বোলারদের দুর্দান্ত বোলিং নৈপূণ্যে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ১০০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলে আবারও শীর্ষে উঠলো স্বাগতিক ভারত। বিশ্বকাপে রান বিবেচনায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের এটিই সবচেয়ে বড় জয়। অন্যদিকে, ভারতের কাছে হেরে চলমান বিশ্বকাপ থেকে কার্যত ছিটকে গেল ইংলিশরা।
ইংলিশদের হারিয়ে ৬ ম্যাচ শেষে ৬ জয়ে পূর্ণ ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠলো ভারত। এতে সেমিফাইনালের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে টিম ইন্ডিয়া। আর এই হারে ৬ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতেই থাকলো ইংল্যান্ড। এটা নিয়ে নিজেদের ছয় ম্যাচে ইংলিশদের পঞ্চম হার।
রোববার (২৯ অক্টোবর) বিশ্বকাপের ২৯তম ম্যাটে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। ব্যাট করতে নেমে ভারতকে ৪ ওভারে ২৬ রানের শুরু এনে দিয়ে বিচ্ছিন্ন হন দুই ওপেনার অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। ৯ রান করা গিল বোল্ড আউট হন ইংল্যান্ড পেসার ক্রিস ওকসের বলে।
গিলের বিদায়ে উইকেটে এসে রানের খাতা খোলার আগেই পেসার ডেভিড উইলির শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ফর্মে থাকা বিরাট কোহলি। ২৮৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৬তম ডাক কোহলির। গিল ও কোহলির মত দু’অংকে পা দেয়ার আগে আউট হন শ্রেয়াস আইয়ার। ওকসের দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ১৬ বলে ৪ রান করেন তিনি। এমন অবস্থায় ১২তম ওভারে ৪০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত।
দলের এ পরিস্থিতিতে জুটি গড়ার চেষ্টায় সফল হন রোহিত ও লোকেশ রাহুল। দেখেশুনে খেলে রানের চাকা ঘুড়াতে থাকেন তারা। ২৪তম ওভারে ৫৪তম ওয়ানডে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রোহিত। বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২তম হাফ-সেঞ্চুরি করতে ৬৬ বল খেলেন টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২১ হাফ-সেঞ্চুরির মালিক ভারতের শচীন টেন্ডুলকার।
২৫তম ওভারে ভারতের রান ১শ স্পর্শ করে। ৩১তম ওভারে রোহিত-রাহুলের জুটি ভাঙেন উইলি। ৫৮ বল খেলে ৩টি চারে ৩৯ রানে থামেন রাহুল। রোহিতের সাথে ১১১ বলে ৯১ রান যোগ করেন রাহুল। দলীয় ১৩১ রানে রাহুল ফেরার পর ছয় নম্বরে নামা সূর্যকুমার যাদবকে নিয়ে ভারতের রানের চাকা সচল রাখেন রোহিত।
সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৩৭তম ওভারে স্পিনার আদিল রশিদের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে দলীয় ১৬৪ রানে লিভিংস্টোনকে ক্যাচ দেন রোহিত। ১০টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১০১ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেন রোহিত। এই ইনিংস খেলার পথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৮ হাজার পূর্ণ হয় ভারত দলপতির।
রোহিতের বিদায়ে ভারতের বড় স্কোরের আশা শেষ হয়ে যায়। তারপরও সূর্যর সাথে লোয়ার অর্ডারে জসপ্রিত বুমরাহ ও কুলদীপ যাদবের কল্যানে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৯ রানের সম্মানজনক সংগ্রহ পায় ভারত। ৪৭ বল খেলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেন সূর্য।
এছাড়া বুমরাহ ১৬, কুলদীপ অপরাজিত ৯ ও জাদেজা ৮ রান করেন। ইংল্যান্ডের উইলি ৪৫ রানে ৩টি, ওকস ৩৩ ও রশিদ ৩৫ রানে ২টি করে উইকেট নেন। ৪৬ রানে ১টি উইকেট নেন উড।
২৩০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ভালো শুরুর পথেই ছিলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড মালান। ১৬ রান করা মালানকে বোল্ড করে পঞ্চম ওভারে জুটি ভাঙ্গেন বুমরাহ। পরের ডেলিভারিতে জো রুটের উইকেটও তুলে নেন বুমরাহ। গোল্ডেন ডাক মারেন রুট।
বুমরাহর সাথে উইকেট শিকারে মাতেন আগের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট নেয়া সামি। ১০ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে না পারা বেন স্টোকসের উইকেট স্টাম্প করে দেন সামি। স্টোকসের পর বেয়ারস্টোকেও বোল্ড করেন সামি। ২টি চারে ১৪ রান করেন বেয়ারস্টো।
দুই পেসার বুমরাহ ও সামির তোপে প্রথম ১০ ওভারে ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এই বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারালো ইংলিশরা। ১৬তম ওভারে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জশ বাটলারকে ১০ রানে বোল্ড করেন স্পিনার কুলদীপ। দলীয় ৫২ রানে পঞ্চম উইকেট পতনে খাদের কিনারায় চলে যায় ইংল্যান্ড।
দলীয় রান ১শ পার হওয়ার আগেই অষ্টম উইকেট পতনে ম্যাচ হার নিশ্চিত হয়ে যায় ইংলিশদের। মঈনকে ১৫ রানে সামি, ওকসকে ১০ রানে জাদেজা ও লিভিংস্টোনকে ২৭ রানে শিকার করেন কুলদীপ। শেষ পর্যন্ত ৩৪.৫ ওভারে ১২৯ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড।
লোয়ার অর্ডারে রশিদ ১৩ ও উইলি অপরাজিত ১৬ রান করেন। ভারতের সামি ২২ রানে ৪টি ও বুমরাহ ৩২ রানে ৩ উইকেট নেন।
এ জয়ে ভারত সেমিফাইনালের কাছে পৌঁছে গেলেও বিশ্বকাপ থেকে কার্যত বিদায় ঘটলো ইংল্যান্ডের। নিজেদের খেলা ছয় ম্যাচে মাত্র এক জয়ে ইংলিশদের পয়েন্ট মাত্র ২। বাংলাদেশকে হারিয়ে সেই পয়েন্ট অর্জন করা ইংলিশরা এখন রান রেটে পিছিয়ে থেকে টাইগারদের পিছনে রয়েছে। এছাড়া লিগ পর্বে বাকি থাকা তিন ম্যাচে জয় পেলেও মোট ৮ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে খেলা সম্ভব নয়।