১৯৯৯ থেকে ২০১৯ পুরো ২০ বছর। এ সময়ের মধ্যে গড়িয়েছে অনেক জল। পরিবর্তন হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সৃষ্টি করেছে অনেক ইতিহাস, পারফরমেন্স দিয়ে গড়েছে অনেক রেকর্ড। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ।
বিশ্ব ক্রিকেটে আজ বাংলাদেশকে সমীহ করতে হচ্ছে বিশ্ব সেরা দলগুলোকে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে পাকিস্তান ও আফগানিসবতানের বিপক্ষে অপরাজিত থাকার রেকর্ড রয়েছে টাইগারদের। এমন অবস্থায় ২০ বছর পর বিশ্বকাপে ‘ক্রিকেটের মক্কা’ খ্যাত লর্ডসে বাংলাদেশ সময় আজ (শুক্রবার) বিকেল সাড়ে ৩টায় মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান।
বিস্ময়কর হলেও ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর আর কোন আসরে মুখোমুখি হয়নি দুই দল। তবে টুর্নামেন্ট ফর্মেটের কারণেই কখনো এক গ্রুপে পড়েনি দল দল দুটি। কেবলমাত্র এবারের রাউন্ড রবীন পদ্ধতিই দুই দলকে একে অপরের পুনরায় মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
ভারতের কাছে ২৮ রানের হারে সেমিফাইনালের আশা শেষ হয়ে গেলেও বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবার চার ম্যাচে জয়ের রেকর্ড গড়তে চায় বাংলাদেশ। কেননা বিশ্বকাপের এক আসরে এর আগে তিন ম্যাচের বেশি জিততে পারেনি টাইগাররা।
দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আফগানিস্তানের পর এবার চতুর্থ দল হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় চায় বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডের কাছে নিউজিল্যান্ড ১১৯ রানে পরাজিত হওয়ার পর গাণিতিকভাবে যদিও এখনো পাকিস্তানের সামনে সেমির আশা আশা আছে। তবে বাস্তবে সেটা একেবারেই অসম্ভব।
বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেলে পাকিস্তানের পয়েন্ট হবে নিউজিল্যান্ডের সমান ১১। কিন্তু রান রেটে নিউজিল্যান্ড অনেক বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। যেটা ডিঙ্গিয়ে যাওয়াটা পাকিস্তানের জন্য একদমই অসম্ভব। বাংলাদেশের বিপক্ষে এত বড় জয় পাওয়াটা কেবলমাত্র মিরাকল কিছু ঘটলেই পাকিস্তানের জন্য সম্ভব। বাংলাদেশকে ৩১৬ রানের মিরাকল ব্যবধানে হারাতে হবে পাকিস্তানকে।
এটা কেবল স্বপ্নেই সম্ভব, বাস্তবে নয়। এছাড়া দুই দলের শেষ পাঁচ দেখার ফল বিবেচনায় ম্যাচ জয়ে বাংলাদেশ স্পষ্টতই ফেবারিট।
২০১৫ সালে নিজ মাঠে ঐতিহাসিক ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করাসহ পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ জয়টি ছিল গত বছরের এশিয়া কাপে।
তবে ২০১৫ সালের আগে দুই দলের লড়াই ছিল একতরফা। ১৯৮৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত পাকিস্তান জিতেছে ৩১ ম্যাচ এবং বাংলাদেশের একমাত্র জয়টি ছিল ১৯৯৯ বিশ্বকাপে। ২০১৫ সালে পাকিস্তানকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার আগে পাকিস্তানের কাছে টানা ২৫ ম্যাচ হেরেছে টাইগাররা। যা টেস্ট খেলুরে কোন নির্দিস্ট দলের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি পরাজয়। কিন্তু এ পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙার পর বাংলাদেশ আর কখনোই পাকিস্তানের কাছে হারেনি।
১৯৮৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩৬ ম্যাচে পাকিস্তানের জয় ৩১, বাংলাদেশের ৫। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ড অনুযায়ী বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তান বর্তমানে ভাল ফর্মে থাকায় এবার কাজটা কঠিন হতে পারে টাইগারদের জন্য। অবশ্য বিশ্বকাপে মধ্যমানের পাস্তিানের তুলনায় বাংলাদেশ দলের পারফরমেন্স ভালো। যে কারণেই জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করতে আশা যোগাচ্ছে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশ দলের কোচ স্টিভ রোডস বলেছেন, ‘আমি সত্যিই পাকিস্তানের বিপক্ষে শুক্রবারের ম্যাচটির অপেক্ষায় আছি। আমি মনে করি এশিয়া কাপে আমরা তাদের হারিয়েছি এবং তারা সেটার (২০১৮ এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে ৩৭ রানে পরাজিত করে বাংলাদেশ) প্রতিশোধ নিতে চাইবে। এ বছর কিছু ম্যাচে আমরা প্রমাণ করেছি যে, আমাদের হারানোটা পাকিস্তানের জন্য কঠিন।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৬ রানে পরাজিত হওয়ার পর বাংলাদেশ দল চার ম্যাচে হারলেও সব ম্যাচেই লড়াই করেছে। রোডস বলেন, ‘তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমরা পাকিস্তানকে হারাতে চাই। তাদেরকে হারিয়ে পয়েন্ট পেতে আমরা সব কিছুই করব।’
কোচ রোডসের সঙ্গে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুুজাও জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করতে চান।
তিনি বলেন, ‘টুর্নামেন্টে আমরা আমাদের সেরা খেলাটা খেলেছি এবং সমর্থকরাও আমাদের দারুণভাবে উৎসাহ দিয়েছে। আশা করছি জয় দিয়ে, ভালো অবস্থায় আমরা টুর্নামেন্ট শেষ করব।’