রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৮:৫১ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২২
রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ

মেহেদী হাসান মিরাজের প্রথম সেঞ্চুরিতে ভারতের বিপক্ষে এক ম্যাচ বাকি রেখেই ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভারতকে ৫ রানে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সাথে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।

ভারতের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয় করলো বাংলাদেশ। এর আগে প্রথম ও সর্বশেষ ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার এক ম্যাচ বাকি রেখেই ভারতকে সিরিজ হারের লজ্জা দিলো টাইগাররা।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৭১ রান করে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া মেহেদী মিরাজের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ১০০ রান এবং দীর্ঘদিন বড় ইনিংস খেলতে না পারা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ করে ৭৭ রান।

জবাবে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৬৬ রান করে হার বরণ করে ভারত। ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত ইনিংসের পর বল হাতেও ২টি উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। এর ফলে টানা দুই ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার গৌরব অর্জনও করলেন তিনি।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে একটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। পেসার হাসান মাহমুদের জায়গায় স্পিনার নাসুম আহমেদকে অন্তর্ভুক্ত করে একাদশ সাজানো হয়।

দ্বিতীয় ওভারের প্রথম দুই বলে দু’টি চার মারেন ওপেনার হিসেবে খেলতে নামা এনামুল হক বিজয়। ওভারের চতুর্থ বলে স্লিপে রোহিত শর্মাকে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান তিনি। বিজয়ের ক্যাচ মিস করার পাশাপাশি আঙুলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন রোাহিত। পেসার মোহাম্মদ সিরাজের পরের বলেই লেগ বিফোর আউট হন বিজয়। রিভিউ নিয়েও টিকতে না পারলে ৯ বলে ১১ রান ইতি ঘটে বিজয়ের।

বিজয়কে হারানোর পর তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন লিটন। দেখেশুনে খেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। দশম ওভারে লিটন-শান্তর জুটি ভাঙেন সিরাজ। টেস্ট মেজাজে খেলা লিটন সিরাজের বলে বোল্ড আউট হওয়ার আগে ১টি চারে ২৩ বল খেলে ৭ রান করেন।

অধিনায়ক ফেরার কিছুক্ষণ পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন শান্তও। ভারতের পেসার উমরান মালিকের অফ-স্ট্যাম্পের ডেলিভারিতে বলের লাইনে পা না নিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন শান্ত। ৩টি চারে ৩৫ বল খেলে ২১ রান করেন তিনি। ৫২ রানে ৩ উইকেট পতনের পর ক্রিজে জুটি বাঁধেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। উইকেট সেট হতে সময় নিচ্ছিলেন তারা। ভারতের দুই পেসার সিরাজ ও মালিকের বল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সাকিব।

আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে ১৭তম ওভারে ভারতের স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরের উপর চড়াও হতে বিদায় নেন সাকিব। তবে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিস টাইমিংয়ে শর্ট ফাইন লেগে শিখর ধাওয়ানকে ক্যাচ দেন ২০ বলে ১টি চারে ৮ রান করা সাকিব। নিজের দ্বিতীয় ওভারে সাকিবকে ফেরানোর পর তৃতীয় ওভারে মুশফিক ও আফিফ হোসেনকে থামান সুন্দর।

সুন্দরের ডেলিভারি ডিফেন্স করতে গিয়ে লেগ স্লিপে ধাওয়ানকে ক্যাচ দেন মুশফিক। রিভিউতে বিদায় হয় ২টি চারে ২৪ বলে ১২ রান করা মুশফিকের। অফ-স্ট্যাম্পে করা পরের ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন আফিফ। ১ বল খেলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো খালি হাতে ফিরেন তিনি।

১৯তম ওভারে ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে মহাচাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় পরিস্থিতির সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের রানের চাকা সচল করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আগের ম্যাচের হিরো মেহেদী হাসান মিরাজ। ২৪তম ওভারে ১শ ও ৩৬তম ওভারে দলের রান দেড়শ পূর্ণ করেন তারা।

স্বাচ্ছন্দ্যে উইকেটের চারপাশ থেকে রান তুলেছেন মাহমুদউল্লাহ-মিরাজ জুটি। বাহারি সব শটে বলকে সীমানা ছাড়াও করেছেন তারা। ৩৮তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয় ও ভারতের বিপক্ষে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মিরাজ। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ৪০তম ওভারে জুটিতে ১শ পূর্ণ হয় মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহর।

পরের ওভারে ৭৪তম বলে ২১৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৭তম ও ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ। ৪৫তম ওভারে বাংলাদেশের রান ২শ স্পর্শ করে। অবশেষে ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ২১৭ রানে মাহমুদউল্লাহ-মিরাজ জুটি ভাঙতে পারে ভারত। মালিকের বলে আপার কাট শট মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ।

খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুলে সপ্তম উইকেটে মিরাজের সাথে ১৬৫ বলে ১৪৮ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ। ভারতের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। ৭টি চারে ৯৬ বলে ৭৭ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।

মাহমুদউল্লাহ’র আউটের পর অষ্টম উইকেটে ২৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রান তুলে দলকে শক্তপোক্ত সংগ্রহ এনে দেন মিরাজ ও নাসুম আহমেদ। ৭ উইকেটে ২৭১ রান করে টাইগাররা। ইনিংসের শেষ ওভারে ২টি ছক্কায় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান মিরাজ। শেষ বলে ১ রান নিয়ে ৬৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি করেন মিরাজ।

টেস্টেও ১টি সেঞ্চুরি থাকা মিরাজ শেষ পর্যন্ত ৮৩ বল খেলে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় অপরাজিত ১০০ রান করেন। ২টি চার ও ১টি ছয়ে ১১ বলে অপরাজিত ১৮ রান করেন নাসুম। ভারতের সুন্দর ৩টি, সিরাজ ও মালিক ২টি করে উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ২৭২ রানের জবাবে খেলতে নেমে অধিনায়ক রোহিত শর্মার আঙুলের ইনজুরির কারণে ধাওয়ানের সাথে ইনিংস শুরু করেন কোহলি। দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশি পেসার ইবাদত হোসেনের বলে বোল্ড হয়ে ৫ রানে থামেন কোহলি। পরের ওভারে ধাওয়ানকে ৮ রানে থামান মোস্তাফিজুর রহমান। ১৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে ভারত।

দশম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসেই উইকেট শিকার করেন সাকিব। চার নম্বরে নামা সুন্দরকে ১১ রানে বিদায় দেন তিনি।
উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন। মিরাজের বলে লেগ বিফোর হয়ে ১৪ রানে আউট হন তিনি।

৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ভারত। তবে পঞ্চম উইকেটে জুটি বেঁধে ভারতকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা শুরু করেন শ্রেয়াস আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেল। বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এ জুটি।

আইয়ার-প্যাটেলের জুটিতে ৩২তম ওভারে ভারতের রান দেড়শ স্পর্শ করে। এ জুটি ভাঙতে বারবার বোলিং পরিবর্তন করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন। অবশেষে ৩৫তম ওভারে আইয়ার-প্যাটেল জুটি ভাঙেন মিরাজ। ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১০২ বলে ৮২ রান করা আইয়ার শিকার হন মিরাজের। প্যাটেলের সাথে জুটি বেঁধে ১০১ বলে ১০৭ রান যোগ করেন আইয়ার।

আইয়ারের পর প্যাটেলকে বিদায় দেন ইবাদত। ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৬ বলে ৫৬ রান করেন তিনি। এরপ শারদুলকে ৭ রানে সাকিব ও চাহারকে ১১ রানে আউট করেন ইবাদত। আঙুলের ব্যান্ডেজ নিয়ে ৯ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত। ইবাদতের করা ৪৬তম ওভারে ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৮ রান তুলেন রোহিত। ৪৮তম ওভারে মেডেন নেন মোস্তাফিজ।স্ট্রাইকে ছিলেন সিরাজ। শেষ ২ ওভারে ৪০ রান দরকার পড়ে ভারতের।

মাহমুদউল্লাহর করা ৪৯তম ওভারে দু’বার রোহিতের ক্যাচ ফেলেন ইবাদত ও বিজয়। তারপরও ওই ওভারে রোহিতের দুই ছক্কায় ২০ রান পায় ভারত। ওভারের শেষ বলে সিরাজ বোল্ড হন। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ২০ রান দরকার পড়ে ভারতের। মোস্তাফিজের করা শেষ ওভারের প্রথম পাঁচ বলে ১৪ রান নেন রোহিত।

শেষ বলে ৬ রান দরকার পড়ে ভারতের। শেষ বল ডট দেন ফিজ। ৩টি চার ও ৫টি ছক্কায় ২৮ বলে অপরাজিত ৫১ রান করেন রোহিত। বাংলাদেশের ইবাদত ৩টি, মিরাজ-সাকিব ২টি করে উইকেট নেন।

স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

একজন মেহেদী মিরাজ ও টিম টাইগারের স্বস্তি

একজন মেহেদী মিরাজ ও টিম টাইগারের স্বস্তি

বাংলাদেশের কাছে হারের ম্যাচে শাস্তির কবলে ভারত

বাংলাদেশের কাছে হারের ম্যাচে শাস্তির কবলে ভারত

দুই বন্ধুর বিশ্বাসে ভারত জয়

দুই বন্ধুর বিশ্বাসে ভারত জয়

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ভারতকে হারালো বাংলাদেশ

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ভারতকে হারালো বাংলাদেশ