ঢাকার দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে ৪ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে তিন ম্যাচ সিরিজের ১-১ এ সমতায় ফিরলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
মঙ্গলবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের দেওয়া ২৫৬ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন এই ম্যাচেই একাদশে সুযোগ পাওয়া চন্দ্রপল হেমরাজ (৩)। এরপর অবশ্য জুটি গড়ে তোলেন শাই হোপ আর ড্যারেন ব্র্যাভো। ব্র্যাভোকে (২৭) বোল্ড করে দিয়ে ৬৫ রানের এই জুটি ভাঙেন রুবেল হোসেন। অপর ওপেনার শাই হোপ ৬৭ বলে ৩ চার ২ ছক্কায় ক্যারিয়ারের ৮ম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন। তার ব্যাটেই এগিয়ে যেতে থাকে সফরকারীরা।
স্যামুয়েলসের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে হোপের জুটি জমে যায়। ২৬ রান করা স্যামুয়েলস 'কাটার মাস্টার' মুস্তাফিজুর রহমানের বলে মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়লে ৬২ রানের জুটির সমাপ্তি হয়। বিপজ্জনক হেটমায়ার (১৪) ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠার আগেই তাকে থামিয়ে দেন রুবেল। উইন্ডিজ অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলকে শিকার করেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। তার বলে সৌম্য সরকারের তালুবন্দি হন ১ রান করা পাওয়েল। মুস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকার রোস্টন চেইস। তামিম ইকবালের অসাধারণ ক্যাচে ৯ রান ফিরেন এই ব্যাটসম্যান।
এর মাঝেই ঠাণ্ডা মাথায় ১১৮ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন শাই হোপ। ম্যাচে ছড়িয়ে পড়ে টানটান উত্তেজনা। কিছুতেই এই ওপেনারকে থামানো যাচ্ছিল না। ৪৮তম ওভারে রুবেলকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১২৫* রান টপকে যান হোপ। ১৩১ রানে তার ক্যাচ ছাড়েন বদলি ফিল্ডার নাজমুল। এর আগে তিনি কিমো পলের ক্যাচও ছেড়েছিলেন। এই হোপ-পলের ৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতেই ২ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে জিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৪৪ বলে ১২ চার ৩ ছক্কায় ১৪৬ রানে অপরাজিত থাকেন হোপ। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন কিমো পল (১৮*)।
এর আগে আজ মঙ্গলবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫৫ রান তোলে বাংলাদেশ। শুরুতেই পেসার ওশান টমাসের একটি ইয়র্কার ফ্লিক করতে করতে গিয়ে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন লিটন দাস। যদিও পরে তিনি নেমেছেন। তিন নম্বরে নামা ইমরুল ৬ বল খেলে কোনো রান না করেই থমাসের বলে ক্যাচ দেন উইকেটকিপার শাই হোপের গ্লাভসে। এরপর বাংলাদেশকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দেয় তামিম-মুশফিকের জুটি। তৃতীয় উইকেটে ১১১ রান যোগ করেন তারা। দুজনেই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।
তামিম ইকবাল ৬৩ বলে ৪ চার এবং ১ ছক্কায় ৫০ রানে দেবেন্দ্র বিশুর শিকার হলে ভাঙে এই জুটি। প্রায় ছক্কা হতে যাওয়া বলটি ডিপ মিড উইকেটের সীমানার ওপর থেকে দুর্দান্তভাবে তালুবন্দি করেন কেমার রোচ। ইনিংস লম্বা করতে পারেননি মুশফিকও। তার ৮০ বলে ৬২ রানের থামে ওশান টমাসের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে গ্লাইড করতে গিয়ে। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় কিপারের গ্লাভসে। দলের হাল ধরেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। জমে ওঠে জুটি। ভালো খেলতে খেলতেই পাওয়েলের বলে বাজে শটে মাহমুদউল্লাহ (৩০) ক্যাচ তুলে দিলে ৬১ রানের দারুণ জুটির অবসান হয়।
মাহমুদউল্লাহ আউট হওয়ার পর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আউট হন সৌম্য সরকার। বাজে শটে বিশু তালুবন্দি হয়ে ব্যক্তিগত ৬ রানে থমাসের তৃতীয় শিকার হয়েছেন তিনি। এরপরই আবারও মাঠে নামেন চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া ওপেনার লিটন দাস। তবে তিনি ইনিংস বড় করতে পারেননি। কিমো পলের বলে ক্যাচ দিয়েছেন ব্যক্তিগত ৮ রানে। এর মাঝেই ৫৪ বলে ৪ চার এবং ১ ছক্কায় ক্যারিয়ারের ৪০তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
ইনিংসের শেষ দিকে রানের গতি বাড়াতে গিয়ে কেমার রোচের বলে বোল্ড হয়ে যান সাকিব। ৬২ বলে ৬ চার ১ ছক্কায় সাজানো ছিল তার ৬৫ রানের ইনিংস। সুযোগ পেয়েও ঝড় তুলতে পারেননি মাশরাফিও। অপরাজিত ছিলেন ১১ বলে ৬ রান করে। সিরিজে প্রথমবারের মতো ব্যাটিংয়ে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজ ১০ রানে অপরাজিত থাকেন। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫৫ রানে থামে বাংলাদেশ। থমাস ৩ উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন কেমার রোচ, কিমো পল, দেবেন্দ্র বিশু এবং রোভম্যান পাওয়েল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ম্যাচে জয় পাওয়ায় সিরিজে ১-১ সমতা এসেছে। ফলে ১৪ ডিসেম্বর শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য শেষ ওয়ানডে হবে অঘোষিত ফাইনাল। ওই ম্যাচেই নির্ধারিত হবে সিরিজ।