নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচেই হ্যাটট্রিক পরাজয়ে সবার নিচে ছিল চলতি বিশ্বকাপে বাছাইপর্ব খেলে আসা শ্রীলঙ্কা। অবশেষে চতুর্থ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে জয়ের দেখা পেল লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কার এ জয়ে চলমান বিশ্বকাপে কোন দলই জয়হীন থাকলো না।
শনিবার (২১ অক্টোবর) ১৯তম ম্যাচে নেদারল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে দুই বল বাকি থাকতে গুটিয়ে যাওয়ার আগে ২৬২ রানের সংগ্রহ গড়ে নেদারল্যান্ড।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১০ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয় শীলঙ্কা। চলমান বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার এটি প্রথম জয়। নেদারল্যান্ডসকে হারালেও রান রেটে পিছিয়ে থেকে পয়েন্ট টেবিলে ডাচদের নিচেই রয়েছে লঙ্কানরা।
লাক্ষ্মৌতে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় নেদারল্যান্ডস। চতুর্থ ওভারে দলীয় ৭ রানে প্রথম হোঁচট খায় ডাচরা। শ্রীলঙ্কার ডান হাতি পেসার কাসুন রাজিথার শিকার হয়ে ৪ রানে বিদায় নেন ওপেনার বিক্রমজিত সিং। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার ম্যাক্স ও’দাউদ ও কলিন অ্যাকারম্যান।
শ্রীলঙ্কার বোলারদের বিপক্ষে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেন তারা। তবে দলের রান ৫০ হবার আগেই রাজিথার দ্বিতীয় শিকার হন ২৭ বলে ১৬ রান করা ও’দাউদ। তবে আউট হওয়ার আগে অ্যাকারম্যানের সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ৩৮ বলে ৪১ রান যোগ করেন ও’দাউদ।
দলীয় ৪৮ রানে ও’দাউদ ফেরার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস। ৫টি চারে ৩১ বলে ২৯ রান করা অ্যাকারম্যানকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় শিকারের দেখা পান রাজিথা। এরপর নেদারল্যান্ডসের মিডল অর্ডারকে চেপে ধরেন আরেক পেসার দিলশান মাদুশঙ্কা। বাস ডি লিডে ৬ ও তেজা নিদামানুরু ৯ রানে সাজঘওে ফেরান মাদুশঙ্কা।
শ্রীলঙ্কার দুই পেসারের তোপে ৭১ রানে পঞ্চম উইকেট পতন হয় নেদারল্যান্ডসের। এ অবস্থায় নেদারল্যান্ডসের ভরসা হিসেবে ক্রিজে ছিলেন আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের নায়ক দলপতি স্কট এডওয়ার্ডস। তবে ২২তম ওভারে শ্রীলংকার স্পিনার মহিশ থিকশানার বলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ১৬ বলে ১৬ রান করা এডওয়ার্ডস।
এ পর্যায়ে ৯১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দ্রুত গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে নেদারল্যান্ডস। কিন্তু সেটি হতে দেননি এঙ্গেলব্রেখট ও ফন বিক। সাবধানে খেলে ৩৫ ওভারে দলের রান দেড়শতে নেন এ জুটি। ৪১তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ম্যাচে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি করেন ৬৫ বল খেলা এঙ্গেলব্রেখট। ৪৩তম ওভারে দলের রান ২শ স্পর্শ করে।
৪৬তম ওভারে এঙ্গেলব্রেখটকে আউট করে জুটি ভাঙ্গেন মাদুশঙ্কা। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮২ বলে ৭০ রান করেন এঙ্গেলব্রেখট। সপ্তম উইকেটে বিক-এঙ্গেলব্রেখট ১৪৩ বলে বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩০ রানের জুটি গড়েন।
এঙ্গেলব্রেখট ফেরার পর ৬৮ বল খেলে ওয়ানডেতে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি করেন পেস বোলার ফন বিক। ১টি করে চার-ছক্কায় ৭৫ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৫৯ রান করেন বিক। ৯১ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতন হলেও শেষ পর্যন্ত ২ বল বাকী থাকতে ২৬২ রানে অলআউট হয় নেদারল্যান্ডস। রাজিথা ৫০ রানে ও মাদুশঙ্কা ৪৯ রানে ৪টি করে উইকেট নেন। বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মত শ্রীলঙ্কার দুই বোলার ইনিংসে ৪ বা তার বেশি উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখালো।
২৬৩ রানের জবাবে শুরুটা ভালো হয়নি শ্রীলঙ্কার। পঞ্চম ওভারে দলীয় ১৮ রানে বিদায় নেন ওপেনার কুশল পেরেরা। এরপর বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। ৫২ রানে ২ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কাকে লড়াইয়ে রাখেন ওপেনার নিশাঙ্কা ও সামারাবিক্রমা।
তৃতীয় উইকেটে ৪০ বলে ৫২ রানের জুটি গড়ে দলের রান তিন অংকে নেন তারা। এ জুটিতে ওয়ানডেতে ১৩তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান নিশাঙ্কা। হাফ-সেঞ্চুরির পর ১৭তম ওভারে নেদারল্যান্ডস পেসার পল ফন মিকেরেনের বলে থামেন ৯টি চারে ৫৪ রান করা নিশাঙ্কা।
এরপর চতুর্থ উইকেটে চারিথ আসালঙ্কাকে নিয়ে ৯৯ বলে ৭৭ এবং পঞ্চম উইকেটে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার সাথে ৮৫ বলে ৭৬ রান যোগ করে শ্রীলঙ্কার জয়ের পথ সহজ করে দেন সামারাবিক্রমা।
আসালঙ্কা ৪৪ ও ডি সিলভা ৩০ রানে ফিরলেও, অনবদ্য ৯১ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে শ্রীলঙ্কার জয় নিশ্চিত করেন ম্যাচ সেরা সামারাবিক্রমা। ১০৭ বল খেলে ৭টি চার মারেন সামারা। অন্যপ্রান্তে ৪ রানে অপরাজিত থাকেন দুসান হেমান্থা। নেদারল্যান্ডসের আরিয়ান ৩ উইকেট নেন।