দ্বিতীয় ওয়ানডেটি ছিল শ্রীলঙ্কার জন্য সিরিজ রক্ষার ম্যাচ। টস ভাগ্যেও সহায়তা পেয়েছিল লঙ্কান অধিনায়ক। বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ২৮৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পাথুম নিসাঙ্কার সেঞ্চুরি এবং চারিথ আসালাঙ্কা ৯১ রানের ইনিংসে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এ জয়ে ১-১ ব্যবধানে সিরিজে সমতায় ফিরলো লঙ্কানরা। ফলে সিরিজের শেষ ম্যাচটি এখন অঘোষিত ফাইনালে পরিণত হলো।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮৬ রানের সংগ্রহ গড়েছিল বাংলাদেশ। দলের পক্ষে ব্যাট হাতে সৌম্য সরকারের ৬৮ রানের পর তাওহিদ হৃদয় অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নিসাঙ্কার সেঞ্চুরি (১১৪) এবং চারিথ আসালাঙ্কা ৯১ রানের ইনিংসে ভর করে ১৭ বল বাকি রেখেই ৩ উইকেটে জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করে এবারও হতাশ করলেন লিটন দাস। প্রথম ওয়ানডেতে প্রথম বলে গোল্ডেন ডাকের পর এবার তৃতীয় বলে খালি হাতে সাজঘরে ফিরেন লিটন।
শ্রীলঙ্কার পেসার দিলশান মাদুশাঙ্কার বলে ফ্লিক করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে দুনিথ ওয়েলালাগেকে ক্যাচ দিলেন লিটন। ৯১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এ নিয়ে ১৪ বার শূন্য রানে আউট হলেন লিটন। এরমধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪বার। লিটনের বিদায়ে ক্রিজে আসেন আগের ম্যাচে অপরাজিত ১২২ রান করা বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দু’বার জীবন পান তিনি।
পেসার প্রমোদ মাদুশানের অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে নাজমুলের ক্যাচ ফেলেন পাথুম নিশাঙ্কা। ওভারের পঞ্চম বলে নাজমুলের ব্যাটে লেগে বল জমা পড়ে শ্রীলঙ্কার উইকেটরক্ষকের হাতে। কিন্তু তাতে কোন আবেদন করেননি শ্রীলঙ্কার ফিল্ডাররা।
দু’বার জীবন পেয়ে ওপেনার সৌম্য সরকারকে নিয়ে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী হন শান্ত।
জুটিতে ৭২ বলে ৭৫ রান আসার পর বিদায় নেন তিনি। মাদুশাঙ্কার বলে উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিসকে ক্যাচ দেন ৬টি চারে ৩৯ বলে ৪০ রান করা শান্ত। তৃতীয় উইকেটে শান্ত ফেরার পর তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে দলের রান ১শ পার করেন সৌম্য। এরই মধ্যে ৫২ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১২তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান সৌম্য।
হাফ-সেঞ্চুরির পরও দক্ষতার সাথেই ইনিংস বড় করার পথেই ছিলেন তিনি। কিন্তু শ্রীলঙ্কার স্পিনার হাসারাঙ্গা ডি সিলভার বলে রিভার্স সুইপ করে মাদুশাঙ্কাকে ক্যাচ দিয়ে আউট হলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৬ বলে ৬৮ রান করা সৌম্য ইনিংসের বিদায় ঘটে। হৃদয়ের সাথে ৫৪ বলে ৫৫ রান যোগ করেন সৌম্য।
এ ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের দশম ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ২ হাজার রান পূর্ণ করেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। সেই সাথে বাংলাাদেশের দ্রুততম ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ২হাজার রানের নতুন রেকর্ড গড়েন সৌম্য। সৌম্যকে ফেরানোর পর একই ওভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শুন্য হাতে হাসারাঙ্গার শিকার হলে ১৩০ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
একই ওভারে সৌম্য-মাহমুদুল্লাহর বিদায়ের পর বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম। এই জুটিও হাফ-সেঞ্চুরির পথে ছিলো। এমন অবস্থায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ান হাসারাঙ্গা। সুইপ করে বল ব্যাটে লাগাতে পারেনি ২৫ রান করা মুশফিক। শ্রীলংকার লেগ বিফোর আউটের আবেদন নাকচ করে দেন নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে মুশফিককে সাজঘরের পথ দেখায় শ্রীলংকা। হৃদয়-মুশফিক জুটিতে ৪৩ রান তুলেন তিনি।
সাত নম্বরে ক্রিজে এসে সুবিধা করতে পারেননি মেহেদি হাসান মিরাজ(১২)। হাসারাঙ্গার চতুর্থ শিকারে পরিনত হলে ১৮৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় টেল এন্ডার তানজিম হাসান সাকিবকে জুটি গড়ার পথে ওয়ানডেতে সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন হৃদয়। ৮ ইনিংস পর অর্ধশতক করতে ৭৪ বল খেলেন তিনি।
হৃদয়ের সাথে ৪৭ রান যোগ করে ব্যক্তিগত ১৮ রানে আউট হন তানজিম। তার বিদায়ের পর ইনিংসের শেষ ২৩ বলে ঝড় তুলেন হৃদয় ও তাসকিন আহমেদ। ২৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫০ রান যোগ করে বাংলাদেশকে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮৬ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ এনে দেন হৃদয় ও তাসকিন।
ইনিংসের শেষ দুই বলে দুই ছক্কা মেরে ৯৬ রানে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। ১০২ বলের ইনিংসে ৩টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন তিনি। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০ বলে অপরাজিত ১৮ রান করেন তাসকিন। শ্রীলঙ্কার হাসারাঙ্গা ৪৫ রানে ৪ উইকেট নেন।
শ্রীলঙ্কাকে ২৮৭ রানের টার্গেট দিয়ে বোলিংয়ে দুর্দান্ত শুরু পায় বাংলাদেশ। রানের খাতা খোলার আগেই লঙ্কান ওপেনার আবিস্কা ফার্নান্দোকে সাজঘরে ফেরত পাঠান পেসার শরিফুল ইসলাম। পরের ওভারে তানজিমের বলে কুশল মেন্ডিসের ক্যাচ ছাড়েন মিরাজ। জীবন পেয়ে ৩টি চার আদায় করে নেন কুশল।
তবে ষষ্ঠ ওভারে প্রথম আক্রমনে এসেই কুশলকে ১৬ রানে থামিয়ে দেন তাসকিন। পরের ওভারে বাংলাদেশকে তৃতীয় সাফল্য এনে দেন শরিফুল। সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ১ রানে আউট করেন শরিফুল। এমন অবস্থায় ৪৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে মহাচাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা।
এ অবস্থায় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও চারিথ আসালঙ্কা। ১৫তম ওভারে তানজিমের বলে লেগ বিফোর আউট হন নিশাঙ্কা। রিভিউ নিয়ে ৩৬ রানে জীবন পেয়ে ৫৮ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া নিশাঙ্কা। ছক্কা মেরে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ ৫০ বল খেলেন আসালঙ্কা।
২৯তম ওভারে শরিফুলের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন নিশাঙ্কা। কিন্তু নাজমুল মিস করলে ৭৩ রানে জীবন পান আসালঙ্কা। ৩২তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ১০০ বল খেলা নিশাঙ্কা। ৩৭তম ওভারে নিশাঙ্কাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন মিরাজ। আউট হওয়ার আগে ১৩টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১১৩ বলে ১১৪ রান করেন নিশাঙ্কা। আসালঙ্কা-নিশাঙ্কা ১৮৩ বলে ১৮৫ রানের জুটি গড়েন । যা চতুর্থ উইকেটে যেকোন দলের বিপক্ষে শ্রীলংকার সর্বোচ্চ রানের জুটি।
মিরাজের পর বাংলাদেশকে উইকেট শিকারে মাতান তাসকিন। আরেক সেট ব্যাটার আসালঙ্কাকে আউট করে বাংলাদেশের অষ্টম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ১শ উইকেট পূর্ণ করেন তাসকিন। ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৯৩ বলে ৯১ রান করেন আসালঙ্কা। ৭ রানের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটারকে হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা। এরপর লিয়ানাগে ৯ রানে আউট হলে, সপ্তম উইকেটে ৩৪ বলে ৩৪ রান যোগ করে শ্রীলঙ্কাকে জয়ের কাছে নিয়ে যান ওয়েলালাগে ও হাসারাঙ্গা।
জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে তাইজুলের বলে আউট হন মারমুখী মেজাজে থাকা হাসারাঙ্গা। ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৬ বলে ২৫ রান করেন ফিরেন তিনি। ৪৮তম ওভারের প্রথম বলে ২ রান নিয়ে শ্রীলংকার জয় নিশ্চিত করা ওয়েলালাগে শেষ পর্যন্ত ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন । বাংলাদেশের শরিফুল-তাসকিন ২টি করে, তানজিম-মিরাজ ও তাইজুল ১টি করে উইকেট নেন।