দ্বাদশ বিশ্বকাপের লিগ পর্ব থেকেই বিদায় নিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টুর্নামেন্টের ৩৪তম ও নিজেদের সপ্তম ম্যাচে ভারতের কাছে ১২৫ রানে ব্যবধানে হেরেছে ক্যারিবীয়রা।
ভারতের কাছে এ হারে লিগ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিতের পাশাপাশি ৭ খেলায় ৩ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টমস্থানে থাকলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর এ জয়ে ৬ খেলায় ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে ওঠে সেমিফাইনালের দোড়গোড়ায় পৌঁছে গেল কোহলির দল।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) বিশ্বকাপের ৩৪তম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৬৮ রান করেছে ভারত। কোহলি ৭২ রানে আউট হলেও ও ধোনি ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন।
ম্যানচেষ্টারে এ ম্যাচে ভালো শুরু করতে পারেনি ভারত। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪০ রানের ইনিংসের পর আফগানিস্তানের সাথে মাত্র ১ রান করেন ওপেনার রোহিত শর্মা। ১৮ রানে থেমে যান রোহিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার কেমার রোচের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১টি করে চার-ছক্কায় ২৩ বলে ছোট ইনিংসটি খেলেন তিনি।
এরপর আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুলের সাথে উইকেটে যোগ দেন অধিনায়ক কোহলি। দেখেশুনে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের বিপক্ষে রান আদায় করে নিচ্ছিলেন তারা। এ জুটির কল্যাণে শতরানের খুব কাছে পৌঁছে যায় ভারত। তবে দলীয় স্কোর শতরান থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে বিচ্ছিন্ন হন রাহুল-কোহলি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের বলে বোল্ড হয়ে ব্যক্তিগত ৪৮ রানে থামেন রাহুল। তার ৬৪ বলের ইনিংসে ৬টি চার ছিল। কোহলির সাথে ৬৯ রান যোগ করেন রাহুল।
রাহুল ব্যর্থ হলেও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৩তম ও এবারের আসরে টানা চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন কোহলি। কোহলির হাফ-সেঞ্চুরির মাঝেই দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান বিজয় শঙ্কর ও কেদার যাদব দ্রুতই প্যাভিলিয়নে ফিরেন। বিজয় ১৪ ও কেদার ৭ রান করে ফিরেন। দু’জনই শিকার হয়েছেন রোচের। এরপর রোহতিকেও বিদায় দিয়েছিলেন তিনি।
১৪০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ধোনিকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন কোহলি। কিন্তু এতেও খুব বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। এ জুটিকে দলীয় ১৮০ রানে থামিয়ে দেন হোল্ডার। ৮২ বলে ৮টি চারে ৭২ রান করা কোহলিকে শিকার বানান হোল্ডার। তবে এ ইনিংস খেলার পথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৪১৭তম ইনিংসে ২০ হাজার পূর্ণ করেন কোহলি।
৩৮ দশমিক ২ ওভারে কোহলির বিদায়ের পর ভারতের বড় সংগ্রহের আশা শেষ হয়ে যায়। তবে সপ্তম উইকেটে জুটি বেধে ভারতকে লড়াই করার পুঁজি এনে দেওয়ার লড়াই শুরু করেন ধোনি ও হার্ডিক পান্ডিয়া। শুরুতে সর্তক থাকলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে মারমুখী হতে থাকেন পান্ডিয়া।
শেলডন কটরেলের শিকার হওয়ার আগে ৩৮ বলে ৫টি চারে ৪৬ রানে মারমুখী ইনিংস খেলেন পান্ডিয়া। ৪৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে পান্ডিয়া ও পঞ্চম বলে মোহাম্মদ সামিকে তুলে নেন কটরেল। ফলে ৪৯তম ওভার শেষে ভারতের স্কোর ছিল ৭ উইকেটে ২৫২ রান। তবে শেষ ওভারে জ্বলে ওঠেন ধোনি। নিজে স্ট্রাইক নিয়ে পেসার ওশান থমাসের শেষ ওভারে ২টি ছক্কা ও ১ চারে ১৬ রান নেন ধোনি। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৬৮ রানের সংগ্রহ পায় ভারত।
শেষ ওভারের মারমুখী ব্যাটিংয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৭২তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান ধোনি। শেষ পর্যন্ত ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬১ বলে অপরাজিত ৫৬ রান করেন ধোনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোচ ৩৬ রানে ৩টি ও কটরেল-হোল্ডার ২টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২৬৯ রানের টার্গেট পেয়ে ব্যাট হাতে নেমে শুরু থেকেই সর্তকভাবে খেলে ক্যারিবীয়রা। প্রথম ২৮ বলে মাত্র ১০ রান তোলে তারা। তবে ২৯তম বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে আঘাত হানেন আগের ম্যাচে হ্যাটট্টিক করা ভারতের পেসার মোহাম্মদ সামি। সেঞ্চুরির করার পণ করে নামা ক্রিস গেইলকে ৬ রানে থামিয়ে দেন সামি।
পঞ্চম ওভারের পর সপ্তম ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে আবারও আঘাত হানেন সামি। এবার তিনি শিকার করেন তিন নম্বরে নেমে ৫ রান করা শাই হোপকে। ফলে ১৬ রানে ২ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
শুরুর ধাক্কা সামাল দেন আরেক ওপেনার সুনিল অ্যামব্রিস ও নিকোলাস পুরান। শুরুতে সর্তক থাকলেও দ্রুত উইকেটের মানিয়ে নিয়ে দ্রুত রান তোলার কাজে মনোযোগী হন তারা। এতে জুটিতে অর্ধশতকও পূর্ণ হয়। এরপর এ জুটিতে বিচ্ছিন্ন করে নেন ভারতের মিডিয়াম পেসার পান্ডিয়া। ৪০ বলে ৩১ রান করা অ্যামব্রিস আউট হন পান্ডিয়ার বলে।
দলীয় ৭১ রানে অ্যামব্রিসকে তুলে নেওয়ার পরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরে ভারতীয় বোলাররা। ফলে নিয়মিত বিরতি দিয়ে উইকেট হারাতে থাকে ক্যারিবিয়রা। ৭১ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪৩ রানেই গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়রা। অর্থাৎ শেষ ৭ উইকেট হারায় ৭২ রানে। ৩৪ দশমিক ২ ওভার ব্যাট করে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতন হওয়া বাকি সাত উইকেটের মধ্যে সামি-জসপ্রিত বুমরাহ-যুজবেন্দ্রা চাহাল ২টি করে ও কুলদীপ যাদব ১টি উইকেট নেন। সামি ১৬ রানে ৪ উইকেট নেন। তবে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভারতের অধিনায়ক কোহলি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ২৬৮/৭, ৫০ ওভার (কোহলি ৭২, ধোনি ৫৬, রাহুল ৪৮, পান্ডিয়া ৪৬, রোচ ৩/৩৬)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৪৩/১০, ৩৪.২ ওভার (অ্যামব্রিস ৩১, পুরান ২৮, হেটমায়ার ১৮, সামি ৪/১৬)
ফল : ভারত ১২৫ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা : বিরাট কোহলি (ভারত)।