সিরিজ বাঁচাতে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না ইংল্যান্ডের সামনে। তবে প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও ভারতীয় বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ইংলিশরা ব্যাটাররা বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ৪৯ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৪৬ রানের মাঝারি সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড।
সেটাকেই ভারতীয় ব্যাটারদের জন্য পাহাড়সম করে তোলেন ইংলিশ পেসার রিস টপলি। তার রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে ভারতকে ১০০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজে সমতা ফেরায় ইংল্যান্ড।
প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচের উইকেটে অত বেশি ঘাস ছিল না। তবু টস জিতে প্রথম বোলিং করার সিদ্ধান্তই নেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এদিন শুরুতে উইকেট না পেলেও, ইংলিশ ওপেনারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে ঠিকই চাপে রেখেছিলেন ভারতীয় বোলাররা।
আস্তে আস্তে চাপ কাটিয়ে স্বাভাবিক খেলা শুরু করেছিলেন দুই ইংলিশ ওপেনার। তবে সেটা খুব বেশু দূর আগায়নি। নবম ওভারে বোলিংয়ে এসে ভারতকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। দলীয় ৪১ রানে জেসন রয়কে সুরিয়া কুমার যাদবের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন তিনি।
কোহলি-বুমরাহকে ছাড়াই ক্যারিবিয়ানে টি-টোয়েন্টি খেলবে ভারত
ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার আগের ম্যাচে চেয়ে ভালো করলেও উন্নতি হয়নি মিডল অর্ডারের। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যর্থ জো রুট, জস বাটলার ও বেন স্টোকস। তিন জনের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৩৬ রান!
দলীয় ৭২ রানে চাহালের বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৩৮ রানে বোল্ড হয়ে ফিরে যান জনি বেয়ারস্টো। মাত্র ১৫ রানের ব্যবধানে ফিরে যান রুট ও বাটলার।
দলীয় ৮২ রানে চাহালকে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন রুট। পাঁচ রানের ব্যবধানে মোহাম্মদ শামির বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। এরপর ১০২ রানে চাহালকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বেন স্টোকস আউট হয়ে ফির গেলে চাপে পড়ে ইংলিশরা।
এরপর ইংলিশদের ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেন লিয়াম লিভিংস্টোন ও মঈন আলি। দলীয় ১৪৮ রানে ব্যক্তিগত ৩৩ রান করে হার্দিক পান্ডিয়ার ওভারে আউট হলে ভাঙে তাদের ৪৬ রানের জুটি। এরপর ডেভিড উইলির সঙ্গে ম্যাচের সবচেয়ে বড় জুটি গড়েন মঈন আলি।
দু'জনের ৬২ রানের জুটিতেই লড়াই করার মতো সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড। ২১০ রানে মঈন আলি ব্যক্তিগত ৪৭ রানে ফিরে যান। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি উইলিও! একবার জীবন পেয়ে ৪১ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ইংলিশদের স্কোরবোর্ডে জমা ২৪৬ রান।
কোহলির ফর্ম নিয়ে চিন্তার কিছু নেই: গাভাস্কার
মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সেটাকে বড় লক্ষ্য বানিয়ে ফেলেন ভারতীয় ব্যাটাররা। ইংলিশ পেসার টপলি ও ডেভিড উইলির তোপে প্রথম পাঁচ ওভারে ব্যাট থেকে কোনো রানই করতে পারেননি দুই ভারতীয় ওপেনার।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ড গড়ার দিনে ভারতকে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন টপলি। ভারতীয় ব্যাটারদের বাড়ি ফেরানোটাও শুরু হয়েছে তারই হাত ধরে। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে লেংথ বলে লেগ বিফোর উইকেটে ফাঁদে পড়ে তার প্রথম শিকারে পরিণত হন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। দশ বল খেলেও এদিন রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
অপরপ্রান্তে শিখর ধাওয়ানকেও এদিন রানের খাতা খুলতের যথেষ্ট ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। ২৭ রানে টপলির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। ম্যাচে সবচেয়ে অদ্ভুতভাবে আউট হয়েছে ঋষভ পান্থ। ইংলিশ পেসার ব্রাইডন কার্সের নিরীর ফুলটসে মিড অন ক্যাচ তুলে দেন তিনি, যেটাতে অন্তত চার হওয়া উচিত ছিল।
তিনে নামা বিরাট কোহলি আরও একবার ব্যর্থ! যদিও এদিন দারুণ কাভার ড্রাইভ, স্টেট ড্রাইভে রানে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কিন্তু কাজ হয়নি! ডেভিড উইলির ওভারে ব্যক্তিগত ১৭ রানে সেই পুরোনো রোগেই বাটলারের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
আইসিসির জুন মাসের সেরা খেলোয়াড় জনি বেয়ারস্টো
৩১ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে ভারত, পরে আর ফিরতে পারেনি তারা। সুরিয়া কুমার যাদবের সঙ্গে ৪১ রানের জুটি গড়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরানোরে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু জুটি বড় না হওয়ায় ম্যাচেও ফিরতে পারেনি ভারত। দলীয় ৭৩ রানে টপলির তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান সুরিয়া কুমার যাদব।
এরপর হার্দিক পান্ডিয়া ও মোহাম্মদ শামিকে নিয়ে রবীন্দ্র জাদেজা ছোট ছোট জুটি গড়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরাতে চাইলেও কাজ হয়নি। ব্যাট হাতে যদিও জাদেজা যথেষ্ট সঙ্গ দিয়েছেন, ২৩ রানের ইনিংস খেলে টপলির শিকার হন তিনি।
এরপর জাদেজা ১৪০ রানে লিভিংস্টোনের বলে ফিরে গেলে ভারতকে অল আউট করতে বেশি সময় নেয়নি ইংল্যান্ড। ভারতের লেজ ছেটে দিয়েছেন টপলি একাই। ম্যাচে নিয়েছেন ২৪ রানে ছয় উইকেট, যেটা ইংলিশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওয়ানডে বোলিং ফিগার।
চলতি মাসের ১৭ জুলাই ওল্ড ট্রাফোর্ডে সিরিজের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত ও ইংল্যান্ড। ওই ম্যাচেই নির্ধারিত হবে কে জিতবে সিরিজের শিরোপা।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি