শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের আগে একমাত্র প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে দুর্দান্ত জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) কলম্বোর পি সারা ওভালে শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ১০০ বলে ৯১ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন মোহাম্মদ মিঠুন।
টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশ। ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৮২ রান করে স্বাগতিকরা। তবে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশ। ৩২ রানে ৩ উইকেট হারায় তারা। দু’পেসার রুবেল হোসেন ২টি ও তাসকিন আহমেদ ১টি উইকেট নেন।
দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান শুরুর ধাক্কাটা পরবর্তীতে সামলে ওঠে শ্রীলঙ্কা। ভানুকা রাজাপাকসে ও সেহান জয়সুরিয়ার ব্যাটিং দৃঢ়তায় শতরানের কোটা স্পর্শ করে লঙ্কানরা। চতুর্থ উইকেটে ৮২ রান যোগ করেন তারা। ৪৯ বলে ৩২ রান করে রাজাপাকসে থামলেও হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন জয়সুরিয়া।
তবে এরপর আর বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। ৫টি চারে ৭৮ বলে ৫৬ রান করেন জয়সুরিয়া। রাজাপাকসে-জয়সুরিয়ার জমে যাওয়া জুটিটি থামান বাংলাদেশের মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার। পাশাপাশি এই দু’জনকেও শিকার করেন তিনি।
১৪৬ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরেন জয়সুরিয়া। এরপর দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেন দাসুন শানাকা। সাত নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ঝড়ো গতিতে অপরাজিত ৮৬ রান করেন তিনি। তার ৬৩ বলের ইনিংসে ৬টি করে চার ও ছক্কা ছিল। তাকে শেষ দিকে সঙ্গ দিয়েছেন বানিন্দু হাসারাঙ্গা ও আমিলা আপনসো। হাসারাঙ্গা ৩০ বলে ২৮ ও আপনসো ৯ বলে অপরাজিত ১৩ রান করেন।
বাংলাদেশের পেসার রুবেল ৩১ রানে ও সরকার ২৯ রানে ২টি করে, তাসকিন-মোস্তাফিজুর রহমান-ফরহাদ রেজা ১টি করে উইকেট নেন। বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসে ৯ জন বোলারকে ব্যবহার করেন দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিম ইকবাল। অন্য চার বোলার মোসাদ্দেক হোসেন-মেহেদি হাসান মিরাজ-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ-তাইজুল ইসলাম উইকেট শূন্য ছিলেন।
২৮৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভালো সূচনা করার পথেই হাটচ্ছিলেন অধিনায়ক তামিম ও সৌম্য। ৯ ওভারে ৪৩ রান তুলে ফেলেন তারা। দশম ওভারের চতুর্থ বলে বিচ্ছিন্ন হয় এ জুটি। ২৪ বলে ১৩ রান করা সৌম্য প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরেন। ১৪তম ওভারে সাজঘরের পথ ধরতে হয় তামিমকেও। ৬টি চারে ৪৭ বলে ৩৭ রান করেন তিনি। তাই ৫৮ রানে দুই ওপেনারকে হারাতে হয় বাংলাদেশকে।
দলের হাল ধরেন তিন নম্বরে নামা মিঠুন ও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। এ জুটি দলকে খেলায় ফেরান। তৃতীয় উইকেটে ৭১ বলে ৭৩ রান যোগ করেন তারা। জুটিতে ৫০ রান অবদান ছিল মুশফিকের। তবে মারমুখী মেজাজেই ছিলেন তিনি। ৪৬ বল মোকাবেলা করে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান মুশফিক।
মুশফিক ফিরলে ক্রিজে মিঠুনের সঙ্গী হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শ্রীলঙ্কার বোলারদের বুঝেশুনে খেলে দলের স্কোর বাড়াতে থাকেন তারা। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের জয়ের পথ সহজ হতে থাকে। তবে দলীয় ২২৭ রানে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তারা। ৩৭ বলে ৩৩ রান করে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ উইকেটে ৯০ বলে ৯৬ রান দলকে উপহার দেন মিঠুন ও মাহমুদউল্লাহ।
মাহমুদউল্লাহ ফিরলেও এক প্রান্ত আগলে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন মিঠুন। কিন্তু নার্ভাস-নাইন্টিতে থেমে যান তিনি। ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০০ বলে ৯১ রান করেন মিথুন। গত পরসু চট্টগ্রামে আফগানিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৮৫ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি মিঠুন। তবে আজ মিঠুনের ব্যাটিং নৈপুণ্যে জয়ের পথ পায় বাংলাদেশ।
দলের জয় নিশ্চিত করেন সাব্বির রহমান ও মোসাদ্দেক হোসেন। ৫টি চারে ২৬ বলে সাব্বির অপরাজিত ৩১ ও মোসাদ্দেক ৩টি চারে ১০ অপরাজিত ১৫ রান করেন।
একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে আগামী ২৬ জুলাই থেকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।