দেশের বিজয় দিবসের রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ম্যাচ জিতে ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলকে ১১৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। রান বিবেচনায় নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে টাইগ্রেসদের এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। এর আগের সর্বোচ্চ জয়টি ছিল ৮২ রানের। ২০১১ সালের নভেম্বরে সাভারের বিকেএসপিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের এ জয় পেয়েছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আগের ৮ ম্যাচের সবগুলোতেই হেরেছিল বাংলাাদেশ। নবম ম্যাচে এসে জয়ের দেখা পেল টাইগ্রেসরা। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৯ ওয়ানডেতে এটি তৃতীয় জয় বাংলাদেশের। ২০১২ সালে মিরপুরে ২ উইকেটে ও ২০১৭ সালে কক্সবাজারে ১০ রানে জিতেছিল টাইগ্রেসরা।
ইস্ট লন্ডনে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে ৮৬ বল খেলে ৬৬ রান যোগ করেন দুই ওপেনার শামিমা সুলতানা ও ফারজানা হক। ২৭তম ওভারে ১১০ রানের মধ্যে বিদায় নেন এ দু’জন। শামিমা ৩৪ ও ফারজানা ৩৫ রান করেন। তৃতীয় উইকেটে ৮৭ বলে ৮০ রান করেন মুর্শিদা খাতুন ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা। ৫টি চারে নিগার ৩৮ রানে আউট হলে ক্রিজে মুর্শিদার সঙ্গী হন স্বর্ণা আকতার।
চতুর্থ উইকেটে ৫৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬০ রান যোগ করে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের স্কোর আড়াইশতে নেন মুর্শিদা ও স্বর্ণা। ৫০ ওভারে ৩ উইকেটে ২৫০ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান। এর আগের ৭ উইকেটে ২৩৪ রানের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল। ২০২২ সালে হ্যামিল্টনে ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই স্কোর করেছিল টাইগ্রেসরা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর গড়ার ম্যাচে ১২টি চারে ১০০ বল খেলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯১ রান তুলে অপরাজিত থাকেন মুর্শিদা খাতুন। ২টি চারে ২৮ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন স্বর্ণা।
জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৫১ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়ে বল হাতে জ্বলে ওঠে বাংলাদেশের বোলাররা। ৯৫ রানে প্রোটিয়াদের আট ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরত পাঠায় নাহিদা আকতার-রাবেয়া খানরা। শেষ পর্যন্ত ৩৬.৩ ওভারে ১৩১ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন এলিজ মারি মাক্স।
৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের জয়ের বড় অবদান রাখেন গেল মাসে আইসিসির সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়া স্পিনার নাহিদা। এছাড়া সুলতানা খাতুন-রাবেয়া ও ফাহিমা ২টি করে উইকেট নেন।
বিজয়ের দিনে আসা জয়কে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের উৎসগ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক বলেন, “এ জয়টি অনেক বেশি আনন্দদায়ক, কারণ এটি এমন দিনে এসেছে যখন পুরো জাতি বিজয় উদযাপন করছে। আমরা এ বিজয়কে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে চাই।”