায়ক), আবিদ আলী, ফখর জামান, হারিস সোহেল, ইফতিখার আহমেদ, ইমাদ ওয়াসিম, ইমাম উল হক, মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ হাসনাইন, মোহাম্মদ নওয়াজ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সাদাব খান, উসমান শিনওয়ারি, ওয়াহাব রিয়াজ।

শ্রীলঙ্কা দল
লাহিরু থিরিমান্নে (অধিনায়ক), দানুশকা গুনাথিলাকা, সাদিরা সামারাবিক্রমা, অভিষেক ফার্নান্দো, ওশাদা ফার্নান্দো, শেহান জয়সুরিয়া, দাসুন শানাকা, মিনোদ ভানুকা, অ্যাঞ্জেলো পেরেরা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, লক্ষণ সান্দ্কান, নুয়ান প্রদীপ, ইসুরু উদানা, কাসুন রাজিথা, লাহিরু কুমারা।



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

প্রার্থনা করে পাকিস্তান গেল শ্রীলঙ্কা

প্রার্থনা করে পাকিস্তান গেল শ্রীলঙ্কা

পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা সিরিজে ম্যাচ রেফারি দিল আইসিসি

পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা সিরিজে ম্যাচ রেফারি দিল আইসিসি

করুনারত্নে-মালিঙ্গাদের জরিমানার পরামর্শ

করুনারত্নে-মালিঙ্গাদের জরিমানার পরামর্শ

পাকিস্তানে হামলার ‘হুমকি’ পেয়েছে শ্রীলঙ্কা

পাকিস্তানে হামলার ‘হুমকি’ পেয়েছে শ্রীলঙ্কা