ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসে দ্বাদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপে রান বন্যার আসর হবে বলে মনে করেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বর্তমান কন্ডিশনের কারণে ব্যাটসম্যানরা সুবিধা পাবে বলেই হাই-স্কোরিং ম্যাচ হবে বলে জানান কোহলি।
রানের বন্যা ছাড়াও এবারের আসরকে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে করেছেন কোহলি। এ চ্যালেঞ্জিং বিশ্বকাপে আত্মবিশ্বাসী হয়েই ইংল্যান্ড যাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া। ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগে মঙ্গলবার মুম্বাইয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কোহলি।
সংবাদ সম্মেলনের সময় তার সাথে কোচ রবি শাস্ত্রীও ছিলেন। তিনি জানান, ভারতের বর্তমান দলের উপর আস্থা রয়েছে তার। ফলে বিশ্বকাপে সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
১৯৭৫ সালে বিশ্বকাপ আসর শুরুর পর প্রথম দুই আসরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয় ভারত। তবে নাটকীয়ভাবে ১৯৮৩ সালের চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। গ্রুপ পর্বে খর্বশক্তির দল জিম্বাবুয়ের কাছে হারতে-হারতে বেঁচে যায় ভারত। ১৭ রানে ৫ ও ৭৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের শঙ্কায় পড়ে ভারত। কিন্তু ছয় নম্বরে নেমে অধিনায়ক কপিল দেব ১৩৮ বলে অপরাজিত ১৭৫ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলেন। তার ইনিংসের কল্যাণেই ৬০ ওভারের ম্যাচে ৮ উইকেটে ২৬৬ রান করে ভারত। পরে বোলারদের দৃঢ়তায় ৩১ রানে জয় পায় কপিলের দল।
গ্রুপ পর্ব ও সেমিফাইনালের বাঁধা পেরিয়ে ফাইনালে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয় ভারত। প্রথমে ব্যাট করে ১৮৩ রানে অলআউট হয়ে শিরোপা জয়ের স্বপ্নও দেখেনি টিম ইন্ডিয়া। বোলারদের নৈপুণ্যে প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৩ রানে হারিয়ে তৃতীয় আসরেই বিশ্বকাপের স্বাদ নেয় ভারত।
এরপর ছয়টি আসর কেটে গেলেও শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি ভারত। অবশেষে ২০১১ সালে দ্বিতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। শচীন টেন্ডুলকার, বিরেন্দার শেবাগ, যুবরাজ সিং-হরভজনদের নিয়ে গড়া দলকে শিরোপার স্বাদ দেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। এরপর ২০১৫ সালে সেমিফাইনালে উঠে ক্ষান্ত হতে হয় ভারতকে।
বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরে শিরোপা পুনরুদ্ধারে উদগ্রীব ভারত। এ জন্য নিজেদের সেরা খেলাটাই আসল লক্ষ্য টিম ইন্ডিয়ার বলে জানালেন কোহলি। বলেন, ‘গেল দুই-তিন বছর আমরা যেরকম ক্রিকেট খেলেছি, ঠিক সেভাবেই আসন্ন বিশ্বকাপে খেলতে চাই। আমাদের আসল লক্ষ্য ভালো ক্রিকেট খেলা এবং মাঠের লড়াইয়ে নিজেদের উজার করে দেয়া।’
আসন্ন বিশ্বকাপে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন কোহলি। বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এটিই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিশ্বকাপ। কারণ, এবারের বিশ্বকাপের ফরম্যাট ভিন্ন। আমার খেলা অন্য বিশ্বকাপের থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। এই ফরম্যাটে যেকোন দল অঘটন ঘটাতে পারে। প্রত্যকটি দলের সাথে ব্যবধান খুব বেশি নয়। তাই দ্রুতই এই ফরম্যাটের সাথে মানিয়ে নিতে হবে।’
বিশ্বকাপের দল নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী কোহলি। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারসাম্যপূর্ণ ও আত্মবিশ্বাসী একটি দল নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছি। দলের তিন বিভাগেই ভালো খেলোয়াড় রয়েছে। যারা নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে। আইপিএলে প্রত্যক খেলোয়াড়ই নিজেদের সেরা ফর্মে ছিল। আইপিএলের কারণে দলের সবাই নিজেদের ফর্ম নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। সবাই ক্রিকেটকে উপভোগ করতে চায়। যে কোন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষমতা আছে দলের।’
ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানরা সুবিধা পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কোহলি। বলেন, ‘আমরা বিশ্বকাপে বড় স্কোর আশা করি। আইসিসির ইভেন্টে পিচ খুবই ভালো হয়। ব্যাটসম্যানদের পক্ষেই থাকে। আমি বলবো না, লো-স্কোরিং ম্যাচ হবে না। কিন্তু ২৬০-২৭০ রানের যেকোন দলের জন্য ভালো সংগ্রহ হবে। বোলারদের লড়াই করতে সুবিধা হবে। তবে কন্ডিশনের কারনে বেশিরভাগ ম্যাচই হাই-স্কোরিং হবে।’
কোহলির সাথে তাল মিলিয়ে দলের কোচ শাস্ত্রী বলেন, ‘পিচ হবে ফ্লাট। ইংল্যান্ডের এখনকার কন্ডিশনে কী হতে পারে তা বুঝতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে আমরা নিজেদের কন্ডিশনের সাথেই মানিয়ে নেব। দলের খেলোয়াড়রা ভালো ফর্মে রয়েছে এবং মাত্রই আইপিএল শেষ করেছে। দেড় মাস ধরে আইপিএল খেলেছে তারা। সকলেই খেলার মধ্যে ছিল। নিজেদের সেরাটা বিশ্বকাপের মঞ্চে সকলেই দিতে পারবে বলে আমি আশাবাদী।’
বিশ্বকাপের মূল লড়াইয়ের আগে দু’টি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলবে ভারত। ২৫ মে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ও ২৮ মে বাংলাদেশের বিপক্ষে দু’টি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ রয়েছে টিম ইন্ডিয়ার। তবে সাউদাম্পটনে ৫ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে কোহলির দল। বুধবার (২২ মে) ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন কোহলি-ধোনিরা।