বিশ্বকাপে লিগ পর্বে বার্মিংহামে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে ২ জুলাই ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সেমিতে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশের এ ম্যাচ জিততেই হবে। তবে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ে আশাবাদী বাংলাদেশের বাঁ-হাতি ওপেনার সৌম্য সরকার।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে সাংবাদিকদের সৌম্য বলেন, ‘ভারত শক্তিশালী দল। তাদের বিপক্ষে জিততে হলে তিন বিভাগেই আমাদের ভালো খেলতে হবে। তিন বিভাগে ভালো করতে পারলে অবশ্যই জয় সম্ভব।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল চোখ জুড়ানো। শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা করে বাংলাদেশ। কিন্তু পরের তিন ম্যাচ থেকে জয় তুলে নিতে পারেনি টাইগাররা। নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডের কাছে হারলেও শ্রীলঙ্কার সাথে বৃষ্টির কাএণ পয়েন্ট ভাগাভাগি করে টাইগাররা। তবে টনটনে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে জয়ের স্বাদ পায় মাশরাফিরা।
অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের পর বাংলাদেশের সেমিফাইনালের পথ কঠিন হয়ে যায়। তবে ২৪ জুন সাউদাম্পপটনে সাকিবের অলরাউনন্ডার নৈপুণ্যে আবারও জয়ের স্বাদ নিয়ে সেমির দৌঁড়ে ফিরে আসে বাংলাদেশ। ৭ খেলায় ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চমস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
সেমিফাইনালে খেলতে হলে শেষ দুই ম্যাচে ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে হবে বাংলাদেশকে। সেই সাথে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার হারের প্রত্যাশা করতে হবে। তবে বাংলাদেশের চিন্তায় এখন শুধুই ‘ভারত’। কারণ বাংলাদেশের পরের ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশের ওপেনার সৌম্য। নিজের সামর্থ্যের কথা চিন্তা করে খেলতে নামলে জয় সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বলেন, ‘ভারত এগিয়ে আছে, এভাবে যদি চিন্তা করে নামি তাহলে আমরা আগে থেকেই পিছিয়ে যাব। নামতে হবে এভাবে, আমরা জেতার জন্য নামছি এবং আমরাই রেসে টিকে আছি। আমরা একটি বড় টুর্নামেন্ট খেলতে আসছি। এখানে কাউকে যদি আলাদাভাবে দেখি তবে আমরা প্রথমেই পিছিয়ে যাব। এটা চিন্তা না করে আমরা যেভাবে ক্রিকেট খেলছি সেভাবে যদি খেলতে পারি তিন ফরম্যাটেই। তাহলে তাদের বিপক্ষে জেতা সম্ভব এবং জিতব।’
ভারতের বিপক্ষে তিন বিভাগেই উজ্জ্বল পারফরমেন্স চান সৌম্য। বলেন, ‘এটা অনেক বড় টুর্নামেন্ট। এমন টুর্নামেন্টে আপনি যদি নাম ধরে খেলতে যান তাহলে অবশ্যই প্রথমেই ব্যাকফুটে থাকবেন। এই চিন্তা না করে তাদের সাথে পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে হবে। সবকিছুরই একটা পরিকল্পনা থাকে। আমরা কোথায় দুর্বল এটা পরিকল্পনা করেই নামতে হবে। আমরা ওই দিন যদি সবকিছু ভালোভাবে করতে পারি এবং আমাদের তিন ফরম্যাটে ভালো করতে পারি, আমরা অবশ্যই জিতব।’
বাংলাদেশের সাথে সেমিফাইনালের দৌড়ে আছে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে ভারতের পর বাংলাদেশের ম্যাচ রয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তানের পরের ম্যাচ আফগানিস্তানের বিপক্ষে। তুলনামূলক কম শক্তির দল আফগানিস্তান।
এ বিষয়ে সৌম্য বলেন, ‘এটা তো আমরা পরিবর্তন করতে পারব না। আমাদের দু’টি ম্যাচ আছে। এই দুটি ম্যাচ যদি আমরা জিততে পারি তাহলে অবশ্যই রেসে থাকতে পারব। আমাদের দিকটা আমরা ঠিক রাখতে পারলে হয়তো ভালো।’
ভারতের বোলিং নিয়ে বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কি-না বাংলাদেশের? -এ ব্যাপারে সৌম্য বলেন, ‘ভারতীয় দলের বিশ্বের এক নম্বর বোলার আছে। তাদের স্পিনার যারা আছে তারা অনেক কোয়ালিটি সম্পন্ন। তাদের ওইভাবেই খেলতে হবে। কাকে পিক করতে হবে এবং কোনটা কার দিন সেটা ঠিক করতে হবে। সব দিন সবার ভালো যায় না। এই পিক করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কাকে আজ পিক করছি আর কাকে সার্ভাইভ করছি এটাই সবচেয়ে বড়। ওই দিনটাতে দেখতে হবে আজকে কাকে পিক করলে আমরা ভালোভাবে খেলতে পারব। এটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার।’
ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না সৌম্য। তাই নিজের পারফরমেন্সে খুশি নন সৌম্য। বলেন, ‘রান রেটটা একটা বিষয়। যেখানে যেভাবে আউট হয়েছি বা যত রান করে আউট হয়েছি এগুলো বড় হলে তাহলে এমন প্রশ্ন আসতো না। আমি যেহেতু খুশি না বাকি কারোরও খুশি হওয়ার কথা না। এখনও বাকি দু’টি ইনিংস আছে। এখানে যদি ভালো করতে পারি অবশ্যই ভালো হবে।’
ফর্মে না থাকার কারণে আগের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ নম্বরে নামতে হয়েছে সৌম্যকে। কিন্তু সেখানেও রান পাননি তিনি। অবশ্য ঐ ম্যাচে আম্পায়ারের ভুলে লেগ বিফোর হন তিনি।
পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং সর্ম্পকে সৌম্য বলেন, ‘এটা টিম গেম, দল যেখানে চায় সেখানেই খেলার জন্য চেষ্টা করি। আমাকে ওই খেলার জন্য ওই পজিশনে প্রয়োজন মনে করেছেন তারা। তাই আমাকে সেখানে খেলানো হয়েছে। তাতে আমার কোনো সমস্যা ছিল না। সফল হলে বা ভালো করলে বিষয়টা চোখে পড়তো না। তাহলে মনে হতো গ্যাম্বলিং করে দলের জন্য ভালো হয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার কোনো সমস্যা ছিল না।’
সাকিবের ধারাবাহিক পারফরমেন্সের সাথে দলের অন্যরা ভালো করলে সাফল্য আসবে বলে মনে করেন সৌম্য, ‘একটা টুর্নামেন্টে একজন ভালো খেলে, তার ভালো সময় যায়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার সে কতটা কন্টিনিউ করছে। ও যতটা কন্টিনিউ করছে তার সঙ্গে দলের সবাই ভালো করলে দলের একটা ভালো ফলাফল আসে।’
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে সাতদিন সময় পেয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে দলকে চারদিনের ছুটি দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। অর্থাৎ এ চারদিন কোন অনুশীলন হবে না। তাই সবাই নিজের মত করে সময়টা উপভোগ করছেন।
এ সময়টায় বিশ্রাম নাকি অনুশীলন, কী করা দরকার -এমন প্রশ্নের উত্তরে সৌম্য বলেন, ‘ব্যাটিং এমন একটা বিষয়, যত কাজ করবো ততো ভালো হবে। যখনই সুযোগ পাই স্কিলের সাথে সাথে ফিটনেস বা স্কিলের ছোটো ছোটো ড্রিলগুলো করার চেষ্টা করি। এটা অনেক বড় সফর। সুযোগ থাকলে অবশ্যই করতাম। যেহেতু বড় সফর। বিশ্রামেরও একটা প্রয়োজন থাকে। যারা ভালো টাচে আছে, তাদের কাছে মনে হচ্ছে বিশ্রামটা ঠিক আছে। অনেকেই মনে করছে এ সময়টা অনুশীলন করলে আরও ভালো হতো।’