চেন্নাইয়ে বিশ্বকাপের হাই ভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুই সাবেক চ্যাম্পিয়ন ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। এ ম্যাচ দিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেবে দুই দল। এর আগে বিশ্বকাপে ইতিমধ্যে চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বিশ্ব ক্রিকেটের দুই পরাশক্তির পাঁচটি স্মরণীয় ম্যাচ
মরুর ঝড় : ২২ এপ্রিল ১৯৯৮
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শারজাহতে শচিন টেন্ডুলকারের ঝকঝকে ইনিংসটি এখনো অনেকের মনে দাগ কেটে আছে। ডেমিয়েন ফ্লেমিং, মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচ ও স্পিন কিংবদন্তী শেন ওয়ার্নকে নিয়ে সাজানো অস্ট্রেলিয়ান ওই সময়কার বিধ্বংসী বোলিং আক্রমণকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লিটল মাস্টার ১৩১ বলে ১৪৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
মরু শহরের প্রচন্ড গরমে ম্যাচটি প্রায় আধা ঘণ্টা বন্ধ ছিল। যে কারণে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলতে ভারতের সামনে ২৭৬ রানের পরিবর্তে নতুন টার্গেট দাঁড়ায় ২৩৫। ভারত অবশ্য টার্গেটে পৌঁছাতে পারেনি। তবে টেন্ডুলকারের মাস্টার ক্লাস টুর্নামেন্টের তৃতীয় দল নিউজিল্যান্ডের থেকে ভারতকে রান রেটে এগিয়ে দিয়েছিল।
দুইদিন পর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে ভারত শিরোপা জয় করে। ফাইনালেও সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন শচিন টেন্ডুলকার।
ক্লোজ কল : ৫ নভেম্বর, ২০০৯
প্রায় এক দশক পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেন্ডুলকারের আরো একটি ক্যামিও ইনিংস দেখেছিল পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। হায়দারাবাদে সাত ম্যাচ সিরিজের পঞ্চম ওয়ানডেতে টেন্ডুলকারের ১৭৫ রনের ইনিংসের পরেও অবশ্য ভারত ৩ রানে পরাজিত হয়েছিল। তবে টেন্ডুলকার ম্যাচ সেরা বিবেচিত হয়েছিলেন।
রিকি পন্টিংয়ের ১১২ ও শেন ওয়াটসনের ৯৩ রানের ইনিংসে ভর করে অস্ট্রেলিয়া ৪ উইকেটে ৩৫০ রানের বিশাল ইনিংস গড়ে তুলেছিল। পাহাড় সমান রান করেও টেন্ডুলকারের কাছে অবশ্য অস্ট্রেলিয়া প্রায় হেরেই গিয়েছিল। ১৪১ বলে টেন্ডুলকারের ১৭৫ ও সুরেশ রায়না ৫৯ রানের ইনিংস উপহার দিলেও বাকি ব্যাটাররা ছিলেন একেবারেই ব্যর্থ।
ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক পন্টিং বলেছিলেন, এ ম্যাচটি সকলের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শচিন তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলেছেন।
নকআউট পাঞ্চ : ৪ মার্চ, ২০১১
২০১১ সালে ভারতের মাটিতে দুই হেভিওয়েট দল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক রিকি পন্টিং ১০৪ রান করেও ম্যাচ বাঁচাতে পারেননি। আহমেদাবাদে ২৬১ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে টেন্ডুলকার ও গৌতম গম্ভীরের হাফ সেঞ্চুরির পর যুবরাজ সিংয়ের অপরাজিত ৫৭ রানের উপর ভর করে ভারত ১৪ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে।
ওই ম্যাচে জয়ের পর ভারত সেমিফাইনালে চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে পরাজিত করে। এরপর ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করে ১৯৮৩ সালের পর দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলে। ম্যাচ সেরা যুবরাজ সিং স্বীকার করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার চাপ সব সময়ই ভিন্ন।
ব্যাটিং ধামাকা : ১৩ অক্টোবর, ২০১৩
জয়পুরের হাই স্কোরিং ম্যাচটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাত ওয়ানডের দ্বিপাক্ষিক সিরিজের দ্বিতীয়টিতে বিরাট কোহলির অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ভারত ১-১’এ সমতা ফিরিয়েছিল। কোহলি মাত্র ৫২ বলে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন। এখন পর্যন্ত ভারতীয় ব্যাটারদের এটাই দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড।
অস্ট্রেলিয়ার করা ৩৫৯ রানের জবাবে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান মিলে ১৭৬ রানের জুটি গড়েছিলেন। রোহিত ১৪১ রানে অপরাজিত থাকলেও ধাওয়ান ৯৫ রানে আউট হন। এরপর বাকি কাজটুকু সেড়েছেন কোহলি। ৩৯ বল বাকি রেখে ভারত ৯ উইকেটে বিশাল জয় তুলে নেয়।
কোহলির ইনিংসে ছিল আটটি বাউন্ডারি ও সাতটি ওভার বাউন্ডারি। মিচেল জনসনের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ান বোলিং আক্রমনকে কোন পাত্তাই দেননি কোহলি।
ম্যাচ শেষে ওই সময়কার অধিনায়ক ও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ভূয়শী প্রশংসা করেছিলেন। বেইলি নিজেও ৯২ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন যা কার্যত কোন কাজে আসেনি।
মধুর প্রতিশোধ : ২৬ মার্চ ২০১৫
চার বছর পর অস্ট্রেলিয়া সিডনিতে ২০১১ সালে বিশ্বকাপে হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়েছিল। ২০১৫ বিশ^কাপের সেমিফাইনালে মাহেন্দ্র সিং ধোনির দল ভারতক স্টিভ স্মিথের সেঞ্চুরিতে সেমিফাইনালে ৯৫ রানে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। স্মিথ ৯৩ বলে ১০৫ রানের ইনিংস খেলেন। অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে ৩২৮ রানের লড়াকু ইনিংস গড়ে তুলে। ধোনির ৬৫ রান সত্ত্বেও ভারতীয় ব্যাটিং ২৩৩ রানেই গুটিয়ে যায়। জেমস ফকনার ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। সতীর্থ অপর দুই পেসার মিচেল জনসন ও মিচেল স্টার্ক নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।
এরপর ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে পঞ্চম বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।