জো রুটের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে দ্বাদশ বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে সহজ জয়ের স্বাদ পেল স্বাগতিক ইংল্যান্ড। রুটের অপরাজিত ১০০ রানে ১০১ বল হাতে রেখেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে ইংলিশরা।
বিশ্বকাপে চার খেলায় ৩ জয় ও ১ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে ওঠে গেল ইংল্যান্ড। অপরদিকে ৪ খেলায় ১ জয় ২ হার ও ১টি পরিত্যক্ত ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠস্থানেই থাকলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ক্যারিবীয়দের মত একই অবস্থায় আছে বাংলাদেশও। তবে রান রেটে পিছিয়ে সপ্তমস্থানে টাইগাররা। আগামী ১৭ জুন টনটনে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ১৮ জুন ম্যানচেস্টারে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলবে ইংল্যান্ড।
শুক্রবার (১৪ জুন) সাউদাম্পটনে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেয় ইংল্যান্ড। পিচের সুবিধা নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপকে শুরুতেই বেকাদায় ফেলতে এমন সিদ্বান্ত ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ান মরগানের। স্বাগতিক অধিনায়কের সিদ্ধান্ত সঠিক বলে প্রমাণ করে তৃতীয় ওভারের শেষ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম উইকেট তুলে নেন ইংল্যান্ডের পেসার ক্রিস ওকস। ২ রান করা ওপেনার এভিন লুইসকে থামান তিনি।
এরপর কিছুটা ছন্দ খুঁজে পান উইন্ডিজ ওপেনার ক্রিস গেইল। আর্চারকে দুইবার সীমানা ছাড়া করেন তিনি। পরের ওভারে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে থার্ডম্যান অঞ্চলে বল তুলে দেন। তবে ওই সুযোগ হাতছাড়া করেন ওকস। আর ওই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ ঘোষণা দেয়া বাঁহাতি গেইল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ভিভ রিচার্ডের সর্বোচ্চ রান টপকে যান।
প্রথম দফায় ব্যর্থতার মাসুল খুব বেশি দিতে হয়নি ইংলিশদের। লিয়াম প্লানকেটের একটি শর্ট ডেলিভারি স্কয়ার লেগে তুলে দিলে বাউন্ডারি লাইন থেকে বল তালুবন্দি করে গেইলকে (৩৬) সাজঘরে ফেরান জনি বেয়ারস্টো। এরপর ক্যরিবীয়রা সত্যিকারের সঙ্কটে পড়ে যায় যখন মার্ক উড এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন শাই হোপকে। এতে ৫৫ রানেই ৩ উইকেট হারায় উইন্ডিজ।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে নিকোলাস পুরান ও শিমরোন হেটমায়ার ৮৯ রানের যোগান দিয়ে ফের দলকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন। তবে ইংলিশ টেস্ট অধিনায়ক রুট নিজের বলে নিজেই ফিল্ডিং করে ৩৯ রান করা হেটমায়ারকে ফিরিয়ে দিলে আসলেই সঙ্কটে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অনিয়মিত এ বোলার নিজের পরের ওভারেও ফের সাফল্য পান। নিজের বলে নিজে ফিল্ডিং করে ফের ফিরিয়ে দেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডারকে (৯)।
এরপর মারমুখি ব্যাটিং শুরু করেন আন্দ্রে রাসেল। লেগ স্পিনার আদিল রশিদের বলে দুটি ছক্কা হাকানোর পর উডের শর্ট বলে মিডউইকেটে ধরা পড়েন ওকসের হাতে। এরপর ব্যক্তিগত ৬৩ রান করা পুরান আর্চারের বলে জস বাটলারের হাতে ধরা পড়লে অনেকটাই শেষ পর্যায়ে চলে যায় ক্যরিবীয় ইনিংস।
৪০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২০২। শেষ পর্যন্ত ৪৪.৪ ওভারে ২১২ রানে সবকটি উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ম্যাচের শুরুতে অবশ্য হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাকিয়ে ইংলিশদের জয়ের নায়ক জেসন রয়। স্বাগতিক দলের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন উড ও আর্চার। ৫ ওভার বল করে ২৭ রানে ২ উইকেট নেন অনিয়মিত বোলার রুট।
২১৩ রানের সহজ টার্গেটে খেলতে নামেন নিয়মিত ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও তিন নম্বরে খেলতে থাকা জো রুট। ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়ায় ইংল্যান্ডের হয়ে শুরুতেই ব্যাট করতে পারেননি নিয়মিত ওপেনার ও বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা জেসন রয়।
বেয়ারস্টো-রুটের শুরুটা মোটেও খারাপ হয়নি। উড়ন্ত সূচনাই করেন তারা। ১০ ওভারের প্রথম পাওয়া প্লে’তে ৬২ রান তুলে ফেলেন তারা। এখানেই থেমে যাননি বেয়ারস্টো-রুট। নিজেদের জুটিটি বড় করার পথেই হাঁটতে থাকেন ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি।
দলীয় স্কোর শতরানে পৌঁছানোর আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন বেয়ারস্টো-রুট। দলীয় ৯৫ রানে বেয়ারস্টোকে শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম সাফল্য এনে দেন দলের পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। ৭টি চারে ৪৬ বলে ৪৫ রান করেন বেয়ারস্টো। উদ্বোধনী জুটিতে ৪২ বলে ৪২ রান অবদান রাখেন রুট।
বেয়ারস্টোর বিদায়ে উইকেটে আসেন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া ক্রিস ওকস। রুটের সাথে তাল মিলিয়ে খেলতে থাকেন ওকস। খুব বেশি ঝুঁকি না নিয়ে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান রুটকেই স্ট্রাইক দিচ্ছিলেন ওকস। রান তোলার কাজটা বেশ ভালোভাবেই করছিলেন রুট। এ জুটির কল্যাণে জয়ের ভিত পেয়ে যায় ইংল্যান্ড।
দলীয় স্কোর দু’শর কাছাকাছি পৌঁছেও যায়। কিন্তু দু’শ স্পর্শ করার আগেই শ্যাননের দ্বিতীয় শিকার হয়ে থেমে যান ওকস। ৪টি চারে ৫৪ বলে ৪০ রান করেন তিনি। রুটের সাথে ১০৩ বলে ১০৪ রানের জুটি গড়েন ওকস।
দলীয় ১৯৯ রানে ওকসের বিদায়ে চিন্তায় পড়েনি ইংল্যান্ড। কারণ জয় থেকে মাত্র ১৪ রান দূর দাঁড়িয়ে ইংলিশরা। দলের জয় নিশ্চিতের আগে ৯৩ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৬তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রুট। বিশ্বকাপে তৃতীয় ও এবারের আসরে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পেলেন রুট। এবারের আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছিলেন। চলমান বিশ্বকাপের অষ্টম সেঞ্চুরি করেন রুট।
সেঞ্চুরির পর বেন স্টোকসকে নিয়ে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন রুট। ১১টি চারে ৯৪ বলে অপরাজিত ১০০ রান করেন তিনি। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানকে পেছনে ফেলে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর স্থানটি দখল করেন রুট।
বিশ্বকাপের ৪ ম্যাচের ৪ ইনিংসে ২৭৯ রান রুটের। ৩ ম্যাচের ৩ ইনিংসে ২৬০ রান সাকিবের। ১০ রানে অপরাজিত ছিলেন স্টোকস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের গাব্রিয়েল ৪৯ রানে ২ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ইংল্যান্ডের রুট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২১২/১০, ৪৪.৪ ওভার (পুরান ৬৩, হেটমায়ার ৩৯, গেইল ৩৬, উড ৩/১৮, আর্চার ৩/৩০)
ইংল্যান্ড : ২১৩/২, ৩৩.১ ওভার (রুট ১০০*, বেয়ারস্টো ৪৫, ওকস ৪০, গ্যাব্রিয়েল ২/৪৯)
ফল : ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : জো রুট (ইংল্যান্ড)।