ছয় ওভারের স্পেল। দ্বিতীয় ওভারে শুধু উইকেট পাননি। বাকি পাঁচ ওভারেই মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন নিয়েছেন একটি করে উইকেট। তার আগুনে বোলিংয়ে পুড়েছে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব।
সাইফউদ্দিনের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে জয় দিয়ে ওয়ালটন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগ শুরু করেছে আবাহনী লিমিটেড। মিরপুরে সোমবার দোলেশ্বরকে ১৬৫ রানে হারিয়েছে লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১২ রানে ৩ উইকেট হারালেও ওয়াসিম জাফর ও নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটি এবং মোহাম্মদ মিথুনের চল্লিশোর্ধ ইনিংস আবাহনীকে এনে দিয়েছিল ২৫১ রানের পুঁজি। জবাবে দোলেশ্বর গুটিয়ে যায় ৮৬ রানেই, ২৯ ওভার ৪ বলে!
ইনিংসের তৃতীয় বলে ইমরান উজ্জামানকে উইকেটের পেছনে জহুরুল ইসলামের ক্যাচ বানিয়ে ধ্বংসযজ্ঞের শুরুটা করেছিলেন সাইফউদ্দিন। ডানহাতি পেসার নিজের পরের ওভারে ১ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি।
এরপর তিনি টানা চার ওভারে নিয়েছেন একটি করে উইকেট। তার শিকারে পরিণত হন যথাক্রমে সৈকত আলী, ফরহাদ হোসেন, মার্শাল আইয়ুব ও সাইফ হাসান। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন শুধু ফরহাদ (১১ ) ও সাইফ (১৩)।
তখন ৩৪ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে দোলেশ্বর। এরপর আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি তারা। ছয় ওভারের স্পেলের পর সাইফউদ্দিন অবশ্য আর বল হাতে নেননি। দোলেশ্বরের মিডল ও লোয়ার অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়েছেন আবাহনী স্পিনাররা।
পরের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মাহমুদুল হাসানের অপরাজিত ২৭ রানই দোলেশ্বরের ইনিংসে সর্বোচ্চ। দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেনই আর মাত্র একজন- এনামুল হক জুনিয়র (১৪)।
৬ ওভারে দুটি মেডেনে মাত্র ৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাইফউদ্দিন। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এর আগে কখনো ৪ উইকেটই ছিল না তার। ২৩ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলাম। আরেক বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু ও অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ নিয়েছেন একটি করে উইকেট। একটি উইকেট পেয়েছেন সৌম্য সরকারও।
মাশরাফি বিন মুর্তজা ৪ ওভারে ১৯ রানে উইকেটশূন্য ছিলেন। তাতে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার ৪০০ উইকেটের অপেক্ষাও বেড়েছে। ৩৯৯ উইকেটে থমকে থাকা মাশরাফি টানা তিন ম্যাচে উইকেট পেলেন না কোনো।
এর আগে সকালে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আবাহনীর শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। তিন ওভারের মধ্যেই তারা হারায় দুই ওপেনারকে। জহুরুল ইসলামকে ফরহাদ রেজা ও সৌম্য সরকারকে ফেরান আবু জায়েদ রাহী।
ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে তিন নম্বরে নামা মিরাজও টিকতে পারেননি। পঞ্চম ওভারে মিরাজও জায়েদের শিকার। প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের কেউই দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। তখন ১২ রানেই ৩ উইকেট নেই আবাহনীর।
চ্যাম্পিয়নরা সেই ধাক্কা সামলে ওঠে জাফর ও শান্তর ব্যাটে। চতুর্থ উইকেটে এই দুজন গড়েন ১৪৬ রানের বড় জুটি। সেঞ্চুরির সুযোগ হারিয়েছেন দুজনই। ভারতীয় ব্যাটসম্যান জাফর ৯৭ বলে ৬ চারে ৭১ রানে ফিরলে ভাঙে জুটি। এরপর শান্ত ফেরেন ৮৩ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৭০ রান করে।
অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন ও সাইফউদ্দিন টিকতে পারেননি। অষ্টম উইকেটে মাশরাফির সঙ্গে ৩৯ রানের জুটিতে দলকে আড়াইশর কাছে নিয়ে যান মিথুন। তবে ৪ রানের মধ্যে শেষ ৩ উইকেট হারিয়ে এক ওভার বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় আবাহনী। মিথুন ৪৬ বলে ৩ চারে ৪১ ও মাশরাফি ২১ বলে ৪ চারে করেন ২৪ রান।
পরে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচের নায়ক সাইফউদ্দিন। ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও উঠেছে তার হাতেই।