জিতলেই অস্ট্রেলিয়ার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপে সেমিফািইনাল নিশ্চিত হতো নিউজিল্যান্ডের। তবে তা আর হলো না, উল্টো পাকিস্তানের কাছে হেরে গিয়ে সেমিতে পা রাখার অপেক্ষা বাড়ালো তারা। অন্যদিকে বাংলাদেশের সমান পয়েন্ট অর্জন করে সেমিতে খেলার পথ বাঁচিয়ে রাখলো পাকিস্তান।
বুধবার (২৬ জুন) বিশ্বকাপের ৩৩তম ম্যাচে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে মুখোমুখি হয় টুর্নামেন্টে অপরাজিত থাকা নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের জন্য এ ম্যাচটি ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। কারণ, হারলেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়তে হতো। অন্যদিকে জয় পেলেই সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত হতো নিউজিল্যান্ডের।
বৃষ্টির কারণে আউট ফিল্ড ভেজা থাকায় ম্যাচটি শুরু হয় এক ঘণ্টা পর। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে পাকিস্তানকে ফিল্ডিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় নিউজিল্যান্ড।
ব্যাট হাতে নেমেই পাকিস্তানের বোলিং তোপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তানের দুই পেসার মোহাম্মদ আমির শাহিন শাহ আফ্রিদির বোলিং তোপে পড়ে নিউজিল্যান্ডের টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় ওভারে প্রথম বলেই পাকিস্তানকে উইকেট শিকারের আনন্দে মাতিয়ে তুলেন বাঁ-হাতি পেসার মোহাম্মদ আমির। ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে ৫ রানে থামান তিনি।
নিউজিল্যান্ডের আরেক ওপেনার কলিন মুনরোকে ১২ রানে ফেরান আফ্রিদি। পরের ওভারেও উইকেট শিকারেও মেতে উঠেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান ৩ রান করা রস টেইলরকে নিজেদের দ্বিতীয় শিকার বানান তিনি। ফলে আফ্রিদির তোপে ৩৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড।
মিডল-অর্ডারের আরেক ব্যাটসম্যানকে টম লাথামকে নিজের তৃতীয় শিকার বানান আফ্রিদি। ১ রান করেন লাথাম। দলীয় ৪৬ রানে লাথামের আউটের পর পরিস্থিতি সামলে উঠার চেষ্টা করেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও জেমস নিশাম।
তবে এক প্রান্ত দিয়ে দলের চার ব্যাটসম্যানের যাওয়া-আসা দেখেছেন উইলিয়ামসন। আগের দু’ম্যাচেই সেঞ্চুরি করা উইলিয়ামসন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আজ নিজের ইনিংসটি বড় করছিলেন। তবে ব্যক্তিগত ৪১ রানে থেমে যেতে হয় তাকে।
৮৩ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে দ্রুতই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে নিউজিল্যান্ড। এ অবস্থায় উইকেটে থিতু গাড়ার চেষ্টা করেন নিউজিল্যান্ডের ষষ্ঠ ও সপ্তম ব্যাটসম্যান যথাক্রমে জেমস নিশাম ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। ফলে ধীরে ধীরে লড়াইয়ে ফিরে নিউজিল্যান্ড। একশ-দেড়শ ছাড়িয়ে দু’শ রানের কোটা স্পর্শ করে নিউজিল্যান্ড।
জোড়া-হাফ সেঞ্চুরির স্বাদ নেন দু’জন। তবে ৪৮তম ওভারে বিচ্ছিন্ন হন গ্র্যান্ডহোম-নিশাম। নিজেদের ভুলে রান আউট হয়ে দলীয় ২১৫ রানে বিচ্ছিন্ন হয় এ জুটি। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭১ বলে ৬৪ রান করেন গ্র্যান্ডহোম। এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি। ষষ্ঠ উইকেটে ১২৮ বল মোকাবেলা করে ১৩২ রান করেন তারা।
ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১১২ বলে ৯৭ রান তুলে অপরাজিত থাকেন নিশাম। ৫৫ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটিই তার সেরা ইনিংস। অন্যদিকে ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন স্যান্টনার। পাকিস্তানের আফ্রিদি ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন।
২৩৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৫ বল বাকি থাকতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৪১ তুলে জয় নিশ্চিত করে পাকিস্তান। পাকিস্তানের এ জয়ে ব্যাট হাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন বাবর আজম।
ব্যাট হাতে ওয়ান ডাউনে নেমে ১২৭ বল মোকাবেলা করে ১০১ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার এ সেঞ্চুরির উপর ভর করেই নিজেদের তৃতীয় জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। ম্যাচ সেরা পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে।
এদিকে পাকিস্তানের এ জয়ে ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট অর্জন করে পয়েন্ট টেবিলের ষষ্ঠস্থানে ওঠে এসেছে। সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে সমান সংখ্যক জয় ও পয়েন্ট ৭ নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সমান পয়েন্ট হলেও রান রেটে এগিয়ে থেকে সামনে রয়েছে টাইগাররা। তবে সেমরি পথে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিই হলো পাকিস্তান।