মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের শততম ওয়ানডে ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে জিম্বাবুয়ে।
ত্রিদেশীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১২ রানে হারায় আন্ডারডগ জিম্বাবুয়ে। মিরপুরে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে সিকান্দার রাজার অপরাজিত ৮১ ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজার ৭৩ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৯০ রান করে জিম্বাবুয়ে।
জবাবে ২৭৮ রানেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। তাই বাংলাদেশের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহকে দলের দায়িত্ব দিয়েও ভাগ্যের চাকা নতুন বছরের শুরুতে ঘুড়াতে পারলো না গেল বছর তিন ফরম্যাটে ৫৭ ম্যাচে মাত্র ১৪ জয় পাওয়া শ্রীলংকা। ফলে হার দিয়ে শ্রীলঙ্কার হয়ে নিজের কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করতে হলো হাথুরুকে।
২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু হয় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। মিরপুরের অভিষেক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে। ম্যাচটি ৮ উইকেটে জিতেছিল টাইগাররা।
মিরপুরের মাইলফলকের ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত শুরু করে জিম্বাবুয়ে। ১৩ ওভারেই স্কোর বোর্ডে ৭৫ রান তুলে ফেলেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার মাসাকাদজা ও সোলেমন মির। মিরকে ব্যক্তিগত ৩৪ রানে থামিয়ে দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচে প্রথম সাফল্য এনে দেন শ্রীলঙ্কার মিডিয়াম পেসার থিসারা পেরেরা। ৩৭ বল মোকাবেলায় ৫টি চারে নিজের ইনিংসটি সাজান মির।
তিন নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন ক্রেইগ আরভিন। মাত্র ২ রান করে আউট হন তিনি। দলীয় ৮৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলরকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজটা ভালোভাবেই করেন মাসাকাদজা। দলের স্কোর সচল রাখার পাশাপাশি ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মাসাকাদজা। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটি মাসাকাদজার চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি।
মাসাকাদজার দুর্দান্ত ইনিংসের পথে কাটা হয়ে দাঁড়ান শ্রীলঙ্কার মিডিয়াম পেসার আসলে গুনারত্নে। ব্যক্তিগত ৭৩ রানেই মাসাকাদজাকে থামিয়ে দেন তিনি। ৮৩ বল মোকাবেলা করে ১০টি চার মেরেছেন মাসাকাদজা। তৃতীয় উইকেটে টেইলরের সাথে ৫৭ রান যোগ করেন তিনি।
মাসাকাদজার বিদায়ের পর দলের ইনিংস বড় করার দায়িত্ব ছিল টেইলরের। কিন্তু ৪টি চারে ৫১ বলে ৩৮ রানেই বিদায় নেন তিনি। তার বিদায়ের ক্ষত দ্রুতই ভুলে যায় জিম্বাবুয়ে। কারণ ব্যাট হাতে শ্রীলংকার বোলারদের বিপক্ষে দাপটের সাথে লড়াই করেন রাজা। সাথে সঙ্গী হিসেবে পান ম্যালকম ওয়ালার ও পিটার মুরকে।
পঞ্চম উইকেটে ওয়ালারের সাথে ৬১ বলে ৫৭ ও ষষ্ঠ উইকেটে মুরের সাথে ৩৯ বলে ৬১ রান দলের স্কোরে যোগ করেন রাজা। ওয়ালার ৩৫ বলে ২৯ ও মুর ১৮ বলে ১৯ রান করে আউট হন। তবে ইনিংস শেষে ৮১ রানে অপরাজিত থাকেন রাজা। দশম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৮টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। এজন্য মাত্র ৬৭ বল খেলেন রাজা। শ্রীলংকার পক্ষে গুনারত্নে ৩টি ও পেরেরা ২টি উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২৯১ রানের টার্গেটে শুরুটা ভালো করেও ১ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। উদ্বোধণী জুটিতে দলকে ৪৬ রান এনে দেন উপুল থারাঙ্গা ও কুশল পেরেরা। ১৭ বলে ১১ রান করা পেরেরাকে তুলে নিয়ে জিম্বাবুয়েকে উইকেট শিকারের আনন্দ করার সুযোগ করে দেন কাইল জার্ভিস। পরের ওভারে জিম্বাবুয়েকে দ্বিতীয় সাফল্যের স্বাদ দেন তেন্ডাই চাতারা। শূন্য হাতে কুশল মেন্ডিসকে বিদায় দেন চাতারা।
এরপর পেরেরা ও অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ দলকে খেলায় রাখার চেষ্টা করে সফল হন। তৃতীয় উইকেটে ১১০ বলে ৮৫ রানের জুটি গড়েন তারা। এতে ম্যাচে লড়াইয়ে ভালোভাবেই টিকে ছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দলীয় ১৩২ থেকে ১৯৪ রানের মধ্যে লঙ্কানদের ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে জিম্বাবুয়ে। এসময় পেরেরা ৮৩ বলে ৮০, ম্যাথুজ ৬৪ বলে ৪২, দিনেশ চান্ডিমাল ৩৩ বলে ৩৪ ও আসলে গুনারত্নে ৯ বলে ৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন।
এ অবস্থায় দলের ভরসা হিসেবে টিকে ছিলেন থিসারা পেরেরা। এক প্রান্ত আগলে শ্রীলঙ্কার রানের চাকা একাই ঘুড়াচ্ছিলেন পেরেরা। তার ব্যাটিং নৈপুন্যেও পরও হতাশ না হয়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইন-আপের লেজ ছেটে ফেলার পরিকল্পনা করে জিম্বাবুয়ের বোলাররা। এমন অবস্থায় হাসারাঙ্গা ডি সিলভাকে ১১ ও আকিলা ধনানঞ্জয়াকে ৮ রানের বেশি করতে দেয়নি জিম্বাবুয়ের দুই বোলার যথাক্রমে অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমার ও চাতারা।
২৬১ রানে অষ্টম হারানোর পর পেরেরার জন্য জয়ের আশা শেষ করেনি শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দলীয় ২৭৫ রানে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্যাভিলিয়নে ফিরেন পেরেরা। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৭ বলে ৬৪ রান করেন পেরেরা। তার ফিরে যাবার ৯ বল পরই ২৭৮ রানে গুটিয়ে যায় তারা। জিম্বাবুয়ের চাতারা ৩৩ রানে ৪ উইকেট নেন। আগামী ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের বিপক্ষে এবারের টুর্নামেন্টে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
জিম্বাবুয়ে : ২৯০/৬, ৫০ ওভার (রাজা ৮১*, মাসাকাদজা ৭৩, টেইলর ৩৮, মির ৩৪, গুনারত্নে ৩/৩৭)।
শ্রীলঙ্কা : ২৭৮/১০, ৪৮.১ ওভার (কুশল পেরেরা ৮০, থিসারা পেরেরা ৬৪, চাতারা ৪/৩৩)।
ফল : জিম্বাবুয়ে ১২ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : সিকান্দার রাজা (জিম্বাবুয়ে)।