এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ১৪তম আসরে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে মর্যাদার লড়াইয়ে জিতলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে চিরপ্রতিন্দ্বন্দি ভারত। এ জয়ে গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ চারে খেলতে নামবে ভারত। আর গ্রুপ রানার্স-আপ হয়ে শেষ চারে খেলবে পাকিস্তান।
দুবাইয়ে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয় ভারত ও পাকিস্তান। শেষ চার নিশ্চিত থাকায় পরের রাউন্ডে উঠার কোন ঝক্কি-ঝামেলা নেই। তবে এটি দু’দলের কাছে মর্যাদার লড়াই। তাই জয় ছাড়া অন্য কোন লক্ষ্যই ছিলো না তাদের। টস জিতেই প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের। বল হাতে পেয়েই পাকিস্তানের ওপেনারদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন ভারতের দুই পেসার ভুবেনশ্বর কুমার ও জসপ্রিত বুমরাহ।
ইনিংসের তৃতীয় ও পঞ্চম ওভারে পাকিস্তান শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন ভুবেনশ্বর। দু’ওপেনারকে বিদায় দেন ভুবি। ইমাম উল হক ২ ও ফখর জামান শূন্য হাতে ফিরেন। ৩ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে যায় পাকিস্তান। সেখান থেকে দলকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন বাবর আজম ও শোয়েব মালিক। উইকেটের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে রান তোলায় মনোযোগ দেন তারা। নিজেদের পরিকল্পনায় সফলও হন পাকিস্তানের দুই মিড-অর্ডার ব্যাটসম্যান। ফলে বাবর ও মালিকের ব্যাটিং দৃঢ়তায় শতরানের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে পাকিস্তানের স্কোর।
কিন্তু শতরানের পৌছানোর আগেই বাবর ও মালিকের জুটিতে ভাঙ্গন ধরান ভারতের বাঁ-হাতি স্পিনার কুলদীপ যাদব। ৪৭ রানে থাকা বাবরকে বোল্ড করেন কুলদীপ। ৬২ বল মোকাবেলা করে ৬টি চারে নিজের ইনিংসটি সাজান বাবর। মালিকের সাথে ১০৩ বলে ৮২ রান যোগ করেন বাবর।
বাবরের বিদায়ের পর ভয়ংকর হয়ে উঠেন ভারতের অকেশনাল বোলার কেদার যাদব। ২৫ রানের ব্যবধানে পাকিস্তানের মিডল-অর্ডারের ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি। এরমধ্যে আরও একটি উইকেটের পতন হয়, সেটি রান আউট। কেদারের শিকার হন পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ, আসিফ আলি ও শাদাব। সরফরাজ ৬, আসিফ ৯ ও শাদাব ৮ রানে আউট হন। আর রান আউটের ফাঁদে পড়েন মালিক। ১টি করে চার ও ছক্কায় ৬৭ বলে ৪৩ রান করেন মালিক।
১২১ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে বড় স্কোরের আশা শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানের। তারপরও দলকে সম্মানজনক স্কোর এনে দিতে অষ্টম উইকেটে লড়াই করার চেষ্টা করেন পাকিস্তানের লোয়ার-অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান ফাহিম আশরাফ ও মোহাম্মদ আমির। তবে ভারতের পেসার বুমরাহ’র শিকার হয়ে আমিরের সাথে বড় জুটি গড়তে পারেননি ফাহিম। ২টি চারে ৪৪ বলে ২১ রান করে থেমে যান ফাহিম।
এরপর পাকিস্তানের শেষ দু’ব্যাটসম্যান অপরপ্রান্তে থাকা আমিরকে সঙ্গ দিতে না পারলে ১৬২ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। তখনও ইনিংসের ৪১ বল বাকি ছিলো। ২৬ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন আমির। ভারতের ভুবেনশ্বর ও কেদার ৩টি করে, বুমরাহ ২টি এবং কুলদীপ ১টি উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৬৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরু থেকে দেখেশুনে খেলতে থাকেন ভারতের দুই ওপেনার অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। প্রথম ৬ ওভার থেকে মাত্র ১৭ রান যোগ করতে পারেন তারা। উইকেটে সেট হয়ে ধীরে ধীরে মারমুখী হয়ে উঠেন রোহিত। এতে নবম ওভারের চতুর্থ বলে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেয় ভারত।
দলকে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ দিয়ে রোহিত নিজেও দেখা পান অর্ধশতকের। নিজের ৩৬তম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৫তম ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান রোহিত। হাফ-সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি ভারত দলপতি। ৫২ রানে থেমে যান রোহিত। তাকে বোল্ড করে পাকিস্তানকে প্রথম সাফল্য এনে দেন লেগ-স্পিনার শাদাব খান। ৩৯ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান রোহিত।
দলীয় ৮৬ রানে অধিনায়ককে হারিয়ে ভড়কে যাননি ভারতের আরেক ওপেনার ধাওয়ান। রান তোলার দায়িত্বটা নিজ কাঁধে তুলে নেন তিনি। কিন্তু দলীয় ১০৪ রানে পাকিস্তানের পেসার ফাহিম আশরাফের শিকার হন ধাওয়ান। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৪ বলে ৪৬ রান করেন আগের দিন হংকং-এর বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা ধাওয়ান।
৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন আম্বাতি রাইদু ও দিনেশ কার্তিক। দু’জনই ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন।