শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে অল্পতেই আটকে রাখে নিউজিল্যান্ড। স্বল্প রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমেও হারাতে হয়েছে ৫ উইকেট। তবে চাপহীন ম্যাচে সহজেই জয় তুলে নিয়ে সেমিফাইনালের আশা রইলো নিউজিল্যান্ড। তবে হারের স্বাদ নিয়ে ২০২৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শঙ্কায় পড়লো লঙ্কানরা।
বিশ্বকাপে লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ব্যাট করতে নেমে ১২৮ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে বসে লঙ্কানরা। তবে শেষ উইকেট জুটিতে ৪৩ রান আসায় ১৭১ রানে সংগ্রহ গড়ে শ্রীলঙ্কা।
জবাবে ১৬০ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয় নিজিল্যান্ড। এ জয়ে ৯ ম্যাচে ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে চার নম্বরে রইলো নিউজিল্যান্ড। এছাড়া ১৬০ বল হাতে রেখে ম্যাচ শেষ করায় রান রেট অনেকখানি রেড়ে গেছে নিউজিল্যান্ডের।
আসরে সেমিতে খেলার দৌড়ি এখনো টিকে রয়েছে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান। তবে নিউজিল্যান্ডকে টপকাতে হলে জয়ের সাথে রান রেটেও এগিয়ে থাকতে হবে। ফলে নিজেদের শেষ ম্যাচে জয় ছাড়াও কঠিন সমীকরণের মুখে পড়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বেঙ্গালুরুতে টস জিতে প্রথমে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ওভারে পেসার টিম সাউদির চতুর্থ বলে শ্রীলঙ্কার ওপেনার কুশল পেরেরার ক্যাচ ফেলেন উইকেটরক্ষক টম লাথাম। তবে পরের ডেলিভারিতেই লাথামকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা (২)।
এরপর নিউজিল্যান্ডের বোলারদের উপর চড়াও হয়ে ১০ বলে ২০ রান তুলে নেন পেরেরা। এ অবস্থায় পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে শ্রীলঙ্কাকে শিবিরে দ্বিতীয় ধাক্কা দেন পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। ৬ রান করা লংকান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসকে বিদায় দেন বোল্ট।
মেন্ডিসকে শিকার করে বিশ্বকাপ ইতিহাসে ষষ্ঠ ও নিউজিল্যান্ডের প্রথম বোলার হিসেবে ৫০ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি। সেই সাথে টিম সাউদি ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬শ উইকেটের মালিক হন বোল্ট। বিশ্বকাপে উইকেটের হাফ-সেঞ্চুরির পর বোল্ট মিডল অর্ডারে সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ১ রানে পিরিয়ে দিলে ৩২ রানে ৩ উইকেটে পরিণত হয় শ্রীলঙ্কা।
সতীর্থরা যাওয়া-আসার মিছিলে থাকলেও ব্যাট হাতে মারমুখী মেজাজে ছিলেন পেরেরা। অষ্টম ওভারে ওয়ানডেতে ১৭তম হাফ-সেঞ্চুরি করতে মাত্র ২২ বল খেলেছেন তিনি। এ ইনিংস দিয়ে শ্রীলঙ্কার পক্ষে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরির নজির গড়েন পেরেরা।
পেরেরার ঝড়ো হাফ-সেঞ্চুরির পর নবম ওভারে শ্রীলঙ্কা শিবিরে আবারও আঘাত হানেন বোল্ট। ৮ রান তুলে প্যাভিলিয়নে ফিরেন বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা চারিথ আসালঙ্কা। পেরেরার সাথে চতুর্থ উইকেটে ২২ বলে ৩৮ রানের জুটি গড়েন আসালঙ্কা।
পরের ওভারে বিদায় ঘণ্টা বাজে পেরেরার। পেসার লুকি ফার্গুসনের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিচেল স্যান্টনারকে ক্যাচ দেন তিনি। ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৮ বলে ৫১ রানে থামেন পেরেরা। এতে ৭০ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। এর মাধ্যমে বিশ্বকাপে প্রথম দশ ওভারে সবচেয়ে বেশি উইকেট হারানোতে বাংলাদেশকে টপকে শীর্ষে উঠলো লঙ্কানরা।
১০৫ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে দ্রুত গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে শ্রীলঙ্কা। এরপর ১২৮ রানে নবম উইকেট পতন হয় লঙ্কানদের। তবে শেষ উইকেটে নিউজিল্যান্ড বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন মহেশ থিকশানা ও দিলশান মাদুশঙ্কা। শেষ উইকেটে ৮৭ বল খেলে ৪৩ রান যোগ করেন তারা।
বিশ্বকাপে নবম বা তার নীচের উইকেটে সর্বোচ্চ রান ও শেষ উইকেটে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ডও গড়েছে তারা। এতে দেড়শ রান পেরিয়ে ১৭১ রানের সম্মানজনক সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। ৪৬তম ওভারের চতুর্থ বলে মাদুশঙ্কাকে শিকার করে শ্রীলংকা ইনিংসের ইতি টানেন স্পিনার রাচিন রবীন্দ্র। মাদুশঙ্কা ৪৮ বলে ১৯ রানে আউট হলেও ৩টি চারে ৯১ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন থিকশানা।
নিউজিল্যান্ডের বোল্ট ৩টি, ফার্গুসন-স্যান্টনার ও রবীন্দ্র ২টি করে উইকেট নেন।
১৭২ রানের জবাবে দারুণ শুরু করেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্র। উদ্বোধনী জুটিতে ৭৪ বলে ৮৬ রান যোগ করে যথাক্রমে ১৩ ও ১৪তম ওভারে বিদায় নেন তারা। ৯টি চারে ৪৫ রান করা কনওয়েকে শিকার করেন পেসার দুসমন্থ চামিরা। স্পিনার থিকশানার শিকার হবার আগে ৩টি করে ছক্কায় ৩৪ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলেন রবীন্দ্র।
এ ইনিংসের সুবাদে দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কককে টপকে বিশ্বকাপে এখন সর্বোচ্চ রানের মালিক রবীন্দ্র। সেই সাথে অভিষেক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের বিশ্ব রেকর্ডও গড়েছেন তিনি।
৮৮ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেটে ২৯ বলে ৪২ রান যোগ করেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল। ১৫ বলে ১৪ রান তুলে ম্যাথিউজের বলে আউট হন উইলিয়ামসন। পাঁচ নম্বরে নামা মার্ক চাপম্যান ৭ রানে রান আউট হলেও মারমুখী ব্যাটিংয়ে দ্রুত ম্যাচ শেষ করার চেষ্টা করেন মিচেল। কিন্তু দলের জয় থেকে ১০ রান দূরে থাকতে থামেন ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩১ বলে ৪৩ রান করা মিচেল।
এরপর ষষ্ঠ উইকেটে ৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ১০ রান তুলে নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন গ্লেন ফিলিপস ও টম লাথাম। ফিলিপস ৩টি চারে ১০ বলে ১৭ ও লাথাম ২ রানে অপরাজিত থাকেন। শ্রীলঙ্কার ম্যাথিউজ ২৯ রানে ২ উইকেট নেন।
এ হারে পয়েন্ট টেবিলের ৯ নম্বরে নেমে গেছে শ্রীলঙ্কা। সমান পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে আট নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ নিজেদের শেষ ম্যাচে হেরে গেলে এবং রান রেটে পিছিয়ে পড়লে নিচে নেমে যাবে টাইগাররা। সেক্ষেত্রে ৮ নম্বরে ওঠে যাবে লঙ্কানরা। অন্যথায় বাংলাদেশ জয় পেয়ে ৯ নম্বরে থাকায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে পারবে না শ্রীলঙ্কা।