দ্বিতীয় ম্যাচের মতো শেষ ম্যাচেও ইংল্যান্ডের দেওয়া অল্প রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত টপ অর্ডার হারিয়ে চাপে পড়েছিল ভারত। তবে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে চওড়া হয়ে উঠলো উইকেটরক্ষ ঋষভ পান্থ ও অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাট। এর আগে বল হাতেও দলের সেরা বোলার পান্ডিয়া। দুইজনের দাপটে ইংল্যান্ডকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ জিতলো ভারত।
তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে দুই দল একটি করে জেতায় শেষ ম্যাচ পরিণত হয় অঘোষিত ফাইনালে। কিন্তু এমন ম্যাচের আগেই ভারতের অন্যতম প্রধান বোলিং অস্ত্র জসপ্রীত বুমরাহ ইনজুরিতে ছিটকে যান একাদশ থেকে।
রোববার (১৮ জুলাই) টানা তিন ম্যাচেই টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ইংলিশদের জোড়া ধাক্কা দেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজ।
নিজের প্রথম ওভার করতে এসে কোনো রান দিয়ে তুলে নেন ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও তিন নম্বরে নামা জো রুটের উইকেট। শুরুতেই দুই উইকেট হারালেও বেন স্টোকসকে সঙ্গে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন আরেক ওপেনার জেসন রয়।
‘কোহলিকে বাদ দিলে বিসিসিআই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে’
৯.৫ ওভারে দলীয় ৬৬ রানে রয়কে ঋষভ পান্থের ক্যাচ বানিয়ে হার্দিক পান্ডিয়া ফিরিয়ে দিলে ভাঙে ইংল্যান্ডের প্রতিরোধ। আট রানের ব্যবধানে স্টোকসকেও ফিরিয়ে দিয়ে ইংলিশদের ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে দেন হার্দিক পান্ডিয়া
তবে এরপর মঈন আলিকে নিয়ে বড় জুটি গড়ার দিকে আগান ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। ম্যাচের সবচেয়ে বড় জুটিটা হয় তাদের মধ্যেই! দু’জনের ৭৫ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে ইংল্যান্ড।১৪৯ রানে ব্যক্তিগত ৩৪ রানে মঈন আলি ফিরে গেলে লিয়াম লিভিংস্টোনকে নিয়ে আবারও ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরানো চেষ্টা করেন বাটলার।
১৯৮ রানে বাটলারকে ব্যক্তিগত ৬০ রানে ফিরিয়ে ভারতকে আবারও গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু এনে দেন হার্দিক পান্ডিয়া। অধিনায়ককে হারানোর পর আর কোনো বড় জুটি গড়তে পারেনি ইংলিশ ব্যাটাররা।
ক্রেইগ ওভারটনের ৩২ ও লিয়াম লিভিংস্টোনের ২৭ রান ছাড়া লোয়ার অর্ডারে তেমন কেউ কিছু করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ৪৫.৫ ওভারে ২৫৯ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। চার ব্যাটারকে ফিরিয়ে ভারতের সেরা বোলার হার্দিক।
২৬০ রানের মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পঞ্চাশ রানের মধ্যে টপ অর্ডার হারিয়ে ফেলে ভারত। দলীয় ১৩ রানে শিখর ধাওয়ান ও ২১ রানে অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে হারিয়ে শুরুতেই হারিয়ে চাপে পড়ে সফরকারীরা।
দলের বিপদের সময় আরও একবার ব্যর্থ বিরাট কোহলি। লম্বা সময় ধরে চলা অফফর্ম আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দ্বিতীয় ম্যাচের মতো এদিনও দারুণ শুরু করেছিলেন, কিন্তু সেই পুরোনো রোগেই উইকেট ছূড়ে দিয়ে যান তিনি। রিচ টপলির ওভারে অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোচা মেরে বাটলারের হাত যখন ক্যাচ দেন, তখন তার ব্যক্তিগত রান ১৭ ও দলীয় রান মাত্র ৩৮!
এরপর সুরিয়া কুমার যাদবকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন উইকেটরক্ষ ঋষভ পান্থ। দলীয় ৭২ রানে সুরিয়াও ফিরে গেলে আবারও চাপে পড়ে ভারত।
তবে এরপর হার্দিক পান্ডিয়া ও ঋষভ পান্থ মিলে ইংলিশ বোলারদের সব পরিকল্পনাই ভেস্তে দেন। শুরু থেকে পাল্টা আক্রমণে ইংলিশদের উপর চেপে বসেন হার্দিক। অন্যপ্রান্তে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে গেছেন পান্থ।
১০০-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ৪৩ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন হার্দিক। অন্যদিকে দেখেশুনে ব্যাট চালানো পান্থের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি আসে ৭১ বলে। কিন্তু ফিফটি করার পর থেকে যেন ব্যাটটা বেশিই চওড়া হয়ে ওঠে পান্থের।
দেখেশুনে খেলতে থাকা পান্থ তখন ব্যাট হাতে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। আচমকাই ইংলিশ বোলারদের উপর আক্রমণ শুরু করেন। এমনকি এতক্ষণ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা হার্দিকেও তখন দর্শক বানিয়ে একাই রানের চাকার গতি বাড়িয়ে দেন কয়কে গুন!
২০৫ রানে রানে ৫৫ বলে ৭১ রান করে হার্দিক ফিরে গেলে ভাঙে তাদের ম্যাচজয়ী ১৩৩ রানের জুটি। যদিও তখন পান্থও আউট হলে ম্যাচ জেতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হতো ভারতের।
কিন্তু কোনো ভুল করেননি পান্থ, জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে বাকি ৫৫ রান তুলেছেন ৪২.১ ওভারে। শেষ ৫৫ রানে জাদেজার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ বলে সাত রান। এর আগে ৪০.৫ ওভারে পান্থ পেয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি।
শেষ পর্যন্ত ১২৫ রানে অপরাজিত থেকে ভারতের জয় নিশ্চিত করে তবেই মাঠ ছাড়েন তিনি। প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কারও জিতেছেন তিনি। অন্যদিকে সিরিজ জুড়ে দারুণ পারফর্ম করা হার্দিক পান্ডিয়া হয়েছেন সিরিজ সেরা।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি