যুজবেন্দ্রা চাহালের বোলিং ধাপটের পর ব্যাট হাতে সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির অপরাজিত ৮৭ রানের কল্যাণে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে কোহলির ভারত। আর জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ২-১ এ সিরিজ নিশ্চিতসহ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মত ওয়ানডে সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়লো ভারত।
টেস্ট সিরিজ জয় করে ইতিহাস গড়ার পর ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে হেরে যায় ভারত। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৯৯ রানের টার্গেট টপকে ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় ভারতের।
শুক্রবার তৃতীয় ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বল হাতে পেয়েই ভারতকে ভালো শুরু এনে দেন পেসার ভুবেনশ্বর কুমার। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার অ্যালেক্স ক্যারিকে ৫ রানে ফেরান ভুবি। আরেক ওপেনার ও অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ এবারও ব্যর্থ বড় ইনিংস খেলতে।
ভুবেনশ্বরের দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ১৪ রান করেন ফিঞ্চ। এই সিরিজের তিন ম্যাচেই ভুবেনশ্বরের শিকার হলেন ফিঞ্চ। ২৭ রানে দুই ওপেনারকে ফেরানোর পর দলের হাল ধরেন উসমান খাজা ও শন মার্শ। তৃতীয় উইকেটে ৭৩ রানের জুটি গড়েন তারা। ভারতের লেগ-স্পিনার যুজবেন্দ্রা চাহালের ঘুর্ণিতে বিদায় নেন খাজা ও মার্শ। খাজা ৩৪ ও মার্শ ৩৯ রান করেন।
সিরিজের প্রথম দু’ম্যাচে সাইড-বেঞ্চে ছিলেন চাহাল। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে দলে সুযোগ পেয়েই নিজের কারিশমা দেখান তিনি। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার আরও চার উইকেট তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষের বড় স্কোরের পথ বন্ধ করে দেন চাহাল। ১০ ওভার বল করে ৪২ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন চাহাল।
৩৫ ম্যাচের ওয়ানডেতে দ্বিতীয়বারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং ফিগার দাঁড় করান চাহাল। সেই সাথে রেকর্ড বইয়ে নিজের নামও তুলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোন স্পিনারের সেরা বোলিং ফিগার এটি। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যেকোন বোলারের ক্ষেত্রে যৌথভাবে সেরা বোলিং ফিগারও তার।
চাহালের ঘুর্ণিতে পড়ে ইনিংসের ৮ বল বাকি থাকতে ২৩০ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান পিটার হ্যান্ডসকম্বের হাফ-সেঞ্চুরিতে সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছায় অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ২টি চারে ৬৩ বলে ৫৮ রান করেন হ্যান্ডসকম্ব। এছাড়া গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ২৬, জেই রিচার্ডসন ১৬ ও পিটার সিডল অপরাজিত ১০ রান করেন। চাহাল ছাড়াও ভারতের পক্ষে ২টি করে উইকেট শিকার করেছেন ভুবেনশ্বর ও মোহাম্মদ সামি।
জয়ের জন্য ২৩১ রানের টার্গেটে সতর্কতার সাথেই শুরু করেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। তবে এই জুটি ১৫ রানে বেশি করতে পারেনি। রোহিতকে ৯ রানে থামিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার পিটার সিডল।
এরপর অধিনায়ক কোহলিকে নিয়ে দলের স্কোর বড় করছিলেন ধাওয়ান। তবে তাদের ব্যাটিং ছিল ধীর গতির। ১৬ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৫৭ রান। ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ধাওয়ানকে থামান অস্ট্রেলিয়ার পেসার মার্কাস স্টোয়িনিস। ৪৬ বলে ২৩ রান করেন ধাওয়ান।
ধাওয়ানের বিদায়ের ক্রিজে কোহলির সঙ্গী হন সাবেক অধিনায়ক ধোনি। এই জুটিতে রান তোলার কাজটা বেশি করেছেন ধোনি। তবে বেশ ধীরলয়ে। দলের স্কোর শতরানের কোটা পার করে বিচ্ছিন্ন ধোনি-কোহলি। ৩টি চারে ৬২ বলে ৪৬ রান করা কোহলিকে থামান অস্ট্রেলিয়ার পেসার জেই রিচার্ডসন। ধোনি-কোহলি জুটি ৮২ বল মোকাবেলা করে ৫৪ রান যোগ করেন।
১১৩ রানে ভারতের তৃতীয় উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরার পথ দেখতে পায় অস্ট্রেলিয়া। কারণ ঐ সময় জয়ের জন্য ২০ ওভারে ১১৮ রান প্রয়োজন পড়ে ভারতের। হাতে ছিল ৭ উইকেট।
এ অবস্থায় ভারতের মিডল-অর্ডারে ধস নামাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন অস্ট্রেলিয়ার বোলারার। কিন্তু পাঁচ নম্বরে নামা কেদার যাদবকে নিয়ে ভারতের রানের চাকা ঘুড়াতে থাকেন ধোনি। এক পর্যায়ে এই সিরিজে টানা তৃতীয় ও ৩৩৫ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৭০তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ধোনি।
ধোনির ব্যাটিং নৈপুণ্যে সাহস বেড়ে যায় যাদবের। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের আধিপত্য বিস্তার করার কোন সুযোগই দেননি যাদব। ধোনির সাথে রান তোলার কাজটা ভালোভাবেই করতে থাকেন যাদব। শেষ ৫ ওভারে ৪৪ রান প্রয়োজন পড়ে ভারতের। তবে হাতে উইকেট থাকায় এই রান তোলাটা কোন বিষয়ই ছিল না ভারতের জন্য। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে।
শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে ভারতকে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন যাদব। ৬টি চারে ১১৪ বলে ৮৭ রানে অপরাজিত থেকে বীরের বেশে মাঠ ছাড়েন একবার ক্যাচ দিয়ে জীবন পাওয়া ধোনি। ৭টি চারে ৫৭ বলে ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন যাদব।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন যাদব। চতুর্থ উইকেটে ধোনি-যাদব ১১৫ বলে ১২১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভারতের চাহাল এবং সিরিজ সেরা হন একই দলের ধোনি। সিরিজে তিন ম্যাচে ৩টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৯৩ রান করেছেন ধোনি।
এ সিরিজ জয়ের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজও ২-১ ব্যবধানে জিতে ইতিহাস গড়েছে ভারত। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর এবার অস্ট্রেলিয়ার সাথে তিনটি টি-২০ ম্যাচ খেলবে ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া : ২৩০/১০, ৪৮.৪ ওভার (হ্যান্ডসকম্ব ৫৮, শন মার্শ ৩৯, চাহাল ৬/৪২)।
ভারত : ২৩৪/৩, ৪৯.২ ওভার (ধোনি ৮৭*, যাদব ৬১*, রিচার্ডসন ১/২৭)।
ফল : ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।