সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে সফরকারী ভারত। আর এ জয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করলো বিরাট কোহলিরা। ২০০৯ সালের পর আবারও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতলো ভারত।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে অনুষ্ঠিত সিরিজে টিকে থাকার তৃতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় নিউজিল্যান্ড। বল হাতে পেয়ে এ ম্যাচেও নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের শুরুতে চেপে ধরে ভারতের উদ্বোধনী পেসার ভুবেনশ্বর কুমার ও মোহাম্মদ সামি।
২৬ রানের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনারকে বিদায় দেন ভুবেনশ্বর ও সামি। মার্টিন গপাটিল ১৩ রান করে ভুবেনশ্বরের ও কলিন মুনরো ৭ রানে সামির শিকার হন।
দুই ওপেনারকে হারানোর পর শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টা করেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও রস টেইলর। বড় জুটি গড়ার ইঙ্গিত দিলেও তাদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান ভারতের স্পিনার যুজবেন্দ্রা চাহাল। উইলিয়ামসনকে ২৮ রানে থামিয়ে দেন চাহাল। তবে এই আউটের পেছনে বড় অবদান ছিলো সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফেরা হার্ডিক পান্ডিয়ার। মিড-উইকেটে ফিল্ডিং করা পান্ডিয়া বা-দিকে ঝাপিয়ে দুর্দান্ত একটি ক্যাচ নিলে ২৮ রানে থেমে যান উইলিয়ামসন।
দলীয় ৫৯ রানে উইলিয়ামসন ফিরে যাওয়ার পর ভারতীয় বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন টেইলর ও উইকেটরক্ষক টম লাথাম। দু’জনের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডের দলীয় স্কোর দেড়শ’ ছাড়িয়ে যায়। বড় স্কোরের ভিত পায় নিউজিল্যান্ড। এমন সময় ভারতকে দুর্দান্ত এক ব্রেক-থ্রু এনে দেন চাহাল। ৫১ রান করা লাথামকে শিকার করেন তিনি।
চাহালের এ শিকারের পর নিউজিল্যান্ডের মেরুদণ্ডে জোড়া আঘাত হানেন পান্ডিয়া। অন্যপ্রান্ত দিয়ে নিউজিল্যান্ডের মিডল-অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান হেনরি নিকোলসকে ৬ ও মিচেল স্যান্টারকে ৩ রানে বিদায় করেন পান্ডিয়া। এতে ৬ উইকেটে ১৯৮ রানে পরিণত হয় নিউজিল্যান্ড।
এ অবস্থায় এক প্রান্ত আগলে রেখে সেঞ্চুরির পথেই হাটচ্ছিলেন টেইলর। কিন্তু তার দুুভার্গ্য, নার্ভাস নাইন্টিতে থামেন তিনি। ৯টি চারে ১০৬ বলে ৯৩ রান করে ভারতের সামির শিকার হন টেইলর।
টেইলরের বিদায়ের পর ডগ ব্রেসওয়েল ১৫ ও ইশ সোধি ১২ রানের ছোট ইনিংস খেললে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২৪৩ রানের পুঁজি পায় নিউজিল্যান্ড। ভারতের পক্ষে সামি ৩টি, ভুবেনশ্বর-চাহাল-পান্ডিয়া ২টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ জিতলেই সিরিজ জয় -এমন সমীকরণে ২৪৪ রানের টার্গেটে খেলতে নামে ভারত। উদ্বোধনী জুটিতে ৩৯ রানের সূচনা পায় ভারত। এর মধ্যে ২৮ রান অবদান রেখে ফিরে যান ওপেনার শিখর ধাওয়ান।
ধাওয়ানের বিদায়টা চাপে ফেলতে পারেনি আরেক ওপেনার রোহিত শর্মা ও অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে। দ্বিতীয় উইকেটে রোহিত ও কোহলি স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করে ভারতের জয়ের পথ মসৃন করেন। তবে দলীয় স্কোর দেড়শ’ পার হবার পর ১৬ রানের ব্যবধানে থেমে যান রোহিত ও কোহলি। ততক্ষণে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন দু’জনই। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৭ বলে রোহিত ৬২ ও ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭৪ বলে ৬০ রান করেন কোহলি। দ্বিতীয় উইকেটে ১২৩ বলে ১১৩ রান দলকে এনে দেন রোহিত-কোহলি জুটি।
দলীয় ১৬৮ রানে রোহিত ও কোহলির বিদায়ের পর ভারতের হাল ধরেন আম্বাতি রাইদু ও দিনেশ কার্তিক। তখন জয় থেকে ৭৬ রান দূরে দাঁড়িয়ে ভারত। দলের এ প্রয়োজন বেশ সহজেই মিটিয়েছেন রাইদু ও কার্তিক। চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৭৭ রানের জুটি গড়ে ভারতকে ম্যাচ ও সিরিজ জয়ের স্বাদ দেন তারা।
রাইদু ৪২ বলে ৪০ ও কার্তিক ৩৮ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন। দু’জনের ইনিংসেই সমান ৫টি করে চার ও ১টি ছক্কার মার ছিলো। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভারতের সামি।
হ্যামিল্টনে আগামী ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড : ২৪৩/১০, ৪৯ ওভার (টেইলর ৯৩, লাথাম ৫১, সামি ৩/৪১)।
ভারত : ২৪৫/৩, ৪৩ ওভার (রোহিত ৬২, কোহলি ৬০, বোল্ট ২/৪০)।
ফল : ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মোহাম্মদ সামি (ভারত)।
সিরিজ : পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত।