ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড উভয়েই ‘প্রথম’ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামছে। রোববার (১৪ জুলাই) দ্বাদশ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল। সেখানে লড়বে স্বাগতিক ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড।
দু’দলের কেউই কখনো বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের স্বাদ নিতে পারেনি। তিনবার ফাইনালে উঠলেও শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি ইংলিশরা। আর গত আসরে প্রথমবার ফাইনালে উঠলেও রানার্স-আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। এবার ‘প্রথমবারের’ মত বিশ্বকাপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়ার সুবর্ণ সুযোগ ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড দুই দলের সামনেই।
ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত স্টেডিয়াম লর্ডসে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট-বল হাতে লড়তে নামবে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। লর্ডসে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায়।
দশটি দেশকে নিয়ে গেল ৩০ মে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা ওঠে দ্বাদশ বিশ্বকাপের। লিগ পর্বে প্রত্যকটি দল একে অপরের বিপক্ষে মুখোমুখি হয়। লিগ পর্বের মোট ৪৫টি ম্যাচ শেষে সেরা চার দল জায়গা করে নেয় সেমিফাইনালে।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সেমিফাইনালের ম্যাচ জিতে নেয় ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। প্রথম সেমিফাইনালে ভারতকে ১৮ রানে নিউজিল্যান্ড ও দ্বিতীয় সেমিতে ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে হারায় অস্ট্রেলিয়াকে। সেমির ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লড়াইয়ের টিকিট পায় ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড।
এ নিয়ে চতুর্থবারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড। ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড। তবে তিনটি ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের কাছে হেরে রানার্স-আপ হয়েছে ইংলিশরা।
১৯৯২ আসরের ২৭ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলো ইয়ান মরগানের দল। এবার যেকোন প্রকারে শিরেপার স্বাদ নিতে উদগ্রীব স্বাগতিক ইংল্যান্ড। অবশ্য অন্যতম ফেবারিট হিসেবেই টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল স্বাগতিকরা।
গত আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল ইংলিশদের। ওই বিদায়ের পর থেকে ক্রিকেট অঙ্গণে নিজেদের নতুনভাবে চেনাতে থাকে তারা। এক পর্যায়ে র্যাংকিংয়ের শীর্ষে ওঠে মরগান-রুট-স্টোকসরা।
সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারানোর পর মরগান বলেছেন, ‘এটা স্পষ্ট, গত চার বছরে আমরা কতদূর এসেছি। ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার পর যদি কেউ আমাকে বলতো চার বছর পর ফাইনালে ঠার কথা, তবে আমি তা বিশ্বাস করতাম না। কারণ ঐ আসরে যেভাবে আমরা বাদ পড়েছি, তা ছিল দুঃখজনক। তবে আমরা গেল চার বছর অনেক পরিশ্রম করেছি। সেই ফল আজ দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব দেখছে আমরা এখন সেরার মুকুট পড়া থেকে একা ধাপ দূরে।’
ফাইনালে ওঠার আনন্দ উচ্ছসিত হলেও শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ট্রফি জয়ের সুযোগ ভালোভাবে কাজে লাগাতে চান মরগান। বলেন, ‘ফাইনালে উঠতে পেরে আমি সত্যিই উচ্ছসিত। লর্ডসের ফাইনালটা আমাদের জন্য বড় একটি সুযোগ। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে এবং সেরা সাফল্য দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করতে হবে।’
এদিকে গত আসরের আগে ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭ ও ২০১১ পাঁচবার সেমিফাইনালে উঠেছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু কোন আসরেই সেমির বাঁদা টপকাতে পারেনি তারা।
বড় জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ড। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০ উইকেটের জয় পায় তারা। শুভ সূচনার পর টানা দু’জয় তুলে নেয় কিউইরা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হলেও পরের দু’ম্যাচ জিততে বেগ পেতে হয়নি নিউজিল্যান্ডের। ফলে প্রথম ছয় ম্যাচ থেকে পাঁচ জয়ের ১০ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে খুব কাছে পৌঁছে যায় তারা। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচের ফলাফলের দিকে চেয়ে থাকতে হয় কিউইদের। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান জিতলে নিউজিল্যান্ডের সমান ১১ করে পয়েন্ট হরেও রান রেটে এগিয়ে থাকার সুবাদে শেষ দল হিসেবে সেমিফাইনালে ওঠে নিউজিল্যান্ড।
সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে আন্ডারডগ হিসেবে খেলতে নেমে অসাধারণ এক জয় তুলে নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে ওঠে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা জয়ের সুযোগ তৈরি হওয়ায় দলের খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব দেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।
এদিকে গতবার না পারলেও এবার শিরোপা জিততে বদ্ধ পরিকর কিউই অধিনায়ক। বলেন, ‘আবারও আমাদের সামনে বিশ্ব মঞ্চে সেরা হবার সুযোগ এসেছে। গত আসরে আমরা সুযোগ হাতছাড়া করেছিলাম। এবার আর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। দলের সবাই শিরোপা জিততে মুখিয়ে আছে। আমি মনে করি, আমরা সেরাটা দিতে পারলে এবারের শিরোপা আমাদেরই হবে।’
ইংল্যান্ড দল
ইয়ান মরগান (অধিনায়ক), মঈন আলী, জোফরা আর্চার, জনি বেয়ারস্টো, জশ বাটলার, টম কারান, লিয়াম প্লাংকেট, লিয়াম ডসন, আদিল রশিদ, জো রুট, জেসন রয়, বেন স্টোকস, জেমস ভিন্স, ক্রিস ওকস ও মার্ক উড।
নিউজিল্যান্ড দল
কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), টম ব্লানডেল, ট্রেন্ট বোল্ট, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, লোকি ফার্গুসন, মার্টিন গাপটিল, ম্যাট হেনরি, টম লাথাম, কলিন মুনরো, জেমস নিশাম, হেনরি নিকোলস, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি, টিম সাউদি ও রস টেইলর।