লড়াই করেও হারলো বাংলাদেশ

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০২:৪৪ এএম, ০৬ জুন ২০১৯
লড়াই করেও হারলো বাংলাদেশ

ছবি : গেটি ইমেজ

২৪৪ রানের স্কোর, এবারের বিশ্বকাপ আসরে খুব বেশি রান নয়। তবুও লড়াই করলো বাংলাদেশ। বাঘের গর্জন ঠিকই দেখালো। তবে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও রস টেলরের ১০৫ রানের জুটিতে হেরে গেছে বাংলাদেশ।

বুধবার (৫ জুন) দিনের দ্বিতীয় ও বিশ্বকাপের নবম ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। ওভালের যে স্টেডিয়ামে খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে আগে ব্যাট করা সহজ নয বলে আগেই জানিয়েছিলেন মাশরাফি। ব্যাট হাতে মাঠে নেমে তার প্রমাণও পায় বাংলাদেশ।

প্রথমে ব্যাট করে ৪৯.২ ওভারে ২৪৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ম্যাচ জয়ে ২৪৫ রানের লক্ষে ব্যাট করতে নেমে ৪৭.১ ওভারে ২৪৮ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ড।

ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের নবম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ৪৫ রানে সাজঘরে ফিরেন সৌম্য সরকার। নিউজিল্যান্ডের পেসার ম্যাট হেনরির বলে আউট হওয়া এ বাঁ-হাতি ২৫ বলে সমান ২৫ রান করেন। সৌম্য পর জুটি বাঁধেন তামিম ও আগের ম্যাচের সেরা সাকিব আল হাসান। তবে তারাও বেশি দূর যেতে পারেননি।

দলীয় ৬০ রানে থামেন তামিম। ৩টি চারে ৩৮ বলে ২৪ রান করে নিউজিল্যান্ড পেসার পেসার লুকি ফার্গুসনের শিকার হন তিনি। তামিমকে আউট করে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের ২৯তম ম্যাচে ৫০ উইকেট পূর্ণ করেন ফার্গুসন।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের মত এবারও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন তামিম-সৌম্য। তাই আবারও দলের হাল ধরেন ২শতম ম্যাচ খেলতে নামা সাকিব ও মুশফিকুর। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দলকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন সাকিব-মুশফিক। এবারও সেই পথেই হাটছিলেন তারা। কিন্তু জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি আসার পরই বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তারা। সাকিবের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন ২টি চারে ৩৫ বলে ১৯ রান করা মুশফিক।

মুশফিক ফিরে গেলেও রান তোলার কাজটা ভালোভাবেই করছিলেন সাকিব। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের উপর চড়া হন তিনি। তাতে ৩০ ওভার শেষে দেড়শ রানের সংগ্রহ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ততক্ষণে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৪তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন সাকিব। তবে এবারও নিজের ইনিংসটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি এ বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। ৭টি চারে ৬৮ বলে ৬৪ রান করেন কলিন ডি গ্র্যন্ডিহোমের শিকার হন সাকিব। আগের ম্যাচে ৭৫ রান করেছিলেন তিনি।

সাকিবের বিদায়ের পর নিউজিল্যান্ড বোলারদের উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করেন পাঁচ নম্বরে নামা মোহাম্মদ মিঠুন। ভালো শুরুর পর সাবলীলভাবে ৩টি চার হাকাঁন মিঠুন। কিন্তু বেশি দূর যাওয়া হয়নি, হেনরির দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ৩৩ বলে ২৬ রান করেন মিঠুন।

৩৮তম ওভারের প্রথম বলে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে দলীয় ১৭৯ রানে আউট হন মিথুন। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে ভালো সংগ্রহ এনে দেয়ার দায়িত্ব বর্তায় শেষ দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেনের। কিন্তু দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ধীরলয়ে খেলে ৪১ বলে কোন বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি ছাড়া ২০ রান করে বিদায় নেন তিনি।

১৯৭ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের শেষ হয়ে যায় দলের বড় সংগ্রহের আশা। এরপরও শেষ ৪৫ বলে দলকে লড়াকু সংগ্রহ এনে দেয়ার চেষ্টা করেন লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। মোসাদ্দেক ১১ রানে ফিরলেও ব্যাট হাতে মারমুখী ছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তার ২৩ বলে ২৯ রানের সুবাদে ২৪৪ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।

শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন সাইফউদ্দিন। তার ইনিংসে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল। নিউজিল্যান্ডের হেনরি ৪৭ রানে ৪টি উইকেট নেন।

২৪৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভালোই শুরু করে নিউজিল্যান্ড। ৫ ওভারেই তুলে নেয় ৩৫ রান। তবে সাকিব আল হাসানের বোলে নিউজিল্যান্ডের জুটি ভাঙে। শুধু জুটি নয়, সাকিব দুই ওপেনারকেই তুলে নেন।

বল হাতে নিয়ে নিজের প্রথম বলেই ভয়ঙ্কর মার্টিন গাপটিলকে সাজঘরে পাঠনি বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। সাকিবের বলে তামিমের হাতে ক্যাচ বন্দি হওয়ার আগে ১৪ বলে মোকাবেলা করে ৩ চার ও ১ ছয়ে ২৫ রান করেন গাপটিল।

গাপটিল চলে যাওয়ার পর ঝড়ো ব্যাটিং চালিয়ে যান আরেক ওপেনার কলিন মুনরো। ৭ ওভারেই দলীয় পঞ্চাশ পূরণ করে নিউজিল্যান্ড। তবে সাকিব ও মিরাজের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি মুনরো।

ইনিংসের ১০তম ওভারের শেষ বলে সাকিবের বোলিংয়ে মিরাজের হাতে ক্যাচে ধরা পরেন মুনরো। ৩৪ বলে ২৪ রান করেন মুনরো। এরপরই দলের হাল ধরেন টেলর এবং অধিনায়ক উইলিয়ামসন, গড়েন ১০৫ রানের জুটি।

অথচ তাদের এ জুটি ভাঙতে পারতো মাত্র ৬ রানে! ম্যাচের ১২তম ওভারে সদ্যই উইকেটে আসা রস টেলরের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে বিপদে পড়েন উইলিয়ামসন। তবে মুশফিকের ভুলে আউট থেকে বেঁচে যান উইলিয়ামসন।

ম্যাচের ৩২তম ওভারে মিরাজের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে সৈকতের হাতে ধরা পড়েন উইলিয়ামসন।৭২ বলে ৪০ রান করেন উইলিয়ামসন। একই ওভারের বাঁহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লাথামকেও ফেরান মিরাজ। মিরাজের জোড়া আঘাতে ম্যাচে প্রাণ ফিরে আসে।

ইনিংসের ৩৯তম ওভারে উইকেটে টিকে থাকা রস টেলরকে তুলে নেন মোসাদ্দেক। আউট হওয়ার আগে ৯১ বলে ৮২ রান করেন টেলর।

কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে (১৩ বলে ১৫) মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং জিমি নিশামকে (৩৩ বলে ২৫) সাজঘরে পাঠান মোসাদ্দেক। তবে মিচেল স্যান্টনার একপ্রান্ত ধরে রেখে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন। ৪৭তম ওভারে ম্যাট হেনরিকে সরাসরি বোল্ড করে আবারও আশা জাগান সাইফউদ্দিন।

তবে ৪৮তম ওভারের মোস্তাফিজের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাহিয়ে জয় নিশ্চিত করেন ১২ বলে ১৭ রান করা স্যান্টনার। টাইগারদের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ, সাকিব, মোসাদ্দেক ও সাইফউদ্দিন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন ৯১ বল মোকাবেলা করে ৯ চারের মারে ৮২ রান করা নিউজিল্যান্ডের রস টেইলর।



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

সেই মুশফিকের গ্লাভসেই টেইলর

সেই মুশফিকের গ্লাভসেই টেইলর

মিরাজের জোড়া উইকেটে ম্যাচে ফিরলো বাংলাদেশ

মিরাজের জোড়া উইকেটে ম্যাচে ফিরলো বাংলাদেশ

মুশফিকের বাচ্চাসুলভ ভুলঃ শক্ত অবস্থানে নিউজিল্যান্ড

মুশফিকের বাচ্চাসুলভ ভুলঃ শক্ত অবস্থানে নিউজিল্যান্ড

পথ হারাচ্ছে বাংলাদেশ

পথ হারাচ্ছে বাংলাদেশ