ভুলটা কি তখনই হয়েছিল; হয়তো তাই। প্রথম ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে দুঃসাহস দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বসেরাদের বিপক্ষে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। বিপরীতে রানের পাহাড় ডিঙাতে গিয়ে খেই হারালো টাইগাররা। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খোয়ালো বাংলাদেশ।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ডেভিড মালান সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন কেঁড়ে নিয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার জেসন রয়ের সেঞ্চুরিতে (১৩২) হারের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড। ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩২৬ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড।
ইংলিশদের ছুঁড়ে দেওয়া ৩২৭ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর তাড়া করতে নেমে ৩২ বল বাকি থাকতেই ১৯৪ রানে থেমে যায় বাংলাদেশে ইনিংস। ফলে ১৩২ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় তুলে সিরিজ নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড।
মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এটি ছিল ১০০তম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ। একই সাথে মিরপুরের এই ভেন্যুতে এটি ছিল দুইশতম আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাইলফলক।
বল করতে নেমে সপ্তম ওভারে দ্বিতীয়বারের মতো আক্রমণে এসে নাজমুল হোসেন শান্তর দারুণ ক্যাচে ইংল্যান্ডের ওপেনার ফিল সল্টকে ৭ রানে থামান পেসার তাসকিন আহমেদ। দলীয় ২৫ রানে সল্ট ফেরার পর দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ বলে ৫৮ রানের জুটি গড়েন ওপেনার জেসন রয় ও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ডেভিড মালান।
১৬তম ওভারে মালানকে ব্যক্তিগত ১১ রানে লেগ বিফোর আউট করে জুটি ভাঙেন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ২১তম ওভারে জেমস ভিন্সকে ৫ রানে থামিয়ে বাংলাদেশকে তৃতীয় উইকেট উপহার দেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ৯৬ রানে ৩ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
এরপর রয়ের সাথে জুটি বাঁধেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক জশ বাটলার। ২২তম ওভারের শেষ বলে রান আউটের হাত থেকে রক্ষা পান বাটলার। ৩১তম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ১ রান নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১২তম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রয়।
১০৪ বলে শতকের পর দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেছেন রয়। শেষ পর্যন্ত ৩৬তম ওভারে রয়কে লেগ বিফোর আউট করেন সাকিব আল হাসান। আউট হওয়ার আগে ১৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ১২৪ বলে ১৩২ রান করেন রয়। চতুর্থ উইকেটে বাটলার রয় ৯৩ বলে ১০৯ রানের জুটি গড়েন।
রয় ফেরার পর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৪তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন বাটলার। ৪৪তম ওভারে মিরাজের বলে পরপর দু’টি ছক্কা মারার পর আউট হন তিনি। এর আগে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৪ বলে ৭৬ রান করেন বাটলার। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বাটলার-মঈন আলি ৪২ বলে ৫২ রান যোগ করেন।
শেষ দিকে মঈন-স্যাম কারানের ঝড়ে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩২৬ রানের সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৫ বলে ৪২ রান করে তাসকিনের বলে লিটনকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন মঈন। ২টি বাউন্ডারি ও ৩টি ওভার বাউন্ডারিতে ১৯ বলে অপরাজিত ৩৩ রান করেন কারান। বাংলাদেশের তাসকিন ৩টি, মিরাজ ২টি এবং সাকিব-তাইজুল ১টি করে উইকেট নেন।
৩২৭ রানের বড় টার্গেটের জবাব দিতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। পেসার কারানের তোপে প্রথম ওভারেই খালি হাতে ফিরেন বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাস ও তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। তৃতীয় ওভারে মুশফিকুর রহিমকে ৪ রানে বিদায় দিয়ে তৃতীয় উইকেট তুলে নেন কারান। ৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ।
বিপর্যয় সামাল দিতে চতুর্থ উইকেটে লড়াই শুরু করেন ওপেনার তামিম ও সাকিব। ১৪তম ওভারে জুটিতে ৫০ রান পূর্ণ করেন তারা। মঈনের করা ২১তম ওভারে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে লং অফে ভিন্সকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৪টি চারে ৬৫ বলে ৩৫ রান করা তামিম। সাকিবের সাথে ১১১ বলে ৭৯ রান যোগ করেন তামিম।
তামিম ফেরার পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে দলের স্কোর ১শ পার করেন সাকিব। এই জুটিতেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫১তম অর্ধশতক করেন তিনি। চাপের মুখে অর্ধশতকের পর রশিদের বলে ভুলে শট খেলে মিড অফে কারানকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন সাকিব। ৫টি চারে ৬৯ বলে ৫৮ রান করেন তিনি।
সাকিবের বিদায়ে উইকেটে এসে ভালো শুরুর পরও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে রশিদের দ্বিতীয় শিকার হন ৩৩ বলে ২৩ রান করা আফিফ হোসেন । সাকিব-আফিফের পর বাংলাদেশের শেষ স্বীকৃত ব্যাটার মাহমুদউল্লাহকেও শিকার করেন রশিদ।
স্লিপে মঈনকে ক্যাচ দেয়ার আগে ৩টি চারে ৪৯ বলে ৩২ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৮ ওভার শেষে ১৬৭ রানে ৭ উইকেট পতনে হারের মুখে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ২শর আগেই গুটিয়ে যায় টাইগাররা।
শেষ দিকে তাসকিনের ২১ বলে ২১ রানের ইনিংসে হারের ব্যবধানে কমে বাংলাদেশের। ৩২ বল বাকী থাকতে ১৯৪ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। ইংল্যান্ডের রশিদ ৪৫ রানে ও কারান ২৯ রানে ৪টি করে উইকেট নেন।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস