সফররত আফগানিস্তানের বিপক্ষে টানা দুই জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমের রেকর্ড জুটির পর তাসিকন-সাকিবের বোলিং তোপে আফগানদের বিপক্ষে ৮৮ রানের বড় ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেটে জয় পেয়েছিল টাইগাররা।
শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে লিটন দাসের সেঞ্চুরি ও মুশফিকের ৮৬ রানের ইনিংসের উপর ভর করে ৩০৬ রানের বিশাল স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। যা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড।
বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ৩০৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সাকিব-তাসকিনদের বোলিং তোপে পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেনি আফগান ব্যাটাররা। ৪৫ দশমিক ১ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার আগে ২১৮ রান করে সফরকারীরা। বাংলাদেশের পক্ষে বল করা সাত বোলারই উইকেট পেয়েছেন।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সতীর্থ লিটন দাসকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন তামিম। ৬ ওভারের মধ্যে তামিম ২টি ও লিটন ৩টি চার মারেন। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন আগের ম্যাচে শুরুতেই প্রতিপক্ষকে মহাবিপদে ফেলে দেওয়া আফগানিস্তানের পেসার ফজলহক ফারুকি। তার বলে লেগ বিফোর আউট হন তামিম। রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচাতে পারেননি তামিম। ২৪ বলে ১২ রান করেন টাইগার দলনেতা।
তামিমের বিদায়ে উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। প্রথম বলে বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুলেন সাকিব। তবে এবারও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন সাকিব। আফগানিস্তানের স্পিনার রশিদ খানের বলে এলবিডব্লু আউট হন সাকিব। রিভিউ নিয়ে আউট হওয়ার আগে ২টি চারে ৩৬ বলে ২০ রান করেন সাকিব।
৮৩ রানে দুই উইকেট পতনের পর বাংলাদেশের হাল ধরেন লিটন ও মুশফিকুর রহিম। উইকেটে সেট হতে সময় নেন মুশফিক। তবে ২০তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ১শতে পৌঁছে দেন মুশফিক-লিটন। ২৫তম ওভারে বাউন্ডারি দিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন। ৬৫ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়ার পর নিজের ইনিংস বড় করেছেন লিটন।
অপরপ্রান্তে রানের গতি ধরে রেখেছেন মুশফিক। ৩৪তম ওভারে রশিদের বলে বাউন্ডারি মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪২তম হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন মুশফিক। ৫৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। লিটন-মুশফিকের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩৬তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ২শতে পৌঁছায়।
৪১তম ওভারের চতুর্থ বলে কভার দিয়ে বাউন্ডারি আদায় করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯তম ম্যাচে পঞ্চম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন লিটন। ১০৭ বলে সেঞ্চুরির পর ৪৪তম ওভারে ফারুকির প্রথম দুই ডেলিভারিতে ১০ রান তুলেন লিটন। ৪৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলেও ফারুকিকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন লিটন। ওই ওভারে লিটন-মুশফিকের জুটি ২শ স্পর্শ করে। দু’জনের ১৮৮ বল খেলেন। তবে ৪৭তম ওভারে পেসার ফরিদ আহমাদের করা দ্বিতীয় বলে লিটন ও তৃতীয় বলে মুশফিক আউট হন।
১২৬ বল খেলে ১৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৩৬ রান করেন লিটন। ৯৩ বলে ৯টি চারে ৮৬ রান করেন একবার জীবন পাওয়া মুশফিক। ৬৯ রানে জীবন পেয়েছিলেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে ১৮৬ বলে ২০২ রানের জুটি গড়েন লিটন-মুশফিক। যা তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি। আগেরটি ছিল তামিম-মুশফিকের। ২০১৫ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে ১৭৮ রান করেছিলেন তারা।
দলীয় ২৮৫ রানেই বিদায় নেন লিটন-মুশফিক। তখন ইনিংসের ২১ বল বাকি ছিল। বাকি ২১ বলে ২১ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আগের ম্যাচের হিরো আফিফ হোসেন। মাহমুদউল্লাহ ৬ ও আফিফ ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন। এতে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩০৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
সিরিজে সমতা ফেরাতে ৩০৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি সফরকারী আফগানিস্তান। ১০ ওভারের মধ্যে ৩৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রান আউট হন ওপেনার রিয়াজ হাসান (১)।
চতুর্থ ওভারে উইকেট শরিফুলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক ৫ রান করা হাসমতুল্লাহ শাহিদি। ইনিংসের দশম ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে ৯ রান করা আজমতুল্লাহ ওমারজাইকে বিদায় করেন সাকিব। তবে শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টা করেছেন আরেক ওপেনার রহমত শাহ ও মিডল-অর্ডার ব্যাটার নাজিবুল্লাহ জাদরান।
রহমত-নাজিবুল্লাহর ব্যাটিং দৃঢ়তা শতরানে ২০তম ওভারে শতরান পায় আফগানিস্তান। ২৪তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৮তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন রহমত। পরের ওভারে রহমতকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রু এনে পেসার তাসকিন আহমেদ। ৪টি চারে ৭১ বলে ৫২ রান করেন রহমত। নাজিবুল্লাহর সাথে ৯০ বলে ৮৯ রানের জুটি গড়েন তিনি।
রহমতের আউটের পর ১১ রানের ব্যবধানে আরও ২ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে আফগানিস্তান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া নাজিবুল্লাহকে আউট করেন তাসকিন। ৬১ বলে ৭টি চারে ৫৪ রান করেন নাজিবুল্লাহ। অন্যপ্রান্ত দিয়ে আফগানদের উইকেটরক্ষক রহমানউল্লাহ গুরবাজকে বিদায় দেন সাকিব। ৭ রান করে সাকিবের বলে বোল্ড হন তিনি।
এরপর দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন মোহাম্মদ নবি ও রশিদ খান। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুললেও বড় জুটি গড়তে পারেননি নবি -রশিদ। ৩৬ বলে ৩৩ রান করেন তারা। নবিকে ব্যক্তিগত ৩২ রানে আউট করেন আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মেহেদি হাসান মিরাজ। আর রশিদকে বোল্ড করে বাংলাদেশের জয়ের পথ আরো সহজ করে ফেলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ২৯ রান করেন রশিদ।
শেষ পর্যন্ত ২৯ বল বাকি থাকতে ২১৮ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের তাসকিন-সাকিব ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজ-শরিফুল-মিরাজ-মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ। ম্যাচ সেরা হয়েছেন লিটন দাস।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস
[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]