ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকারের জোড়া সেঞ্চুরিতে চতুর্থবারের মতো ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ। শুক্রবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ৭ উইকেটে হারায় টাইগাররা। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতে নিলো মাশরাফির দল।
প্রথম দুই ম্যাচের পর তৃতীয় ওয়ানডেতেও টস ভাগ্যে জয় পান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনটি পরিবর্তন এনে শেষ ওয়ানডের জন্য একাদশ সাজানো হয়। প্রথম দু’ম্যাচে শূন্য রানে ফেরা ফজলে মাহমুদ, মেহেদি হাসান মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমানকে রাখা হয়নি দলে। তাদের জায়গায় একাদশে ঢুকেছিলেন আরিফুল হক, আবু হায়দার ও সৌম্য সরকার। আর এ ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে অভিষেক হলো আরিফুলের।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে দিবা-রাত্রির ম্যাচে বাংলাদেশ তিনটি পরিবর্তন করলেও দু’টি পরিবর্তন নিয়ে টস হেরে প্রথমে ব্যাট হাতে নেমেই বিপাকে পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ৬ রানের ব্যবধানে প্যাভিলিয়নে ফিরেন সফরকারী দুই ওপেনার অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও চেপাস ঝুয়াও। দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে ঝুয়াওকে বোল্ড করেন মিডিয়াম পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। শূন্য হাতে ফিরেন ঝুয়াও। পরের ওভারে জিম্বাবুয়ে শিবিরে আঘাত হানেন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার আবু হায়দার। ২ রান করা মাসাকাদজাকে শিকার করেন আবু হায়দার।
শুরুতে জোড়া ধাক্কায় ভড়কে যাননি দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর ও সিন উইলিয়ামস। শুরুতে উইকেটে সেট হয়ে স্কোর বোর্ডকে শক্ত করতে থাকেন টেইলর ও উইলিয়ামস। ফলে ২১তম ওভারেই ১শ’ রান পূর্ণ করে জিম্বাবুয়ে।
এ জুটি ভাঙ্গতে সাতজন বোলার ব্যবহার করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। অবশেষে দলীয় ১৩৮ রানে বিচ্ছিন্ন হন টেইলর ও উইলিয়ামস। ৭৫ রান করা টেইলরকে থামান বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার নামজুল ইসলাম। ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৭২ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান টেইলর। আগের ম্যাচেও ৭৫ রানে আউট হয়েছিলেন টেইলর। তৃতীয় উইকেটে ১৪৫ বলে ১৩২ রান যোগ করেন টেইলর ও উইলিয়ামস।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে টেইলর ফিরলেও দলের রান বড় করার দায়িত্ব পালন করছিলেন উইলিয়ামস। সাথে সঙ্গী হিসেবে পান সিকান্দার রাজা। দলের স্কোর বড় করার কাজটা দায়িত্ব সহকারেই করছিলেন এ জুটি। এর মাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১২২তম ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির স্বাদ নেন উইলিয়ামস। ২০১৫ সালের অক্টোবরের পর তিন অংকে পা দিলেন তিনি।
রাজার সাথে চতুর্থ উইকেটে ৯৩ বলে ৮৪ ও পিটার মুরের সাথে ৪৩ বলে ৬২ রান যোগ করেন উইলিয়ামস। ফলে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৮৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় জিম্বাবুয়ে। রাজা ৫১ বলে ৪০ ও মুর ২১ বলে ২৮ রান করেন। ইনিংসের শেষ অবধি অপরাজিত ছিলেন উইলিয়ামস। ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৪৩ বলে ১২৯ রান করেন উইলিয়ামস। এটিই তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। বাংলাদেশের পক্ষে নাজমুল ৫৮ রানে ২ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে ২৮৭ রানের টার্গেট দেয় জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৮৭ রানের বেশি টার্গেট স্পর্শ একবারই করেছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে ৩১২ রানের টার্গেটে ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ।
তবে ২৮৭ রানের টার্গেটের শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। নিজেদের ইনিংসের প্রথম বলেই ফিরে যান ওপেনার লিটন দাস। লিটনকে শূন্য হাতে ফেরান জিম্বাবুয়ের পেসার কাইল জার্ভিস। শুরুতে উইকেট হারানোকে আমলে নেননি আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েস ও প্রথমববারের মত সিরিজে সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকার। ৬ দশমিক ৫ ওভারে দলের স্কোর ৫০ রান স্পর্শ করেন ইমরুল ও সৌম্য।
এরপর শতরানে দলকে পৌছে দিতে খুব বেশি সময় নেননি ইমরুল ও সৌম্য। ১৬ দশমিক ২ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর শতরানে পৌছে যায়। এরমধ্যে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ইমরুল। হাফ-সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন সৌম্যও। অবশেষে আট ইনিংস ও প্রায় দেড় বছর পর হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান সৌম্য।
৫৪ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পরও দাপটের সাথে রান তুলেছেন সৌম্য। ফলে ৮১তম বলেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে ফেলেন সৌম্য। ২০১৫ সালের এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারে তার প্রথম সেঞ্চুরির ইনিংস ছিল ১২৭ রানের।
শেষ পর্যন্ত ১১৭ রানে থেমে যান সৌম্য। তার ৯২ বলের ইনিংসে ৯টি চার ও ৬টি ছক্কার মার ছিল। দ্বিতীয় উইকেটে ১৭৯ বলে ২২০ রানের জুটি গড়েন ইমরুল ও সৌম্য। সৌম্যর বিদায়ের পর ৯৯তম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরির তুলে নেন ইমরুল। শেষ পর্যন্ত ১১৫ রানে থামেন তিনি। ১১২ বল মোকাবেলা করে ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান ইমরুল।
দলীয় ২৭৪ রানে ইমরুল ফিরে যাবার পর ৪৭ বল হাতে রেখেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিথুন। মুশি ২৮ ও মিথুন ৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
ওয়ানডে সিরিজ শেষে আগামী ৩ নভেম্বর থেকে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে।