বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে লজ্জাজনক পরাজয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ২৩০ রানের লক্ষ্য পেয়েও ব্যাটিং ব্যর্থতায় জিততে পারেনি টাইগাররা। উল্টো এ হারে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন থেকে ছিটকে গেল টাইগাররা।
শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে শেষ বলে অলআউট হওয়ার আগে ২২৯ রানের সংগ্রহ গড়ে নেদারল্যান্ডস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪২.২ ওভারে ১৪২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ফলে ৮৭ রানের জয় পায় ডাচরা।
এ নিয়ে চতুর্থবার আইসিসির কোন সহযোগী দেশের কাছে হারলো বাংলাাদেশ। এর আগে ২০০৩ সালে কানাডা ও কেনিয়া এবং ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরেছিল টাইগাররা।
এ হারে ৬ ম্যাচে ১ জয় ও ৫ হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের নবম স্থানে আছে বাংলাদেশ। ৬ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের অষ্টমস্থানে উঠলো নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশের আগে চলমান বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল নেদারল্যান্ডস।
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বাংলাদেশের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় নেদারল্যান্ডস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগের ম্যাচের একাদশ থেকে দু’টি পরিবর্তন নাসুম আহমেদ ও হাসান মাহমুদের পরিবর্তে তাসকিন আহমেদ ও মাহেদি হাসানকে নিয়ে মাঠে নামে টাইগাররা।
বল হাতে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পান পেসার তাসকিন। শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে বাংলাদেশের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলে ওয়েসলি বারেসি ও কলিন অ্যাকারম্যান হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়েন। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকা বারেসিকে ১৪তম ওভারে আউট করে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন মোস্তাফিজ।
পরের ওভারে অ্যাকারম্যানকে ১৫ রানে শিকার করে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান সাকিব। ৬৩ রানে চতুর্থ উইকেট পতনে আবারও চাপে পড়ে নেদারল্যান্ডস। এ অবস্থায় ডাচদের আরও ভালোভাবে চেপে ধরার সুর্বন সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে মোস্তাফিজের করা ১৬তম ওভারে দু’বার জীবন পান নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস।
দু’বার জীবন পেয়ে পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেটে দারুণ জুটি গড়েন এডওয়ার্ডস। প্রথমে বাস ডি লিডেকে নিয়ে ৭৪ বলে ৪৪ ও পরে সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখটের সাথে ১০৫ বলে ৭৮ রান যোগ করেন তিনি। লিডেকে ১৭ রানে থামান তাসকিন। এঙ্গেলব্রেখট ৩৫ রানে শিকার হন মাহেদির।
এঙ্গেলব্রেখটের সাথে জুটি গড়ার পথে ৪১তম ওভারে ওয়ানডেতে ১৫তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন ৭৮ বল খেলা এডওয়ার্ডস। এই ইনিংসের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসের পক্ষে সর্বোচ্চ অর্ধশতকের মালিক এখন এডওয়ার্ডস। হাফ-সেঞ্চুরির পর ইনিংস বড় করার চেষ্টা করেছিলেন এডওয়াডর্স। তবে ৪৫তম ওভারে মুস্তাফিজের বলে মিরাজকে ক্যাচ দিয়ে দলীয় ১৮৫ রানে আউট হন তিনি। তার আগে ৬টি চারে ৮৯ বলে ৬৮ রান করেন ডাচ অধিনায়ক।
এডওয়ার্ডস ফেরার পর ইনিংসের শেষদিকে লোগান ফন বিক ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৬ বলে অপরাজিত ২৩, শারিজ আহমেদের ৬ ও আরিয়ান দত্তের ৯ রানে সম্মানজনক স্কোর পায় নেদারল্যান্ডস। ইনিংসে শেষ বলে শেষ উইকেট হারিয়ে ২২৯ রানের পুঁজি পায় নেদারল্যান্ডস।
বাংলাদেশের শরিফুল ৫১ , তাসকিন ৪৩ , মুস্তাফিজ ৩৬ ও মাহেদি ৪০ রানে ২টি করে উইকেট নেন। ৩৭ রানে ১ উইকেট নেন সাকিব।
২৩০ রানের টার্গেটে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান। ৪ ওভারে ১৯ রান তুলে ফেলেন তারা। পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে স্পিনার আরিয়ানের শিকার হন ১২ বলে ৩ রান করা লিটন। পরের ওভারে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তানজিদও।
১৯ রানে দুই ওপেনারকের হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে এ নিয়ে ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতেই বাংলাদেশের দুই ওপেনার ২০ রানের কোটা পার করতে ব্যর্থ হলেন। দলকে চাপমুক্ত করতে তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন তিন নম্বরে নামা মেহেদি হাসান মিরাজ ও চার নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত।
তবে ১২তম ওভারে পেসার মিকেরেনের বলে স্লিপে বিককে ক্যাচ দেন ১৮ বলে ২টি চারে ৯ রান করা শান্ত। ভেঙ্গে যায় মিরাজের সাথে ৩৯ বলে ২৬ রানের জুটি। দলীয় ৪৫ রানে শান্তর বিদায়ে উইকেটে আসেন অধিনায়ক সাকিব। ১৪ বল খেলে ৫ রান করে মিকেরেনের বলে খোঁচা মেরে উইকেটরক্ষক এডওয়ার্ডসকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন টাইগার দলপতি।
সাকিবের পর উইকেট পতনের খাতায় নাম তুলেন ক্রিজে সেট ব্যাটার মিরাজ। ১৭তম ওভারে লিডের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে বল জমা দেন তিনি। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪০ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন মিরাজ।
মিরাজ ফেরার পরের ওভারে মিকেরেনের বলে ইনসাইড এজড হয়ে বোল্ড হন ১ রান করা মুশফিকুর রহিম। ১৯ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর ৭০ রানে ৬ উইকেট নেই বাংলাদেশের । ৭০ বা এর চেয়ে কম রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিশ্বকাপে কখনও ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ।
কঠিন অবস্থায় মাহেদিকে নিয়ে উইকেট পতন ঠেকান মাহমুদউল্লাহ। উইকেট টিকে থাকতে সাবধানে খেলতে থাকেন তারা। দু’জনের জুটিতে ২৮তম ওভারে ১শ রান পায় বাংলাদেশ। ৩০তম ওভারে দলীয় ১০৮ রানে নিজেদের ভুলে মাহমুদউল্লাহ-মাহেদির জুটিটি ভাঙে। ৩৮ বলে ১৭ রান করে রান আউট হন মাহেদি।
মাহেদি ফেরার ৫ রান পর লিডের বলে মিড উইকেটে আরিয়ানকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন বাংলাদেশের শেষ ভরসা মাহমুদউল্লাহ। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহ এবার ২টি চারে ৪১ বলে ২০ রান করেন।
মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর দলের হারের ব্যবধান কমান তাসকিন ও মোস্তাফিজুর। নবম উইকেটে ২৯ রান তুলেন তারা। ফিজ ২০ ও তাসকিন ১১ রান আউট হলে ৪২ দশমিক ২ ওভারে ১৪২ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসের মিকেরেন ২৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়।
এ হারে চলমান বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলা আশা থেকে ছিটকে গেল বাংলাদেশ। ৬ ম্যাচে মাত্র ১ জয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট মাত্র ২। লিগ পর্বে বাকি তিন ম্যাচ জিতলেও মোট পয়েন্ট হবে ৮, যা সেমিফাইনালে খেলার জন্য যথেষ্ট নয়।