‘হাইব্রিড মডেলের’ এশিয়া কাপ আর বৃষ্টি যেন এবার এক হয়ে গেছে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ম্যাচগুলোতে বৃষ্টির বাধামুক্ত হওয়াটা ছিল ভাগ্যের বিষয়। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচগুলোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো কাগজে কলমে এশিয়া কাপের স্বাগতিক পাকিস্তান। সর্বশেষ অঘোষিত সেমিফাইনালেও বৃষ্টি আইনে হেরে বিদায় নিলো বাবর আজমরা। তবে দারুণ এক জয়ে রেকর্ড ১১তম রাবেব মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠলো শ্রীলঙ্কা।
দুই দফা বৃষ্টির পর ৪২ ওভারে গড়ায় ম্যাচ। পাকিস্তানের ২৫২ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কাও করে সমান ২৫২ রান, তবে ডিএলএস পদ্ধতিতে জয়ের জন্য ২৫২ রানের লক্ষ্যই ছিল শ্রীলঙ্কার সামনে। ফলে পাকিস্তানকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে শ্রীলঙ্কা।ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে খেলবে লঙ্কানরা।
অন্যদিকে, সুপার ফোরে ৩ ম্যাচে ১ জয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থান থেকে এশিয়া কাপ শেষ করলো গতবারের রানার্স-আপ পাকিস্তান। আর ২ খেলায় ২ হারে শূন্য হাতে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকে টুর্নামেন্ট থেকে আগেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হতে সোয়া দুই ঘণ্টা দেরী হলে ম্যাচটি ৪৫ ওভারে নির্ধারিত হয়। টস ভাগ্যে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেয় একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন আনা পাকিস্তান। ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। পঞ্চম ওভারে পেসার প্রমোদ মদুশানের বলে বোল্ড হন ৪ রান করা ওপেনার ফখর জামান।
শুরুতে উইকেট হারানোর ধাক্কা ভুলিয়ে দেন আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও অধিনায়ক বাবর আজম। দ্বিতীয় উইকেটে ৭০ বলে ৬৪ রান যোগ করেন তারা। ১৬তম ওভারে বাবরকে তুলে নেন আগের ম্যাচে ভারতকে ধসিয়ে দেয়া স্পিনার দুনিথ ওয়েলালাগে। ৩টি চারে ২৯ রান করেন বাবর।
অধিনায়কের বিদায়ের পর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শফিক। অর্ধশতকের পর ৫২ রানেই থেমে যান তিনি। ৬৯ বল খেলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন শফিক। পাঁচ নম্বরে নামা মোহাম্মদ হারিস ৩ রানে আউট হলে ২৪তম ওভারে ১০৮ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় পাকিস্তান। ২৮তম ওভারে আবারও বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। প্রায় ৩০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকায় আরও ৩ ওভার কমে যায়। অর্থাৎ, ৪২ ওভারে নির্ধারিত হয় ম্যাচটি।
দ্রুত সেট হয়ে পঞ্চম উইকেটে শ্রীলঙ্কার বোলারদের উপর চড়াও হন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ। ৩২ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ছিলো ৫ উইকেটে ১৫০। রিজওয়ান-ইফতিখারের ঝড়ো জুটিতে শেষ ১০ ওভারে ১০২ রান পায় পাকিস্তান। জুটিতে ৭৮ বলে ১০৮ রান যোগ করেন তারা। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ বলে ৪৭ রানে আউট হন ইফতিখার।
ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে পাকিস্তানকে নির্ধারিত ৪২ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫২ রান এনে দেন রিজওয়ান। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৩ বলে অপরাজিত ৮৬ রান করেন ওয়ানডেতে ১২তম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া রিজওয়ান। শ্রীলংকার হয়ে পাথিরানা ৬৫ রানে ৩ উইকেট নেন।
পাকিস্তান ২৫২ রান করার পরও ম্যাচ জিততে বৃষ্টি আইনে ৪২ ওভারে ২৫২ রানই টার্গেট পায় শ্রীলঙ্কা। রান তাড়া করতে নেমে দ্রুত রান তুলতে থাকেন দুই বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা কুশল পেরেরা। পাকিস্তানের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ৩টি ও অভিষিক্ত জামান খানকে ১টি চার মারেন পেরেরা।
চতুর্থ ওভারে সতীর্থ পাথুম নিশাঙ্কার সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন ৪ বাউন্ডারিতে ৮ বলে ১৭ রান করা পেরেরা। ২০ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। পাওয়ার প্লের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ৬০ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন তারা। স্পিনার শাদাবের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ২৯ রানে নিশাঙ্কা ফিরলে ভেঙে যায় জমে ওঠা জুটি।
দলীয় ৭৭ রানে নিশাঙ্কার বিদায়ে ক্রিজে আসা সাদিরা সামারাবিক্রমা অন্য প্রান্তে মেন্ডিসকে নিয়ে পাকিস্তানের বোলারদের সামনে দাপট দেখিয়েছেন । বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলে জুটিতে ১শ পূর্ণ করেন তারা। এই জুটিতেই ৪৭ বলে ওয়ানডেতে ২৪তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মেন্ডিস।
মেন্ডিস পারলেও, হাফ-সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন সামারাবিক্রমা। ৫১ বলে ৪টি চারে ৪৮ রান করা সামারাবিক্রমাকে শিকার করে পাকিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার ইফতিখার। পাকিস্তান যখন ব্রেক-থ্রু পায় তখন ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ৭৪ বলে ৭৫ রান দরকার পড়ে শ্রীলংকার। চতুর্থ উইকেটে চারিথ আসালঙ্কাকে নিয়ে ৩৩ বলে ৩৩ রান তুলে দলকে জয়ের পথে রাখেন মেন্ডিস। সেই সাথে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি।
৩৬তম ওভারে ইফতিখারের প্রথম বলে হারিসের দুর্দান্ত ক্যাচে টুর্নামেন্টে আরও একবার নাভার্স নাইন্টিতে আউট হন মেন্ডিস। ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৭ বলে ৯১ রান করেন তিনি। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৯২ রানে আউট হয়েছিলেন মেন্ডিস। এরপর দাসুন শানাকার সাথে ১২ ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে ২১ রান যোগ করেন আসালঙ্কা।
শেষ ১২ বলে ৫ উইকেট হাতে রেখে ১২ রান দরকার পড়ে শ্রীলঙ্কার। ৪১তম ওভারে ৪ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করে ম্যাচ জমিয়ে তোলেণন আফ্রিদি। শেষ ওভারে জিততে ৩ উইকেট হাতে রেখে ৮ রানের সমীকরণ পায় শ্রীলঙ্কা।
জামানের করা শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে ২ রান পায় শ্রীলঙ্কা। চতুর্থ বলে রান আউট হন মদুশান। পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মারেন আসালঙ্কা। শেষ বলে ২ রানের প্রয়োজন মিটিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ফাইনালে তুলেন আসালঙ্কা।
৪২ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫২ রান করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে শ্রীলঙ্কা। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৭ বলে অপরাজিত ৪৯ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেন আসালঙ্কা। পাকিস্তানের ইফতিখার ৩টি ও আফ্রিদি ২ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন শ্রীলঙ্কার মেন্ডিস।