টানা চতুর্থ জয়ে সেমির কাছে নিউজিল্যান্ড

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০১:১৬ এএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৩
টানা চতুর্থ জয়ে সেমির কাছে নিউজিল্যান্ড

টানা চতুর্থ জয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ পয়েন্ট টেবিলে এককভাবে শীর্ষে উঠলো নিউজিল্যান্ড। নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ১৪৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। চলমান বিশ্বকাপে রান বিবেচনায় এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে বড় জয়।

আফগানদের বিপক্ষে রানের হিসেবে সবচেয়ে বড় ব্যবধাানে জয়ের রেকর্ডও গড়লো নিউজিল্যান্ড। ৪ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে এখন কিউইরা। ৩ খেলায় ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে আছে ভারত। আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চমক দেখানো আফগানিস্তান ৪ ম্যাচে ১ জয় ও ৩ হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের নবমস্থানে রয়েছে।

দুই মিডল অর্ডার ব্যাটার গ্লেন ফিলিপস-ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টম লাথাম ও ওপেনার উইল ইয়ংয়ের হাফ-সেঞ্চুরিতে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৮৮ রান করে নিউজিল্যান্ড। ফিলিপস ৭১, লাথাম ৬৮ ও ইয়ং ৫৪ রান করেন। ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান নিউজিল্যান্ডের। জবাবে ৩৪.৪ ওভারে ১৩৯ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটিই সর্বনি¤œ রান আফগানদের।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) চেন্নাইয়ে টস জিতে প্রথমে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় আফগানিস্তান। ব্যাট হাতে নেমে দ্বিতীয় ওভারে পেসার ফজলহক ফারুকির চতুর্থ ডেলিভারিতে জীবন পান উইল ইয়ং। ব্যক্তিগত ১ রানে জীবন পেয়ে ডেভন কনওয়ের সাথে উদ্বোধনী জুুটিতে ৩৯ বলে ৩০ রান তুলেন ইয়ং। প্রথম ব্যাটার হিসেবে স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে আউট হবার আগে ৩টি চারে ১৮ বলে ২০ রান করেন কনওয়ে।

কনওয়ে ফেরার পর রাচিন রবীন্দ্রকে নিয়ে দলের রানের চাকা ঘুড়ান ইয়ং। ১৮তম ওভারে ওয়ানডেতে সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৫৭ বল খেলা ইয়ং। ২১তম ওভারে নিউজিল্যান্ড শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন পেসার আজমতুল্লাহ ওমরজাই। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪১ বলে ৩২ রান করা রবীন্দ্রকে শিকার করেন ওমরজাই। একই ওভারের শেষ বলে ওমরজাইর দ্বিতীয় শিকার হন ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৪ বলে ৫৪ রান করা ইয়ং। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রবীন্দ্র-ইয়ং ৮৩ বলে ৭৯ রান যোগ করেন।

ওমরজাই’র জোড়া আঘাতের ৩ বল পর আবারও আফগানিস্তানকে সাফল্য এনে দেন স্পিনার রশিদ খান। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজিত ৮৯ রান করা ড্যারিল মিচেলকে ১ রানে আটকে দেন রশিদ।

১১০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। এ অবস্থা থেকে দলকে উদ্ধার করেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টম লাথাম ও গ্লেন ফিলিপস। পঞ্চম উইকেটে জুটি বেঁধে আফগানিস্তানের বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলে ৪৩তম ওভারে দলের রান ২শতে নেন লাথাম-ফিলিপস।

ঐ ওভারেই ৬৯ বলে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় অর্ধশতক করেন ফিলিপস। ৪৬তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৩তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান ৬৭ বল খেলা লাথাম। ৪৮তম ওভারে একত্রে লাথাম-ফিলিপসকে শিকার করেন পেসার নাভিন উল হক। প্রথম বলে ফিলিপসকে ও তৃতীয় ডেলিভারিতে লাথামকে আউট করেন নাভিন।

৪টি করে চার-ছক্কায় ৮০ বলে ৭১ রান করেন ফিলিপস। ৭৪ বল খেলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৮ রানের ইনিংস সাজান লাথাম। পঞ্চম উইকেটে ১৫৩ বলে ১৪৪ রানের জুটি গড়ে দলের রান আড়াইশ পার করেন লাথাম-ফিলিপস জুটি।

দলীয় ২৫৫ রানের মধ্যে লাথাম ও ফিলিপসের বিদায়ের পর ডেথ ওভারে ঝড় তুলেন মার্ক চাপম্যান। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১২ বলে ২৫ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন তিনি। ৫ বলে ৭ রানে অপরাজিত থাকেন মিচেল স্যান্টনার। এতে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৮৮ রানের সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। লাথাম-ফিলিপসের দারুন জুটির পর চাপম্যানের ঝড়ো ইনিংসের সুবাদে শেষ ১০ ওভারে ১০৩ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড।

আফগানিস্তানের নাভিন ৪৮ রানে ও ওমরজাই ৫৬ রানে ২টি করে উইকেট নেন। এছাড়া ১টি করে উইকেট নেন মুজিব ও রশিদ।

জয়ের জন্য ২৮৯ রানের লক্ষ্যে দলকে ভালো শুরু এনে দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান।

১১ রান করা গুরবাজকে শিকার করে ৩৫ বলে গড়া আফগানিস্তানের ২৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন পেসার ম্যাট হেনরি। এরপর ইব্রাহিমকে ১৪ রানে বিদায় দেন পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। ৩ বলের ব্যবধানে দলীয় ২৭ রানেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানরা।

দলীয় ৪৩ রানে অধিনায়ক হামতুল্লাহ শাহিদি ৮ রানে পেসার লুকি ফার্গুসনের শিকার হলে আফগানিস্তানের উপর চাপ আরও বাড়ে। দলকে লড়াইয়ে ফেরাতে চতুর্থ উইকেটে হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়েন রহমত শাহ ও ওমরজাই। ৭০ বলে গড়ে উঠা রহমত শাহ-ওমরজাইর জুটি বিচ্ছিন্ন করেন বোল্ট। ওমারজাইকে ২৭ রানে আউট করেন বোল্ট।

ধীরলয়ে খেলা রহমতকে ৩৬ রানে বিদায় দিয়ে ম্যাচের লাগাম নিউজিল্যান্ডের হাতে তুলে দেন স্পিনার রবীন্দ্র। ১০৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে আফগানিস্তান।

এরপর দলের জয়ের বাকি কাজটুকু সারেন নিউজিল্যান্ডের অপর দুই স্পিনার স্যান্টনার ও ফার্গুসন। ২৫ বলে ১৪ রানের ব্যবধানে আফগানদের শেষ ৫ উইকেট শিকার করেন তারা। রশিদকে ৮ ও মুজিবকে ৪ রানে শিকার করেন ফার্গুসন। আর মোহাম্মদ নবিকে ৭, নাভিন-ফারুকিকে শূণ্যতে আউট করে আফগানিস্তানকে ৩৪ দশমিক ৪ ওভারে ১৩৯ রানে গুটিয়ে দেন স্যান্টনার।

ফার্গুসন ১৯ রানে ও স্যান্টনার ৩৯ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। নবিকে আউট করে ড্যানিয়েল ভেট্টোরির পর নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে ওয়ানডেতে ১শ উইকেট পূর্ণ করেন স্যান্টনার। ভেট্টোরির শিকারে আছে ৩০৫ উইকেট।



শেয়ার করুন :