তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯১ রানের ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার (২৬ জুলাই) টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কার ৩১৪ রানের জবাবে ২২৩ রানেরই অলআউট হয়ে গেছে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ভুলে নতুনভাবে পথচলার যাত্রায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। তবে সিরিজের শুরুটা ভালো হলো না বাংলাদেশের। জয়ের আশায় মাঠে নেমে উল্টো বড় ব্যবধানে হেরে গেছে টাইগাররা।
ফিল্ডিং পাওয়ায় বাংলাদেশের বোলিং ওপেন করেন শেষ মুহূর্তে দলে সুযোগ পাওয়া ডান-হাতি পেসার শফিউল ইসলাম।দু’টি স্লিপ রেখে নিজের প্রথম ওভারে মাত্র ২ রান দেন শফিউল। নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে শ্রীলঙ্কার ওপেনার আবিস্কা ফার্নান্দোকে পরাস্ত করেন তিনি। এতে লেগ বিফোরের আবেদন করে বাংলাদেশ। আম্পায়ার সাড়া না দিলে, রিভিউ নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম। তবে রিভিউতে ফার্নান্দোকে নট আউট ঘোষণা করেন অন-ফিল্ড আম্পায়ার।
এরপর দ্রুতই বাংলাদেশের হতাশা মুছে দেন শফিউল। একই ওভারের পঞ্চম বলে ওই ফার্নান্দোকে বিদায় করেন শফিউল। প্রথম স্লিপে থাকা সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে ৭ রানে আউট হন ফার্নান্দো।
দলীয় ১০ রানে প্রথম ব্যাটসম্যান আউটের পর উইকেটে আরেক ওপেনার ও শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে সঙ্গী হন উইকেটরক্ষক পেরেরা। জুটি বেঁধে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন এ দু’ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে মারমুখী মেজাজ দেখান করুনারত্নে-পেরেরা। ১০ ওভারেই ৭৭ রান পেয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
এ জুটির কল্যাণে ১৪তম ওভারেই শতরানের কোটা স্পর্শ করে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু শতরানের কিছুক্ষণ পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান করুনারত্নে-পেরেরা। জুটিতে ভাঙ্গন ধরান বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৭ বলে ৩৬ রান করে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন করুনারত্নে। তার ইনিংসে ৪টি চারের মার ছিল।
করুনারত্নে ফিরলে উইকেটে পেরেরার সঙ্গী হন কুশল মেন্ডিস। দ্রুতই উইকেটে সেট হয়ে এ জুটি দলের রানের সচল রাখেন। ২৮তম ওভারের চতুর্থ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন পেরেরা। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তোলার পর নিজের ইনিংসকে বড় করতে পারেননি পেরেরা। সৌম্য সরকারের বলে মোস্তাফিজুর রহমানকে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১১১ রানে থামেন পেরেরা। তার ইনিংসে ১৭টি চার ও ১টি ছক্কার মার ছিল।
পেরেরার পর পরের ওভারে বিদায় ঘটে মেন্ডিসেরও। বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন মেন্ডিস। ৪টি চারে ৪৯ বলে ৪৩ রান করেন তিনি।
উপরের সারির ব্যাটসম্যানদের দেখানো পথে হাটতে থাকেন দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ও লাহিরু থিরিমান্নে। দলীয় ২৭২ রানে থিরিমান্নেকে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন মোস্তাফিজ। ৩০ বলে ২৫ রান করেন থিরিমান্নে। পরের ওভারে হার্ড-হিটার থিসারা পেরেরা আউট করে শ্রীলঙ্কার রানের লাগাম টেনে ধরার পথ তৈরি করেন শফিউল। ২ রান করেন পেরেরা।
শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩১৪ রানের বড় সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের শফিউল ৬২ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়াএমাস্তাফিজ ২টি, মিরাজ-রুবেল-সৌম্য ১টি করে উইকেট নেন।
৩১৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খেলতে নামার সময় চিন্তার ভাঁজ ছিল তামিমের কপালে। লাসিথ মালিঙ্গার প্রথম চার ডেলিভারিতে কোন রান নিতে পারেননি তামিম। তবে পঞ্চম ডেলিভারিতে তামিমকে চমকে দেন মালিঙ্গা। দুর্দান্ত এক ইনসুইং ইর্য়কারে তামিমকে বোল্ড করেন মালিঙ্গা। নিজের রোমাঞ্চের ম্যাচে শূন্য হাতে ফিরেন বিশ্বকাপে ৮ ইনিংসে ২৩৫ রান করা তামিম।
শূন্য রানে অধিনায়ককে হারানোর পর দলকে খেলায় ফেরানোর পথ খুঁজেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ মিঠুন। মালিঙ্গার সাথে বোলিং ওপেন করা নুয়ান প্রদীপকে দেখেশুনেই খেলেন সৌম্য-মিথুন। দু’জনের রান তোলার গতিও বেশ ধীর। ওভার প্রতি চারের কিছু বেশি রান রেটে ৭ ওভারে ৩০ রান পায় বাংলাদেশ।
অষ্টম ওভারের তৃতীয় বলে মিঠুনকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন শ্রীলঙ্কার প্রদীপ। রিভিউ নিয়েও কোন উপকার হয়নি।১টি চারে ২১ বলে ১০ রান করেন মিঠুন। মিঠুনকে হারিয়ে চাপ অনুভব করছিলেন আরেক ওপেনার সৌম্য। সেটি প্রকাশ পায় পরের ওভারে। মালিঙ্গার আরও একটি দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড হন সৌম্য। বিশ্বকাপের পর এখানেও নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হন সৌম্য। ২২ বলে ১টি চারে করেন ১৫ রান।
দলকে খেলায় ফেরানোর দায়িত্ব পড়ে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উপর। তবে সেটাও হয়নি। ৩ রান করে শ্রীলঙ্কার পেসার লাহিরু কুমারার শিকার হনতিনি। এ অবস্থায় কাউন্টার অ্যাটাকে যান ছয় নম্বরে ব্যাট হাতে নামা সাব্বির রহমান। ফলে ৪২ বলেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন বিশ্বকাপে ২ ইনিংসে ৩৬ রান করা সাব্বির।
হাফ-সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি সাব্বির। শ্রীলঙ্কার অফ-স্পিনার ধনঞ্জয়া ডি সিলভার শিকার হন তিনি। ৭টি চারে ৫৬ বলে ৬০ রান করেন তিনি। এরপর মুশফিকের সাথে ভালোভাবে তাল মেলাতে পারেননি লোয়ার-অর্ডারে দুই ভরসা মোসাদ্দেক হোসেন ও মিরাজ। মোসাদ্দেক রান আউটের ফাঁদে পড়ে ১২ রানে ও মিরাজ ২ রান করে ডি সিলভার দ্বিতীয় শিকার হন। এ অবস্থায় ম্যাচ থেকে জয় তুলে নেওয়ার আশা ছেড়ে দেন মুশফিক।
৩৯তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১৯৯ রানে শেষ হয় মুশফিকের ধৈর্য্যশীল ইনিংস। ৫টি চারে ৮৬ বলে ৬৭ রান করেন ইনফর্ম মুশফিক। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি।
মুশফিকের বিদায়ের ১ বল পরই সাজঘরে ফেরেন শফিউল। ৪২তম ওভারে বল হাতে আক্রমণে আসেন বিদায়ী মালিঙ্গা। ওয়ানডে ক্রিকেটে শেষ ওভার করতে আসেন তিনি। নিজের চতুর্থ ডেলিভারিতেই মোস্তাফিজকে ১৮ রানে শিকার করে বাংলাদেশকে ২২৩ রানে গুটিয়ে দেন মালিঙ্গা।
প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে ২ মেডেনে ১২ রানে ২ উইকেট নেওয়া মালিঙ্গার ম্যাচ শেষে বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৯.৪-২-৩৮-৩।এছাড়া শ্রীলঙ্কার আরেক পেসার প্রদীপ ৩টি, ডি সিলভা ২টি ও কুমারা ১টি উইকেট নেন।
ম্যাচ সেরা হয়েছে ব্যাট হাতে ১১১ রান করা কুশেল পেরেরা।