স্পোর্টসমেইল২৪
বিশ্বকাপে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। টানা ছয় ম্যাচের হারের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। এ জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখলো বাংলাদেশ।
সোমবার (৬ নভেম্বর) দিল্লিতে টস হেরে প্রথমে ব্যাট হারে ৩ বল বাকি থাকতে গুটিয়ে যাওয়ার আগে ২৭৯ রানের সংগ্রহ গড়ে শ্রীলঙ্কা। জবাবে নাজমুল হোসেন শান্ত এবং সাকিব আল হাসানের জোড়া ফিফটিতে ৫৩ বল বাকি থাকতেই ৩ উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ মঞ্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি প্রথম জয়।
এ জয়ে আট ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ৭ নম্বরে উঠে গেছে বাংলাদেশ। একই সমান পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে পিছিয়ে থেকে নিচে নেমে গেছে শ্রীলঙ্কা এবং নেদারল্যান্ডস। এছাড়া এ হারে লিগ পর্ব থেকেই বিশ্বকাপে বিদায় নিশ্চিত হলো শ্রীলঙ্কার।
দিল্লিতে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে উইকেট শিকারের আনন্দে ভাসান বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।
শুরুতে উইকেট হারালেও ভড়কে যাননি আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। পাল্টা আক্রমণে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন তারা। জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে উইকেটে জমে যান নিশাঙ্কা ও মেন্ডিস।
১১তম ওভারে প্রথমবারের আক্রমণে এসেই উইকেট তুলে নেন তানজিম সাকিব। ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে শরিফুলের দারুণ ক্যাচে আউট হন ১টি করে চার-ছক্কায় ১৯ রান করা মেন্ডিস। পরের ওভারে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন নিশাঙ্কা।
৭২ রানে ৩ উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চারিথ আসালঙ্কা। বাংলাদেশের বোলারদের দেখেশুনে খেলে শ্রীলঙ্কার রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন তারা। সাকিবের করা ২৫তম ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দিয়ে থামেন ৪১ রান করা সামারাবিক্রমা।
সামারাবিক্রমার বিদায়ে উইকেটে আসেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। তবে কোন বল না খেলেই বিশ্বের প্রথম ব্যাটার হিসেবে টাইম আউট হন তিনি। দলীয় ১৩৫ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে ম্যাথিউজ ফেরার পর ক্রিজে আসালঙ্কার সঙ্গী হন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা।
এ জুটিতে ওয়ানডেতে ১১তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন আসালঙ্কা। ৩৭তম ওভারে শ্রীলঙ্কার রান ২শ স্পর্শ করে। পরের ওভারে মিরাজের বলে স্টাম্পড আউট হন ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৬ বলে ৩৪ রান করা ডি সিলভা। ষষ্ঠ উইকেটে ৮২ বলে ৭৮ রান যোগ করে দলের রান ২১৩তে নেন ডি সিলভা- ধনাঞ্জয়া।
অষ্টম ব্যাটার হিসেবে আসালঙ্কা ফেরার পর ৩ বল বাকি থাকতে ২৭৯ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের তানজিম সাকিব ১০ ওভারে ৮০ রানে ৩ উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট নেন শরিফুল ও সাকিব এবং ১ উইকেট নেন মিরাজ।
নিজেদের ইনংসে শ্রীলঙ্কান ব্যাটারা ৭টি ছক্কা হাকান। এতে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড হয়। ২০১৫ আসরের সর্বোচ্চ ৪৬৩ ছক্কাকে টপকে গেছে এবারের বিশ্বকাপ।
২৮০ রানের জবাবে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে তৃতীয় ওভারেই বিচ্ছিন্ন হয় বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। পেসার দিলশান মাদুশঙ্কার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কভারে নিশাঙ্কাকে ক্যাচ দেন ২টি চারে ৫ বলে ৯ রান করা তানজিদ হাসান।
তানজিদের ফেরার ওভারেই ফাইন লেগে পেরেরাকে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান ওপেনার লিটন দাস। জীবন পেয়েও সেটি কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। সপ্তম ওভারে মাদুশঙ্কার দারুন এক ডেলিভারিতে লেগ বিফোর আউট হন লিটন। রিভিউ না নিলে ২২ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ২৩ রানে আউট হন লিটন।
৪১ রানে ২ উইকেট পতনে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব। উইকেটে দ্রুত সেট হয়ে রানের চাকা সচল করেন তারা। ১৮তম ওভারে ১শ পায় বাংলাদেশ। ৫৮ বল খেলে ওয়ানডেতে সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শান্ত। ২৩তম ওভারে এবারের আসরে বাংলাদেশের পক্ষে শতরানের জুটি গড়েন শান্ত ও সাকিব।
৪৭ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫৬তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান সাকিব। বিশ্বকাপে এই নিয়ে ত্রয়োদশবার ৫০ রানের বেশি ইনিংস খেলে তালিকার তৃতীয়স্থানে উঠে এলেন সাকিব। ৩০তম ওভারে দলের রান ২শ পার করে বিচ্ছিন্ন হন শান্ত ও সাকিব।
৩২তম ওভারে ম্যাথিউজের বলে আসালঙ্কাকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ১২টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮২ রান করা সাকিব। শান্তর সাথে তৃতীয় উইকেটে ১৪৯ বলে ১৬৯ রান যোগ করেন দলের জয়ের পথ তৈরি করেন টাইগার অধিনায়ক। এ নিয়ে বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মত অন্তত দেড়শ রানের জুটি গড়লো টাইগাররা।
দলীয় ২১০ রানে সাকিব ফেরার পর কিছুক্ষণ পর ম্যাথিউজের দ্বিতীয় শিকার হন শান্ত। ১২টি চারে ১০১ বলে ৯০ রান করেন শান্ত। ১ রানের ব্যবধানে সাকিব-শান্তর বিদায়ের পর বাংলাদেশকে দ্রুত জয়ের বন্দরে নেওয়ার পথে হাঁটতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর।
২৬ বলে ৩৮ রান তুলে আড়াইশ কাছে নেন তারা। তবে৬ রানের ব্যবধানে প্যাভিলিয়নে ফিরেন দু’জনেই। মুশফফিককে ১০ রানে মাদুশঙ্কা ও মাহমুদউল্লাহকে ২২ রানে বোল্ড করেন থিকশানা। এ সময় জয় থেকে ২৫ রান দূরে বাংলাদেশ।
সপ্তম উইকেটে তাওহিদ হৃদয়ের সাথে ১০ বলে ১৪ রান তুলে আউট হন মিরাজ (৩)। এরপর অবিচ্ছিন্ন ১৩ রান তুলে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন হৃদয় ও তানজিম। ২টি ছক্কায় হৃদয় ৭ বলে অপরাজিত ১৫ ও ২টি চারে তানজিম ৯ রাানে অপরাজিত থাকেন। শ্রীলঙ্কার মাদুশঙ্কা ৬৯ রানে ৩ উইকেট নেন।