বিশ্বকাপে টানা পাঁচ হারে সেমিফাইনালের লড়াই থেকে আগেই ছিটক গিয়েছে বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় তুলে খেলায় ফেরায় আশায় ছিল টাইগাররা। সেই আশাতেও ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিং ব্যর্থতায় লড়াইটাই জমিয়ে তুলতে পারেনি টাইগাররা। উল্টো লজ্জাজনক পরাজয় বরন করলো বাংলাদেশ।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ২০৪ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। জবাবে ১০৫ বল বাকি রেখেই ৭ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে পাকিস্তান। এ জয়ে ৭ খেলায় ৬ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে উঠলো পাকিস্তান।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের কাছে হেরে যাওয়ায় বিশ্বকাপের লিগ পর্ব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের। টানা ষষ্ঠ হারে ৭ খেলায় ২ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে টেবিলের নবমস্থানে থাকলো বাংলাদেশ। ৬ খেলায় ২ পয়েন্ট আছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডেরও। তবে রান রেটে পিছিয়ে টেবিলের তলানিতে ইংলিশরা।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আগের ম্যাচের একাদশ থেকে একটি পরিবর্তন মাহেদি হাসানের পরিবর্তে তাওহিদ হৃদয়কে অন্তর্ভুক্ত করে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ।
ব্যাট হাতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। রানের খাতা খোলার অগেই পাকিস্তান পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে লেগ বিফোর আউট হন তানজিদ হাসান। রিভিউ নিলেও লাভ হয়নি তানজিদের।
তানজিদকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে ওয়ানডেতে দ্রুততম ১শ উইকেট শিকারের মালিক হন আফ্রিদি। এজন্য ৫১ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৪২ ম্যাচে ১শ উইকেট নিয়ে এই রেকর্ডের মালিক নেপালের সন্দীপ লামিচানে। তবে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ককে পিছনে ফেলে পেস বোলার হিসেবে এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে দ্রুত একশ উইকেটের মালিক বনে যান আফ্রিদি।
দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। পরের ওভারে আফ্রিদির বলে মিড উইকেটে উসামা মীরকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৪ রান করা শান্ত। ব্যাটিংয়ে প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে নামা মুশফিকুর রহিমও সুবিধা করতে পারেননি । পেসার হারিস রউফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৫ রান করা মুশফিক।
২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ ম্যাচ নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে ১৬ উইকেট হারালো টাইগাররা। উইকেট পতন ঠেকাতে ইনফর্ম মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে পাঁচ নম্বরে পাঠায় বাংলাদেশ দল। উইকেটে গিয়ে আরেক ওপেনার লিটন দাসের সাথে জুটি বাঁধেন মাহমুদউল্লাহ।
দেখেশুনে খেলে দলের রানের চাকা সচল করেন তারা। ১২তম ওভারে ৫০ রান পায় বাংলাদেশ। দলের রান অর্ধশতকে পৌঁছে দিয়ে স্বাচ্ছেন্দ্যে খেলতে থাকেন লিটন ও মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ২১তম ওভারে খেই হারান লিটন। স্পিনার ইফতিখারের বলে মিড অনে আাগ সালমানকে ক্যাচ দিলে ৬টি চারে ৬৪ বলে ৪৫ রান করা লিটনের বিদায় ঘটে। মাহমুদউল্লাহ-লিটন জুটি ৮৯ বলে ৭৯ রান করেন।
লিটনের বিদায়ে ক্রিজে আসেন সাকিব। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে আবারও বড় জুটির চেষ্টা করেন সাকিব। ২৬তম ওভারের শেষ বলে ওয়ানডেতে ২৮তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদউল্লাহ। এ জন্য ৫৮ বল খেলেছেন তিনি।
৩১তম ওভারে আফ্রিদির বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহ। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭০ বলে ৫৬ রান করেন অভিজ্ঞ এ ব্যাটার।
রিয়াদের বিদায়ে ক্রিজে আসেন গত দুই ম্যাচ একাদশে সুযোগ না পাওয়া হৃদয়। ৩২তম ওভারে স্পিনার মীরের দ্বিতীয় বলে স্লগ সুইপে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন হৃদয়। পরের ডেলিভারিতে স্লিপে ইফতিখারকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৭ রান করা হৃদয়।
১৪০ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে হৃদয়ের আউটের পর মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সাকিব। ৩৭তম ওভারে ইফতিখারের তিন বলে টানা তিনটি চার মেরে এবারের আসরে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন টাইগার দলপতি।
কিন্তু দলীয় ১৮৫ রানে রউফের শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে সালমানকে ক্যাচ দেন সাকিব। ৪টি চারে ৬৪ বল খেলে এবারের আসরে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন তিনি। সপ্তম ব্যাটার হিসেবে ৪০তম ওভারে সাকিবের আউটের পর, পাকিস্তানের পেসার পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিমের তোপে বেশি দূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ।
লোয়ার অর্ডারের শেষ ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ৪৫.১ ওভারে ২০৪ রানে অলআউট কর দেন ওয়াসিম। ১৯ রানে শেষ ৪ উইকেট হারায় টাইগাররা। লোয়ার অর্ডারে ১টি করে চার-ছক্কায় ৩০ বলে ২৫ রান করেন মিরাজ।
পাকিস্তানের আফ্রিদি ২৩ রানে ও ওয়াসিম ৩১ রানে ৩টি করে উইকেট নেন।
২০৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে তাড়াহুড়া না করে ধীরে-সুস্থে খেলে পাকিস্তানের দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ফখর জামান ১০ ওভারে ৫২ রান তোলেন। তবে দলকে ১২৭ বলে ১২৮ রানের সূচনা এনে দেন শফিক ও জামান। বিশ্বকাপে এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মত উদ্বোধনী জুটিতে শতরান পেল পাকিস্তান। এরমধ্যে পাঁচবারই রান তাড়ায়।
২২তম ওভারের প্রথম বলে শফিককে লেগ বিফোর আউট করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মিরাজ। ওয়ানডেতে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ৬৯ বল খেলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৮ রান করেন শফিক। তিন নম্বরে সুবিধা করতে পারেননি পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। মিরাজের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে মাহমুদুল্লাহকে ক্যাচ দেন ১৬ বলে ৯ রান করা বাবর।
শফিক ও বাবরের পর জামানকে শিকার করে বাংলাদেশের সপ্তম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ১শ উইকেট পূর্ণ করেন মিরাজ। নিজেদের প্রথম ম্যাচের পর পাকিস্তান একাদশে জায়গা হারানো জামান ৭৪ বল খেলে ৩টি চার ও ৭টি ছক্কায় ৮১ রান করেন।
জামান যখন ফিরেন জয় থেকে ৩৬ রান দূরে ছিলো পাকিস্তান। চতুর্থ উইকেটে ৩০ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩৬ রান তুলে চার ম্যাচ পর পাকিস্তানকে জয়ের স্বাদ দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার। ৪টি চারে রিজওয়ান ২৬ ও ২টি বাউন্ডারিতে ইফতিখার ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের মিরাজ ৬০ রানে ৩ উইকেট নেন।