বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার আশা নিয়ে দেশ ছাড়লেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। শেষদিকে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আট নম্বর দল হিসেবে বিশ্বকাপ শেষ করেছে। বিশ্বকাপে খেই হারালো বাংলাদেশ দল এখনো নিজেদের ফিরে পায়নি। শ্রীলঙ্কা সফরে তিন ম্যাচ সিরিজ তাই তো হোয়াইটওয়াশের স্বাদ পেল।
স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের সবগুলো ম্যাচেই চরস ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ। ওপেনার ও সিরিজের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক বিশ্বকাপের পর এ সিরিজেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রথম ম্যাচে শূন্য, দ্বিতীয় ম্যাচে ১৯ এবং সিরিজের শেষ ম্যাচে ৬ বলে ২ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন তামিম।
শুধু তামিম নন, পুরো সিরিজে মুশফিকুর-মিরাজের ব্যাট ছাড়া আর কারো ব্যাট থেকে কাঙ্ক্ষিত রানের দেখা মেলেনি। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থেকে শুরু বাকি সবাই।
সিরিজে প্রথম ম্যাচে ৯১ রানে, দ্বিতীয় ম্যাচে ৭ উইকেটের পর তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার কাছে ১২২ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এ হারের ফলে তিন ম্যাচ সিরিজের লঙ্কানদের কাছে ‘লঙ্কাওয়াশ’ এর স্বাদ গ্রহণ করেছে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
টস জিতে শ্রীলঙ্কার করা ২৯৪ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩৬ ওভারে ১৭২ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৯ রান করেন সৌম্য সরকার। আর ব্যাট হাতে ৯ নম্বরে নেমে অপরাজিত থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন তাইজুল ইসলাম। এছাড়া ব্যাট হাতে বাকি সবাই ছিল ব্যর্থতার কাতারে।
২৯৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে এবারও শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। স্কোর বোর্ডে ৪ রান উঠতেই সাজঘরে ফিরেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। কাসুন রাজিথার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তামিম। করেন মাত্র ২ রান।
তামিমের বিদায়ের পর ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার এনামুুল হক ও তিন নম্বরে নামা সৌম্য সরকার। প্রথমবারের মত এ সিরিজে খেলতে নামা এনামুল সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি। ২৪ বলে ১৪ রান করে রাজিথার দ্বিতীয় শিকার হন তিনি।
দলীয় ২৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। ব্যাটিং অর্ডারে নিচের দিকে নেমে পড়া মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে উইকেটে সেট হওয়ার চেষ্টা করেন মুশফিক। তবে তাদের পথে বাধাঁ হয়ে দাঁড়ান শানাকা। ১২তম ওভারে মুশফিককে ও ১৬তম ওভারে মিঠুনকে বিদায় দেন শানাকা। মুশফিক ১০ ও মিঠুন ৪ রান করেন।
বাংলাদেশের মিডল-অর্ডারের ভরসা মুশফিক-মিঠুনকে শিকার করেই ক্ষান্ত হননি শানাকা। ছয় নম্বরে নামা মাহমুদুউল্লাহর বিদায়ও নিশ্চিত করেন শানাকা। ৯ রানে মাহমুদুল্লাহ আউট হন। ফলে ৮৩ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ম্যাচের লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ।
সতীর্থরা ফিরে গেলেও ব্যাট হাতে লড়াই করেন সৌম্য। বিশ্বকাপে ৮ ইনিংসে ১৬৬ ও এ সিরিজের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৫ ও ১১ রান করা সৌম্য ৬১তম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। ১০ ইনিংস পর হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া সৌম্য সাব্বির রহমান ও মিরাজকে নিয়ে পরবর্তীতে লড়াই করার পরিকল্পনা করেন। তবে সেটি আর হতে দেননি পেসার লাহিরু কুমারা। সাব্বিরকে ৭ ও মিরাজকে ৮ রানে শিকার করেন তিনি। ১১৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
হাফ-সেঞ্চুরির পর দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন সৌম্য। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। আকিলা ধনঞ্জয়ার গুগলিতে বোল্ড হয়ে থেমে যান সৌম্য। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৬ বলে ৬৯ রান করেন তিনি।
সৌম্য ফিরে যাওয়ায় বাংলাদেশের হার সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তবে ৯ নম্বরে নামা তাইজুল প্রতিপক্ষের বোলারদের সামনে মারমুখী হয়ে ওঠেন। তার ব্যাটিং দৃঢ়তায় হারের ব্যবধান কমতে থাকে বাংলাদেশের।
তবে শেষ ব্যাটসম্যান রুবেল হোসেন রান আউটের ফাঁদে পড়লে ৩৬ ওভারে ১৭২ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ২৮ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকেন তাইজুল।
শ্রীলঙ্কার শানাকা ৩টি ও রাজিথা-কুমারা ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন শ্রীলঙ্কার ম্যাথুজ।