বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু করলো বাংলাদেশ। দ্বাদশ বিশ্বকাপের পঞ্চম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে মাশরাফি বাহিনী।
রোববার (২ জুন) টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৩০ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাংলাদেশের এটিই সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৯ রানে থেমে যায়। ফলে ২১ রানের জয় তুলে নেন টাইগাররা।
ব্যাট হাতে নেমে বেশ দেখেশুনেই খেলতে থাকেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। প্রথম ৪ ওভারে ১৪ রান তুলে বাংলাদেশ। উইকেটের সাথে সেট হতে খুব বেশি সময় নেননি সৌম্য। সৌম্যর পর অন্যপ্রান্তে থাকা তামিম দুর্দান্ত শুরু করেন। পরের ওভারে বাউন্ডারি হাকান তিনি। এরপর আর থেমে থাকেনি বাংলাদেশের রান তোলার গতি।মারমুখী মেজাজে ৭ ওভারেই ৫০ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
তবে নবম ওভারে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিকে বিচ্ছিন্ন করেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার আন্দিল ফেলুকুয়াও। ২টি চারে ২৯ বলে ১৬ রান করা তামিমকে থামান ফেলুকুয়াও। কিছুক্ষণ পর আউট হন সৌম্যও। দুর্দান্ত শুরু করা সৌম্য হাফ-সেঞ্চুরি তুলতে ব্যর্থ হন। ৯টি চারে ৩০ বলে ৪২ রান করেন সৌম্য।
৭৫ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর বাংলাদেশের হাল ধরেন বাংলাদেশের তিন ও চার নম্বর ব্যাটসম্যান যথাক্রমে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। দু’জনের ব্যাটিং ভেল্কিতে লাইন-লেন্থহীন হয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং। অবলীলায় বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডকে ভারী করতে থাকেন সাকিব-মুশফিক।
১৬ ওভারে ১০০, ২৪ ওভারে ১৫০ ও ৩২ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ২০০ রানে নিয়ে যান সাকিব-মুশফিক। ততক্ষণে দু’জনই তুলে নেন হাফ-সেঞ্চুরি। সাকিব ৪৩ ও মুশফিক ৩৪তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। দু’জনের ব্যাটিং নৈপূণ্যে আভাস দিচ্ছিল- দু’টি সেঞ্চুরির। কিন্তু ৩৩তম ওভারে ভেঙ্গে যায় সাকিব-মুশফিক দুর্দান্ত জুটিটি।
দক্ষিণ আফ্রিকার লেগ-স্পিনার ইমরান তাহির থামিয়ে দেন সাকিবকে। ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৪ বলে ৭৫ রান করেন সাকিব। তৃতীয় উইকেটে ১৪১ বলে ১৪২ রান যোগ করেন সাকিব-মুশকিক।
সাকিব ব্যর্থ হলেও মুশফিকের সেঞ্চুরি দেখার অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ। তবে তিনিও ব্যর্থ হন, ৮টি চারে ৮০ বলে ৭৮ রান করেন মুশি। মুশফিক ফিরে যাবার আগে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন পাঁচ নম্বরে নামা মোহাম্মদ মিথুন। মারমুখী মেজাজে শুরু করা মিথুন ২১ বলে করেন ২১ রান। তার ছোট্ট ইনিংসে ছিলে ২টি চার ও ১টি ছক্কা।
দলীয় ২৫০ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তখন ইনিংসের ৪৭ বল বাকি ছিল। ষষ্ঠ উইকেটে মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে ভয়ঙ্কর রূপ নেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের উপর চড়াও হন দু’জন। ফলে ৪৮তম ওভারেই ৩শ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
৪৯তম ওভারের শেষ বলে আউট হন মোসাদ্দেক। মাহমুদউল্লাহর সাথে ষষ্ঠ উইকেটে মাত্র ৪১ বলে ৬৬ রান যোগ করেন আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ২৭ বলে অপরাজিত ৫২ রান করা মোসাদ্দেক। এবার মোসাদ্দেক করেন ২০ বলে ৪টি চারে ২৬ রান।
৮ নম্বরে নামা মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে পরবর্তীতে ইনিংস শেষ করেন মাহমুদউল্লাহ। মাহমুদউল্লাহর ৩৩ বলে অপরাজিত ৪৬ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৩০ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর ইনিংসে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল। মিরাজ ৩ বলে ৫ রানে অপরাজিত থাকেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার ফেলুকুওয়াও-ক্রিস মরিস ও তাহির ২টি করে উইকেট নেন।
৩৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হলেও দলীয় ৪৯ রানের মাথায় মুশফিকের হাতে রান আউট হয়ে ২৩ রান করে ফেরেন ডি কক। ওয়ানডাউনে নেমে ডু প্লেসিস ওপেনার মাকরামকে নিয়ে বড় জুটির ইঙ্গিত দিলেও তা বড় করতে দেননি সাকিব।
দলীয় ১০২ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৪৫ রানে মাকরামকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন সাকিব। ১৪৭ রানের মাথায় ৩৩তম হাফ-সেঞ্চুরি (৬২) করে মিরাজের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ডু প্লেসিস। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ডেভিড মিলার ও ভ্যান ডার দুসেন মিলে করেন ৫৩ রান।
দলীয় স্কোর ২০২ রানের মাথায় মিলারকে ৩২ রানে ফিরিয়ে বেক থ্রো এনে দেন মোস্তাফিজ। ৪১ রান করা ভ্যান ডার দুসেনকে ফেরান সাইফউদ্দিন। দুসেনের উইকেট ছিল বিশ্বকাপের সাইফের প্রথম উইকেট। নিজের পঞ্চম ওভারে ফের আঘাত হানেন সাইফ। আন্দিল পেহলুকায়োকে ফেরান ৮ রানে।
দলের বিপর্যয়ের মুহূর্তে ব্যাট করতে নেমে ক্রিস মরিস ১০ রান করে মোস্তাফিজের শিকার হয়ে দলকে আরও বিপদে ঠেলে দেন। শেষ দিকে দলের যখন ১৭ বলে ৪৪ রান প্রয়োজন তখন ছয় নম্বরে ব্যাট করতে ক্রিজে নামেন জেপি ডুমিনি। তিনিই ছিলেন একমাত্র ভরসা। তবে মোস্তাফিজের অষ্টম ওভারে ৩৭ বলে ৪৫ রান করে বোল্ড হয়ে ফেরেন ডুমিনি।
শেষ দুই ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন পড়ে ৪০ রান। কিন্তু বোলারদের দ্বারা তা অসম্ভবই ছিল। শেষ দিকে রাবাদার ১৩ ও ইমরান তাহিরের ১০ রানের সুবাধে ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৯ রানে থেমে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেমের পক্ষে মোস্তাফিজুর রহমান ৩টি, সাইফউদ্দিন ২টি, সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ একটি করে উইকেট শিকার করেন। ব্যাট হাতে ৭৫ রান ও বল হাতে এক উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।