বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জয় পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে সেই ধারাবাহিতকতা ধরে রাখতে পারলো না বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারের স্বাদ পেল টাইগাররা। অন্যদিকে, বাংলাদেশকে ১৩৭ রানের ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের দেখা পেল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
মূলথ ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই ব্যর্থতায় ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই হারের লজ্জা পেল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাছে এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধাানে হার টাইগারদের। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৬৪ রান করে ইংল্যান্ড। ১০৭ বলে ১৪০ রান করেন ডেভিড মালান। বাংলাদেশের পক্ষে স্পিনার মাহেদি হাসান ৪টি ও পেসার শরিফুল ইসলাম ৩টি উইকেট নেন।
জবাবে পেসার রিচ টপলির বোলিং তোপে ১০ বল বাকি থাকতে ২২৭ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন লিটন। টপলি ৪৩ রানে ৪ উইকেট নেন।
ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে একাদশ থেকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বাদ দিয়ে ডান হাতি স্পিনার শেখ মাহেদি হাসানকে অন্তর্ভুক্ত করে একাদশ সাজায় টাইগাররা।
প্রথমে ব্যাট করার সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগান ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড মালান। ১০ ওভারে ৬১ রান তুলে ফেলেন তারা। ১৪তম ওভারে হাফ-সেঞ্চুরি করেন ৩৯ বল খেলা মালান। ১৬তম ওভারে ইংল্যান্ডের রান তিন অংকে পা রাখে। একই ওভারে ওয়ানডেতে ১৬তম অর্ধশতক করেন ৫৪ বল খেলা বেয়ারস্টো।
১৭ ওভার পর্যন্ত ছয় বোলার ব্যবহার করে ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গতে পারছিলেন না অধিনায়ক সাকিব। অবশেষে ব্রেক-থ্রু এনে দেয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নেন অধিনায়ক। ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে বেয়ারস্টোকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন সাকিব। তবে আউট হওয়ার আগে ৮টি চারে ৫৯ বলে ৫২ রান করেন শততম ওয়ানডে খেলতে নামা বেয়ারস্টো। মালান-বেয়ারস্টো জুটিতে ১০৭ বলে ১১৫ রান যোগ করেন।
বেয়ারস্টো ফেরার পর ক্রিজে আসেন জো রুট। মালানকে নিয়ে বড় জুটির লক্ষ্য সাবধানে খেলতে থাকেন রুট। এতে ২২ থেকে ২৬ ওভার পর্যন্ত বলকে সীমানা ছাড়া করতে পারেননি মালান ও রুট। ২৭তম ওভারে বাউন্ডারির দেখা পায় ইংল্যান্ড। ৩২তম ওভারে সাকিবের বলে ১ রান নিয়ে ২৩তম ওয়ানডেতে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নেন মালান। ক্যারিয়ারের ২৩তম ইনিংসে ওয়ানডেতে দ্রুততম ষষ্ঠ সেঞ্চুরি রেকর্ডের মালিকও হন মালান।
৯১ বলে সেঞ্চুরি পাবার পর বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হন মালান। পরের মাত্র ১৫ বলে ৪০ রান তুলেন তিনি। ৩৮তম ওভারে মাহেদির বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন এই বাঁ-হাতি। ১৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১০৭ বলে ১৪০ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে রুটের সাথে ১১৭ বলে ১৫১ রান যোগ করেন মালান। প্রথম জুটিতেই শতরান করেছিলো ইংলিশরা।
বিশ্বকাপে এই প্রথম ইংল্যান্ডের প্রথম দুই উইকেট জুটিতে শতরান হলো। মালানের সাথে জুটিতেই ৪৪ বলে ওয়ানডেতে ৩৮তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন রুট। দলীয় ২৬৬ রানে মালান ফেরার পর ইংল্যান্ডের রানের লাগাম টেনে ধরেন পেসার শরিফুল ও স্পিনার মাহেদি। পরের দিকে শরিফুল-মাহেদি সমান ৩টি করে উইকেট নেন।
৪০তম ওভারে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জশ বাটলারের উইকেট উপড়ে ফেলেন শরিফুল। তবে তার আগেই ঝড়ো গতিতে ১০ বলে ২০ রান করেন বাটলার। ৪২তম ওভারে পঞ্চম বলে আউট হন রুট। শরিফুলের শিকার হওয়া আগে ৬৮ বলে ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮২ রান করেন রুট। এই ইনিংস খেলার পথে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রানের মালিক হন রুট। ওভারের শেষ বলে লিয়াম লিভিংস্টোনকে খালি হাতে বিদায় দেন শরিফুল।
শরিফুলের মত ইংল্যান্ডের ইনিংসের শেষ দিকে ৩ উইকেট শিকার করেন মাহেদিও। হ্যারি ব্রুককে ২০, স্যাম কারানকে ১১ ও আদিল রশিদকে ১১ রানে আউট করেন মাহেদি। শরিফুল-মাহেদির দারুণ বোলিংয়ে ইনিংসের শেষ ৬২ বলে ৬৮ রানে ৭ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। তারপরও লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের ছোট-ছোট ইনিংসের সুবাদে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৬৪ রানের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের এটি তৃতীয় ও বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান।
বল হাতে বাংলাদেশের পক্ষে মাহেদি ৮ ওভারে ৭১ রানে ৪টি, শরিফুল ১০ ওভারে ৭৫ রানে ৩টি উইকেট নেন। এছাড়া তাসকিন ৬ ওভারে ৩৮ রানে ও সাকিব ১০ ওভারে ৫২ রানে ১টি করে উইকেট নেন। উইকেট শূণ্য ছিলেন মোস্তাফিজুর ও মিরাজ।
৩৬৫ রানের পাহাড় টপকানোর লক্ষে খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই পেসার ওকসের পরপর তিন বলে তিনটি চার মারেন বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাস। পরের ওভারে বল হাতে আক্রমনে আসেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে খেলার সুযোগ না পাওয়া বাঁ-হাতি পেসার রিচ টপলি। চতুর্থ বলে দ্বিতীয় স্লিপে বেয়ারস্টোকে ক্যাচ দেন ২ বলে ১ রান করা আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান।
এরপর উইকেটে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টপলির বলের ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে লিভিংস্টোনকে ক্যাচ দেন তিনি। এই নিয়ে ৩২ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মত খালি হাতে ফিরেন শান্ত। চারবারই গোল্ডেন ডাক শান্তর।
শান্তর বিদায়ে উইকেটে আসেন সাকিব। টপলির হ্যাট্টিকের সুযোগ রুখে দিলেও, ষষ্ঠ ওভারে বিদায় ঘন্টা বাজে সাকিবের। সেই টপলির বলে বোল্ড হন ৯ বলে ১ রান করা সাকিব। এতে ৩৪ বলে ২৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
নবম ওভারে দ্রুত উইকেট হারানোর চাপ আরও বাড়িয়ে দেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচের হিরো মিরাজ। ওকসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৮ রান করা মিরাজ ফিরলে ৪ উইকেটে ৪৯ রানে পরিনত হয় বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় উইকেট পতন ঠেকানোর দায়িত্ব পান লিটন ও নতুন ব্যাটার মুশফিকুর। ১১তম ওভারে নিজের মুখামুখি হওয়া ৩৮তম বলে ওয়ানডেতে ১১তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন লিটন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে যৌথভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরি এটি। সর্বশেষ ১০ ইনিংসে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি করলেন লিটন।
মুশফিককে নিয়ে রানের চাকা ঘুড়িয়ে ১৯তম ওভারেই বাংলাদেশের রান ১শতে নেন লিটন। কিন্তু ২১তম ওভারে ওকসের বলে উইকেটরক্ষক বাটলারকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন লিটন। দারুণ খেলতে থাকা লিটন ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৬ বলে ৭৬ রান করেন। মুশফিকের সাথে ৭৫ বলে ৭২ রান যোগ করেন তিনি।
দলীয় ১২১ রানে লিটন ফেরার পর তাওহিদ হৃদয়ের সাথে ৪৩ রানের জুটি গড়ার পথে ৬১ বলে ওয়ানডেতে ৪৭তম অর্ধশতকের দেখান পান মুশফিক। হাফ-সেঞ্চুরির পর টপলির চতুর্থ শিকার হন ৪টি চারে ৬৪ বলে ৫১ রান করা মুশফিক।
৩১তম ওভারে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে দলীয় ১৬৪ রানে মুশফিক ফেরার পর পুরো ৫০ ওভার খেলতে টেস্ট মেজাজে লড়াই শুরু করে বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডার। তবে শেষ পর্যন্ত ১০ বল বাকি থাকতে ২২৭ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। হৃদয় ৬১ বলে ৩৯, মাহেদি ৩২ বলে ১৪, তাসকিন ২৫ বলে ১৫, শরিফুল ১৪ বলে ১২ ও মুস্তাফিজ ৯ বলে অপরাজিত ৩ রান করেন। ইংল্যান্ডের টপলি ১০ ওভারে ৪৩ রানে ৪ উইকেট নেন।