সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দাপুটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আফগানদের বিপক্ষে ৬২ রানের জয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল টাইগাররা।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশের দেওয়া ২৬২ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোরে তাড়া করতে নেমে ৪৭ ওভারে ২০০ রানে তুলে অলআউট হয়ে গেছে আফগানিস্তান। এ জয়ে বাংলাদেশে ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট অর্জন করলো।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ধীর গতিতেই শুরু করে আফগানিস্তানের দুই ওপেনার গুলবাদিন নাইব ও রহমত শাহ। টাইগার বোলদের দেখে শুনে আফগানদের রানের চাকা সচল রাখেন তারা। কিন্তু দলীয় ৪৯ রানে আফগান শিবিরে আঘাত হানেন বিশ্বসেরা আলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
পাওয়ার-প্লেতে যখন ফাস্ট বোলাররা ব্যার্থ তখন ইনিংসের ১১তম ওভারে বল হাতে আসেন সাকিব। এসেই ওপেনার রহমত শাহকে সাজঘরে পাঠান তিনি। সাকিবের বল পুল করে উড়াতে গিয়ে আকাশে তোলেন রহমত শাহ। মিড অনে সহজ ক্যাচ নেন তামিম ইকবাল। আউট হওয়ার আগে ৩৫ বলে ২৪ রান করে তিনি। আর হাসমতুল্লাহ শহিদি ফেরান মোসাদ্দেক হোসেন।
এর কিছু পরেই আফগান শিবিরে আবারও জোড়া আঘাত হানে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এবার ওভারের প্রথম বলেই ওপেনার গুলবাদিন নাইবকে আর তৃতীয় বলে মোহাম্মদ মোহাম্মদ নবীকে আউট করেন তিনি।
৪ উইকেট হারিয়ে যখন আফগানিস্তান চাপে পরে তখন এক ওভার পরেই নিজের ষষ্ঠ ওভারে ৩৮ বলে ২০ রান করা আসগর আফগানকে প্যাভিলিয়নের পথে হাটান সাকিব। শেষের দিকে সামিউল্লাহ সেনওয়ারি ছাড়া কেউই উইকেটে ধারাতে পারেনি।
এর আগে সোমবার (২৪ জুন) ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে ম্যাচের শুরুতে আফগানদের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাট করে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই লিটন দাসের উইকেট হারায় টাইগাররা। দলীয় ২৩ রানে লিটন সাজঘরে ফেরার পর হাল ধরেন সাকিব-তামিম।
বাঁচা-মরার লড়াইয়ের ম্যাচে সাকিব-তামিম সাবধানী ব্যাটিং করে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৯ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। তাদের জুটিতে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখে টাইগার সমর্থকরা। কিন্তু দলীয় ৮২ রানে মোহাম্মদ নবীর ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন তামিম ইকবাল। তার আগে ৫৩ বলে ৩৬ রান করেন দেশসেরা এ ওপেনার।
তামিম আউট হলেও অনবদ্য ব্যাটিং করে যান সাকিব আল হাসান। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে ৬১ রানের জুটি গড়েন সাকিব। আর এই জুটিতেই ফিফটির পর মুজিব-উর-রহমানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাকিব। তার আগে ৬৯ বলে ৫১ রান করেন তিনি। আর এ রান করার মধ্য দিয় এবারের বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে ৪৭৬ রান নিয়ে শীর্ষে ওঠে যান বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার।
সাকিবের বিদায়ের পর সুবিধা করতে পারেননি সৌম্য সরকার। ওপেনিংয়ের পরিবর্তে পাঁচ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৩ রানে ফেরেন সৌম্য। দলীয় ৩২ ওভারে ১৫১ রানে লিটন দাস, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকারের উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। উইকেটে সেট হয়ে যাওয়ার পর নিজের ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি রিয়াদ। গুলবাদিন নাইবের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তিনি। তার আগে ৩৮ বলে দুটি চারের সাহায্যে ২৭ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে লিটন-তামিমের বিদায়ের পর ১৮তম ওভারে ব্যাটিংয়ে নামা মুশফিক শুরু থেকেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৬১ ও ৫৬ রানের জুটি গড়া মুশফিক, ষষ্ঠ উইকেটে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সঙ্গে ৪৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন।
অন্যবদ্য ব্যাটিং করে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন মুশফিক। কিন্তু ইনিংসের শেষ দিকে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে দৌলত জাদরানের বলে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তার আগে ৮৭ বলে চারটি চার ও এক ছক্কায় ৮৩ রান করে ফেরেন মুশফিক।
ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ২৪ বলে ৩৫ রান করেন মোসাদ্দেক। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬২ রান তুলতে সক্ষম হয় টাইগাররা।
আপগানিস্তানের বিপক্ষে এ ম্যাচে জয় তোলার নায়ক সাকিব আল হাসান। ফলে ম্যাচ সেরা পুরস্কারও হাতেই হাতেই ওঠেছে।
বিশ্বকাপের সেমির আগে এখন বাংলাদেশের বাধা ভারত ও পাকিস্তান। নিজেদের পরের দুই ম্যাচে ভারত এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেলে বিশ্বকাপে প্রথমবার সেমিফাইনালে খেলার স্বাদ পাবে টাইগাররা।