ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালে শনিবার মুখোমুখি হচ্ছে স্বাগতিক বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। শুরু থেকেই দাপট দেখানো টাইগাররা প্রথমবারের মত শিরোপা জয়ে মাঠে নামবে। ফাইনালে ভালো ক্রিকেট খেলে শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী শ্রীলঙ্কাও।
ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়েই এ বছর নিজেদের ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ব্যাট-বলে দাপট দেখায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। লিগ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচ বড় ব্যবধানে জিতে বোনাস পয়েন্ট নিয়ে ফাইনালের টিকিট পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তাই লিগে ফিরতি পর্বের ম্যাচগুলো নিয়মরক্ষায় পরিণত হয় বাংলাদেশের সামনে।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৮ উইকেটে এবং পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৬৩ রানের ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। এ দু’জয়েই ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় টাইগারদের। ফিরতি পর্বে জিম্বাবুয়েকে ৯১ রানে হারালেও, লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে লজ্জার হারের স্বাদ পায়। মাত্র ৮২ রানে অলআউট হয়ে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। তবে ফাইনালের আগে এমন লজ্জাজনক ব্যাটিং আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেনি বলে জানালেন দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
মাশরাফি বলেন, ‘ফাইনাল ম্যাচে জেতার জন্য আমরা সবাই উদগ্রীব হয়ে আছি। এটা সত্যি কথা। যদি হতে পারি, তবে এমন শিরোপা প্রথমবারের মতো হবে। আসলে হওয়ার আগ পর্যন্ত এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে থাকলে আমার কাছে মনে হয় বেশি চাপ এসে দাঁড়াবে। বিশেষ করে ফাইনাল ম্যাচে একটা চাপ থাকেই। যদি বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ম্যাচটি জিততাম তাও থাকতো। আমার কাছে মনে হয় গতকাল হারাতে চাপটা আরও কমে গেছে। চাপ সব সময়ই থাকে এবং জয়টা আমরা অবশ্যই চাই।’
অন্যদিকে ডাবল হার দিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে যাত্রা শুরু করে শ্রীলঙ্কা। জিম্বাবুয়ের কাছে ১২ রানে হারের পর বাংলাদেশের কাছে ১৬৩ রানের ব্যবধানে হার মানে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। তবে ফিরতি পর্বের শেষ দু’ম্যাচ জিতে ঠিকই ফাইনালে জায়গা করে নেয়। তাই দলের আত্মবিশ্বাস এখন অনেক বেশি বলে জানান শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চান্ডিমাল।
তিনি বলেন, ‘ওয়ানডের দিকে তাকালে দেখবেন আমাদের খেলোয়াড়দের ইনজুরি ছিল। সেজন্য আমাদের সঠিক কম্বিনেশনটি দাঁড় করানো সহজ ছিল না। কিন্তু সেটা কোন যুক্তি হতে পারে না। আপনি যেখানেই খেলেন না কেন পারফর্ম করতেই হবে সবাইকে। এখন নতুন কোচ পাওয়াতে আমরা কিছু নতুন কৌশল পেয়েছি। তার ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে। আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক আত্মবিশ্বাসী। আমরা ফলাফল নিয়ে ভাবছি না। কিভাবে ভালো ক্রিকেট খেলা যায় সেটাই আমাদের মূল ভাবনা।’
লিগের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারানোতেই আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বেড়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। এটি অনুমেয়। তবে ফাইনালের লড়াইয়ে বাংলাদেশকেই ফেভারিট বলছেন চান্ডিমাল, ‘ঘরের মাঠে বাংলাদেশ খুবই ভালো দল। তাদের কিছু ভালো ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রয়েছে। ফাইনালে তারাই ফেভারিট। তবে আমাদের যেটা করতে হবে ম্যাচের পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে সঠিক বাস্তবায়ন করে জিততে হবে।’
নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে দেশের মাটিতে তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম কোন শিরোপা লড়াই। এরপর ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনাল এবং ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দুভার্গ্যের কাছে মাথা নত করতে হয় তাদের। তাই তিনটি ফাইনালেই প্রতিপক্ষের কাছে হেরে রানার-আপ হয়ে সন্তুষ্ঠ থাকতে হয় বাংলাদেশকে।
আবারও ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। তাই এবার শিরোপা জিততে না পারার বন্ধ্যাত্ব ঘোচাতে নিজেদের উজার করে দেবে বাংলাদেশ, এমনটিই আশা টাইগার ভক্তদের। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি শনিবার শুরু হবে দুপুর ১২টায়।
বাংলাদেশ দল
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, মোহাম্মদ মিথুন, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, আবুল হাসান রাজু, মেহেদি হাসান মিরাজ, ইমরুল কায়েস, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও সানজামুল ইসলাম।
শ্রীলঙ্কা দল
দিনেশ চান্ডিমাল (অধিনায়ক), উপুল তারাঙ্গা, দানুশকা গুনাথিলাকা, কুসল মেন্ডিজ, ধনানঞ্জয়া ডি সিলভা, থিসারা পেরেরা, আসেলা গুনারত্নে, নিরোশান ডিকবেলা, সুরঙ্গ লাকমাল, নুয়ান প্রদীপ, দুশমন্ত চামিরা, শেহান মাদুশানাকা, আকিলা ধনঞ্জয়া, লক্ষন সান্দাকান ও বানিদু হাসারাঙ্গা।