২২৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪৫ ওভার শেষে ৬ উইকেটে ১৮২ রান তুলে পাকিস্তান। হাতে ৪ উইকেট নিয়ে ৩০ বলে ৪৬ রান প্রয়োজন পড়ে পাকিস্তানের। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ৪৬তম ওভারে আক্রমণে এসে ১৮ রান দিয়ে পাকিস্তানকে জয়ের পথ দেখান আফগানিস্তানের অধিনায়ক ডান-হাতি পেসার গুলবাদিন নাইব।
দলের স্পিনাররা ভালো বোলিং করার পরও এবং তাদের ওভার থাকার পরও বল হাতে নিয়ে সবাইকে চমকে দেন নাইব। আর তার দেয়া ঐ ওভারের ১৮ রানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে আফগানিস্তান। শেষ পর্যন্ত ২ বল বাকি রেখেই ৩ উইকেটে ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে খেলার দৌঁড়ে শক্তভাবেই থাকলো পাকিস্তান। ৮ খেলায় ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে উঠলো পাকিস্তান। সমানসংখ্যক ম্যাচে ইংল্যান্ড ৮ নিয়ে পঞ্চম ও ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থানে নেমে গেল বাংলাদেশ।
শনিবার (২৯ জুন) দিনের প্রথম ম্যাচে লিডসে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় আফগানিস্তান। ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেন ব্যাট হাতে নামা আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমত শাহ ও অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব। প্রথম ২৭ বল থেকে সমান ২৭ রান তুলে ফেলেন তারা। তবে বিপত্তি ঘটে ২৮ ও ২৯তম বলে, অর্থাৎ পঞ্চম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম ডেলিভারিতে। নিজের প্রথম ওভার করতে এসে ঐ দুই ডেলিভারিতে পরপর দু’টি উইকেট তুলে নেন পাকিস্তানের বাঁ-হাতি পেসার শাহিন আফ্রিদি।
নাইব ১৫ ও তিন নম্বরে নামা হাসমতউল্লাহ শাহিদি ডাক মারলে ২৭ রানে দুই উইকেট হারায় আফগানিস্তান। এরপর ৩০ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কাটা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন রহমত ও চার নম্বরে নামা উইকেটরক্ষক ইকরাম আলি খিল। সামাল দেয়ার কাজটা ভালোই করছিলেন তারা। তবে তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান পাকিস্তানের স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম। ৫টি চারে ৪৩ বলে ৩৫ রান করা রহমতকে আউট করেন ইমাদ। তাই ৫৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় আফগানরা।
তবে আফগানিস্তানের আশার আলো হয়ে ছিলেন জাদরান। সাথে পেয়েছিলেন আট নম্বরে নামা সামিউল্লাহ শিনওয়ারিকে। বড় জুটির গড়ার চেষ্টা করেন জাদরান-শিনওয়ারি। তাতে আফগানিস্তানের স্কোর ২শ অতিক্রম করে। তবে দলীয় ২০২ রানে এই জুটিকে থামিয়ে দেন আফ্রিদি। ৬টি চারে ৫৪ বলে ৪২ রান করা জাদরানকে বোল্ড করেন আফ্রিদি। শিনওয়ারির সাথে সপ্তম উইকেটে ৩৫ রান দলকে উপহার দেন জাদরান।
৪৫তম ওভারে ২০২ রানে সপ্তম উইকেট হারানোর পর আফগানিস্তানের সম্মানজনক স্কোরের পথ কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু শেষ দিকে শিনওয়ারির ৩২ বলে অপরাজিত ১৯ রানের কল্যাণে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৭ রানের সংগ্রহ পায় আফগানিস্তান। পাকিস্তানের আফ্রিদি ১০ ওভারে ৪৭ রানে ৪ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২২৮ রানের সহজ টার্গেটে খেলতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই উইকেট হারায় পাকিস্তান। ২ বল মোকাবেলা করে শূন্য রানে মুজির উর রহমানের শিকার হয়ে ফিরেন ওপেনার ফখর জামান। এরপর শুরুর ধাক্কা ভুলিয়ে দেন আরেক ওপেনার ইমাম উল হক ও ইনফর্ম বাবর আজম। ৯৪ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন তারা। এ জুটি ভেঙে আফগানিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী।
ICC World Cup 2019 point table after 37 matches #CWC19 pic.twitter.com/zS6oYiKMhV
— Sportsmail24.com (@sportsmail24) June 30, 2019
৩৬ রান করা ইমামকে শিকার করেন তিনি। উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া বাবরকেও নিজেদের শিকার বানান নবী। ৫১ বলে ৪৫ রান করেন বাবর। ৮১ রানে পাকিস্তানের ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরার পথ পায় আফগানিস্তান। চতুর্থ উইকেটে ৪০ রানের জুটি গড়ে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ নেন মোহাম্মদ হাফিজ ও হারিস সোহেল। তবে এ দু’জনকে বড় ইনিংস খেলতে দেননি আফগানিস্তানের দুই স্পিনার মুজিব ও রশিদ। হাফিজকে ১৯ রানে মুজিব ও সোহেলকে ২৭ রানে থামান রশিদ।
দলীয় ১৪২ রানের মধ্যে হাফিজ ও সোহেলকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। এ অবস্থায় চাপ আরও বাড়ে পাকিস্তানের। দলীয় ১৫৬ রানে পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ রান আউটের ফাঁদে পড়লে। ১৮ রান করে আউট হন সরফরাজ।
সরফরাজ যখন ফিরেন তখন পাকিস্তানের জয়ের সমীকরণ ছিল ৬৬ বলে ৭২ রান। হাতে উইকেট ছিল ৪টি। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের লোয়ার-অর্ডারকে চেপে ধরে আফগানিস্তানের তিন স্পিনার মুজিব-রশিদ ও সিনওয়ারি। তাতে শেষ ৩০ বলে ৪৬ রান দরকার পড়ে পাকিস্তানের। কিন্তু ৪৬তম ওভারে আফগানিস্তানের অধিনায়ক নাইবের ৬ বল থেকে ১৮ রান নিয়ে দারুনভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় পাকিস্তান।
ওই ওভার শেষে পাকিস্তানের দরকার পড়ে ২৪ বলে ২৮ রান। ৪৭তম ওভারে শাদাব খান রান আউট হলে আবারও ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন দেখে আফগানিস্তান। ১৭ বলে ১১ রান করেন শাদাব। শেষ তিন ওভারে ১৮, ২ ওভারে ১২ ও শেষ ওভারে ৬ রান প্রয়োজন পড়ে পাকিস্তানের।
দলের এ প্রয়োজনটুকু মিটিয়ে ফেলেন ম্যাচ ইমাদ ও ওয়াহাব রিয়াজ। তখনও ২ বল বাকি ছিল। ইমাদ ৫টি চারে ৫৪ বলে অপরাজিত ৪৯ ও ওয়াহাব ১টি করে চার-ছক্কায় ৯ বলে অপরাজিত ১৫ রান করেন। আফগানিস্তানের মুজিব-নবী ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন পাকিস্তানের ইমাদ।
এদিকে এ জয়ে সেমিফাইনালে খেলার দৌঁড়ে শক্তভাবেই টিকে থাকলো পাকিস্তান। ৮ খেলায় ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে উঠলো তারা। অন্যদিকে সমানসংখ্যক ম্যাচে ইংল্যান্ড ৮ নিয়ে পঞ্চম এবং ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থানে নেমে গেল বাংলাদেশ।