টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলেও সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় করলো বাংলাদেশ। তানজিদ হাসান তামিমের ঝলমলে ইনিংসের উপর ভর করে সিরিজের শেষ ও তৃতীয় ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে জয় পেয়েছে টাইগাররা। এ জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করলো বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের কনকাশন সাব হিসেবে সুযোগ পেয়েই ব্যাট হাতে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেছেন তানজিদ তামিম।
সোমবার (১৮ মার্চ) চট্টগ্রামে সিরিজের শেষ ম্যাচেও টস ভাগ্যে জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বেলা ১০টায় শুরু হওয়া ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের তোপের মুখে শেষ বলে গুটিয়ে যাওয়ার আগে ২৩৬ রানের সংগ্রহ গড়েছিল লঙ্কানরা। দলের বাকি ব্যাটাররা ব্যর্থ হলেও সাত নম্বরে নেমে ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন লঙ্কার ব্যাটিং অলরাউন্ডার জেনিথ লিয়ানাগে।
জবাবে সৌম্য সরকারের কনকাশন সাবের সুযোগে ব্যাট করতে নামা তানজিদ হাসান তামিমের ৮৪ এবং শেষ দিকে রিশাদ হোসেনের ঝড়ো ইনিংসে ব্যাটিংয়ে (৪৮*) ৫৮ বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
এর আগে ২০২১ সালের মে’তে দু’দলের মুখোমুখি হওয়া সর্বশেষ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও শ্রীলঙ্কাকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। পাশাপাশি ২০২৩ সালের মে মাসের পর এবং তিনটি সিরিজ পর আবারও দ্বিপাক্ষীক সিরিজ জিতলো টাইগাররা।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে জানিথ লিয়ানাগের সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৩৫ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ফিল্ডিংয়ের সময় ইনজুরিতে পড়া সৌম্য সরকারের কনকাশন বদলি তানজিদের ৮৪ ও রিশাদের ১৮ বলে অপরাজিত ৪৮ রানে ৫৮ বল বাকী থাকতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে ৮ ওভারে ৫০ রানের সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও তানজিদ। পেসার প্রমোদ মদুশানের করা চতুর্থ ওভারে ১৫ এবং ষষ্ঠ ওভারে লাহিরু কুমারার বলে ১৩ রান নেন তানজিদ। অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন কুমারা। সাবধানে খেলতে থাকা বিজয় ২২ বলে ১২ রান করে আউট হন। এক ওভার পর আবারও বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানেন কুমারা। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে (১ ) ফেরান তিনি।
৫৬ রানে ২ উইকেট পতনের পর বড় জুটির চেষ্টা করেন তানজিদ ও তাওহিদ হৃদয়। এই জুটিতেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ৫১ বল খেলা তানজিদ। ধীরে ধীরে হাফ-সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাওয়া জুটিতে ভাঙ্গন ধরান কুমারা। ২২ রান করা হৃদয়কে নিজের তৃতীয় শিকার বানান তিনি। ৬৮ বলে ৪৯ রান যোগ করেন তানজিদ ও হৃদয়।
দলীয় ১০৫ রানে হৃদয় ফেরার পর চাপ বাড়ে বাংলাদেশের। ১৭ রানের ব্যবধানে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও তানজিদ আউট হন। মাহমুদুল্লাহকে ১ রানে কুমারা ও সেঞ্চুরির পথে থাকা তানজিদকে ৮৪ রানে আউট করেন হাসারাঙ্গা। ৮১ বল খেলে ৯টি চার ও ৪টি ছক্কা মারেন তানজিদ।
এরপর ব্যক্তিগত ২৫ রানে মিরাজ ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে আউট হলে ম্যাচ নিয়ে চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ। কারন এ সময় ৪ উইকেট নিয়ে ৫৮ রান দরকার পড়ে টাইগারদের। ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সাথে মূল্যবান ৪৮ রান যোগ করেন মিরাজ। ৩৭তম ওভারে মিরাজ ব্যক্তিগত ২৫ রানে বিদায় নিলে ক্রিজে এসে নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বল থেকেই ঝড় তুলেন রিশাদ। হাসারাঙ্গার করা ওভারে ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন তিনি।
৩৯ ওভার শেষে ২৭ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। হাসারাঙ্গার করা ৪০তম ওভারে প্রথম দুই বলে ছক্কা এবং পরের তিন বলে তিনটি চারে ২৪ রান তুলে বাংলাদেশকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান রিশাদ। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি দিয়ে বাংলাদেশের ম্যাচ ও সিরিজ জয় নিশ্চিত করেন মুশফিক। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় মুশফিক ৩৬ বলে অনবদ্য ৩৭ এবং রিশাদ ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৮ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
হেরে যাওয়া ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কুমারা ৪টি উইকেট নেন। তবে বল হাতে ১ উইকেট নেওয়ার পর আট নম্বরে নেমে টনের্ডো ইনিংস খেলার সুবাদে ম্যাচ সেরা হন রিশাদ। তিন ম্যাচে ১৬৩ রান করে সিরিজ সেরা হন বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত।