চার বছর পর আবারও শুরু হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ ক্রিকেট। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দ্বাদশতম এ আসর বসছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসে। ৩০ মে লন্ডনের ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে ২০১৯ বিশ্বকাপের।
বিশ্বের টেস্ট খেলুড়ে দশ দেশ- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং স্বাগতিক ইংল্যান্ড লড়বে চির প্রত্যাশিত বিশ্বকাপ শিরোপার জন্য।
বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ে অবদান রাখার কারণে অনেক গ্রেটরাই স্মরণী হয়ে আছেন। আসন্ন বিশ্বকাপও তার ব্যতিক্রম হবে না এবং বেশ কিছু ক্রিকেট লিজেন্ডদের দেখা যাবে মাঠে। এদের মধ্যে আবার অনেকেই রয়েছেন যাদেরকে দলের জন্য ‘অনস্বীকার্য’ হলেও এটাই হয়তো তাদের শেষ বিশ্বকাপ।
নিচে তাদেরই একটি সম্ভাব্য তালিকা তুলে ধরা হলো-
মাশরাফি বিন মর্তুজা (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ অধিনায়কের রয়েছে দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। বার বার ইনজুরিতে পড়েও ক্রিকেট ও দেশকে ভালোবেসে ফিরে এসেছেন বার বার। দেশের ক্রিকেট বোর্ডসহ টাইগার ভক্তরাও তাকে বারবার স্বাগত জানিয়েছেন। মাঠে নেমে বোল হাতে এ অলরাউন্ডার অনেক রেকর্ডই নিজের করে নিয়েছেন। সর্বশেষ খেলোয়াড় অবস্থাতেই হয়েছেন জাতীয় সংসদের সদস্য।
‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত এ তারকা খেলোয়াড় দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২০২ ওয়ানডে খেলেছেন। জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭০ ম্যাচে নেতৃত্ব দেয়া মাশরাফি ২০৫ ওয়ানডে ম্যাচে শিকার করেছেন ২৫৯ উইকেট। ৫০ ওভার ফর্মেটে দেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারও তার।
দলের ‘অপরিহার্য্য’ এ তারকা ৩৬ টেস্টে শিকার করেছেন ৭৮ উইকেট। এছাড়া জাতীয় দলের হয়ে ৫৪ টি-২০ ম্যাচে শিকার করেছেন ৪২ উইকেট। লোয়ার অর্ডারে ঝড় তুলতে সক্ষম ৩৫ বছর বয়সী মাশরাফি।
আইপিএলে এক সময় কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলা এ মিডিয়াম পেসার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অধিনায়কত্ব করেছেন ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং রংপুর রাইডার্সের।
বিপিএলের সর্বশেষ আসরে রংপুরের হয়ে ১৪ ম্যাচে ২২ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। তবে নিজের কাছে বয়স কোন বিষয় না হলেও ২০১৯ হতে পারে তার শেষ বিশ্বকাপ।
মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ব্যাটিং অলরাউন্ডারদের একজন মোহাম্মদ হাফিজ। দেশের হয়ে ৫৫ টেস্টে ৩৭ দশমিক ৬৫ গড়ে ৩৬৫২ রান করেছেন তিনি। ২০০৩ সালে আভিষেক হওয়ার পর ২০৮ ওয়ানডে ম্যাচে ৩২ দশমিক ৯৯ গড়ে তার মোট রান ৬৩০২। এছাড়া ৮৯ টি-২০তে ২৪ দশমিক ৪৬ গড়ে তার মোট রান ১৯০৮।
সারগোধায় জন্মগ্রহণ করা হাফিজ অ্যাকশন ত্রুটির কারণে বর্তমানে বোলিং করতে পারছেন না। তবে নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ওয়ানডে, টেস্ট ও টি-২০তে যথাক্রমে ১৩৭, ৫৩ এবং ৫৪ উইকেট শিকার করেছেন এ অফ ব্রেক বোলার। বল হাতে বেশ কিপ্টেও ছিলেন তিনি।
টি-২০ ক্রিকেট চালু হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘরোয়া আসরের নিয়মিত খেলোয়াড় ৩৮ বছর বয়সী হাফিজ। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স, পিএসএলে ফয়সালাবাদ ওলভস, লাহোর কালান্দার্স, সিপিএলে সেন্ট কিটস, নেভিস প্যাট্রিয়টস ও বিপিএলে রাজশাহী কিংসের হয়ে খেলেছেন এ অলরাউন্ডার।
তবে গত বেশ কিছু দিন যাবত ফর্মটা মোটেই ভালো যাচ্ছে না হাফিজের এবং ২০১৯ বিশ্বকাপের পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে পারেন। তবে বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া টি-২০ লিগে খেলা চালিয়ে যাবেন তিনি।
লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)
৩৫ বছর বয়সী লাসিথ মালিঙ্গা তার শেষ বিশ্বকাপ খেলতে পারেন ২০১৯ আসর। মারদাঙ্গা প্রকৃতি, ঝাকড়া চুল এবং বোলিং অ্যাকশনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত লঙ্কার এ বোলার। তবে ডান-হাতি এ মিডিয়াম ফাস্ট বোলার সবচেয়ে বেশি পরিচিত তার বোলিং দক্ষতার জন্য।
সিংহদের হয়ে নিজের সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে ১১ উইকেট শিকার করেছেন এ স্পিডস্টার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহুবার নিজের বোলিং ক্যারিশমা দিয়ে দলকে জিতিয়েছেন। নজুরির কারণে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার আগ ৩০ ম্যাচে শিকার করেছেন ১০১ উইকেট। ২০১৮ ওয়ানডেতে শিকার ৩২২ উইকেট। ৭৩ টি-২০তে উইকেট ৯৭টি। নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে সিরিজে অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি। তার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা জয় করেছে টি-২০ বিশ্বকাপ শিরোপাও।
বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া টি-২০ লিগে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, খুলনা রয়্যালস, মেলবোর্ন স্টার্স, গায়ানা এ্যামাজন ওরিয়র্স, সাউদার্ন এক্সপ্রেস, রংপুর রাইডার্স, খুলনা টাইটান্সের হয়ে।
শোয়েব মালিক (পাকিস্তান)
পুরো ক্যারিয়ারে সব পজিশনেই ব্যাটিং করেছেন শিয়ালকোটে জন্ম গ্রহণ করা শোয়েব মালিক। প্রায় দুই দশকের বেশি সময় যাবত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন এ ব্যাটিং অলরাউন্ডার। সর্বোচ্চ ১০৮ টি-২০ ম্যাচে ও সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ডও রয়েছে তার।
সিমিত ওভার ক্রিকেটের প্রতি নজর দিতে বিশেষ করে ২০১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ২০১৫ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। ক্রিকেটের সব ফর্মেটেই তার রয়েছে সমৃদ্ধ রেকর্ড। ৩৫ টেস্টে বল হাতে ৩২ উইকেটসহ তার মোট রান ১৮৯৮। ২৭৮ ১৫৬ উইকেটের সঙ্গে রান ৭৪৮১। ১১১ আন্তর্জাতিক টি-২০তে ২২৬৩ রান ও উইকেট ২৮।
নির্ভরযোগ্য এ খেলোয়াড় এ বছর বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলেছেন। এ ছাড়া তিনি নিজ দেশে করাচি হোয়াইটসসহ বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া টি-২০ লিগে খেলে থাকেন। তবে ২০১৯ বিশ্বকাপের পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে পারেন মালিক।
মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)
ক্রীড়াঙ্গন থেকে বিদায় নিলেও ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে মহেন্দ্র সিং ধোনির নাম। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতেই তিনি সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষক।
একজন ক্যারিশম্যাটিক অধিনায়ক ধোনি গত দুই দশকের বেশি সময় যাবত ভারতীয় ক্রিকেট দলের আত্মা হয়ে আছেন। অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৩৩২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডটি রয়েছে তার দখলে।
৩৭ বছর বয়সী ধোনির রয়েছে সমৃদ্ধ একটি ক্যারিয়ার। ৯০ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৩৮ দশমিক ০৯ গড়ে তার রয়েছে ৪৮৭৬ রান। ৩৪১ ওয়ানডেতে ৫০ দশমিক ৭২ গড়ে তোর মোট রান ১০৫০০। এছাড়া ৯৮টি আন্তর্জাতিক টি-২০তে ৩৭ দশমিক ৬০ গড়ে ১৬১৭ রানের মালিক ধোনি।
২০১৪ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন মাহি। ২০১৮ সালে ফর্ম নিয়ে ধুকছেন রাঁচিতে জন্ম গ্রহণ করা এ তারকা ক্রিকেটার। যে কারণে অনেকেই তার সমালোচনায় ছিলেন মুখর।
তবে সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে তিন ওয়ানডে সিরিজের সব ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি হাকিয়ে বিশ্বকাপের আগে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। নির্বাচিত হয়েছেন সিরিজ সেরা খেলোয়াড়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখনো ফুরিয়ে যাননি- তারই প্রমান দিয়েছেন ধোনি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকে নিজের আত্মবিশ্বাসটা যেন আবারও ফিরে পেয়েছেন তিনি। এবার যেন আরও এগিয়ে যাওয়ার পালা। ভারতকে ওয়ানডে ও টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিয়েছেন ধোনি।
ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩১৪ ক্যাচ এবং ১২০ স্টাম্পিং করা ধোনি আসন্ন বিশ্বকাপেও ভারতীয় দলের প্রাণ ভোমরা হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় আসন্ন বিশ্বকাপ শেষেই ধোনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন বলে অনেকেই ধারণা করছেন।